দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর ধরে পরিত্যক্ত ছাতক-ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে

দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর ধরে পরিত্যক্ত ছাতক-ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে


রয়েল ভিউ ডেস্ক:
দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর ধরে পরিত্যক্ত রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ছাতক-ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে (রজ্জুপথ)। অযত্ম-অবহেলায় নষ্ট সরকারি বিপুল অর্থের সম্পদ। এ অবস্থায় এটিকে সংস্কার ও ক্যাবল কার স্থাপনের মাধ্যমে পর্যটনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলে তা খুবই লাভজনক হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা।
 
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের আওতাধীন ছাতক-ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে কর্তৃপক্ষীয় চরম উদাসীনতা ও অবহেলায় দীর্ঘদিন থেকে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। এলাকাটি সংরক্ষিত হলেও রাতের আঁধারে পাথর চুরির কারণে এটি এখন অনেকটা বিরাণ। 

প্রাপ্ত তথ্য মতে,  ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে লাভজনক এ রজ্জুপথ বন্ধ রয়েছে। ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রোপওয়ের ট্রেসেল ( খুঁটি) সংখ্যা ১২০ টি। স্টেশন ৪টি ( ছাতক , এ্যাংগেল ১, এ্যাংগেল ২ ও ভোলাগঞ্জ) । বাকেট সংখ্যা ৪২৫টি।  ডিসেম্বর ২০১৩  পর্যন্ত চালু ছিল ২৪৬টি বাকেট । প্রতি বাকেটের ধারণ ক্ষমতা ১২.৯২ ঘন ফুট ( ৬শ’ কেজি)। রোপওয়েটির বার্ষিক পাথর পরিবহন ক্ষমতা ছিল  প্রায় ১২ লক্ষ ঘন ফুট। বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অযত্ম-অবহেলায় বিভিন্ন স্থানে রোপওয়ের কিছু ট্রেসেল হেলে পড়েছে। তার ছিঁড়ে একাধিক বাকেটও পড়ে রয়েছে মাটিতে। 
ছাতকস্থ বাংলাদেশ রেলওয়ের এসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (এইএন) জুবায়ের হোসেন সরকার এ প্রতিবেদকের সাথে দীর্ঘদিন থেকে রজ্জুপথটি বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, এটি সংস্কারের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তপক্ষ বলতে পারবেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, তিনি ছাতকে নতুন যোগদান করেছেন। কাজেই, এ সংক্রান্ত সামগ্রিক বিষয়টি তার জানা নেই। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, ছাতকস্থ প্রাইম সিমেন্ট  কোম্পানী লিঃ কর্তৃপক্ষ পাথর পরিবহনের জন্য ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর ভোলাগঞ্জ রোপওয়ের যন্ত্রপাতি ও পাথর কোয়ারীর জমি সহ ৫০ বছরের জন্য লিজ নেওয়ার আবেদন করে বাংলাদেশ রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ এতে ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। 
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অকেজো রোপওয়েটিকে সংস্কার করে তা পর্যটনের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। তারা বলছেন, রোপওয়েটিকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মত ক্যাবল কার স্থাপন করা যেতে পারে। তারা বলছেন, ভোলাগঞ্জ সাদর পাথর পর্যটন কেন্দ্র দেখার জন্য প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক লোক ভিড় করেন। সর্বনিম্ন ২০ ফুট থেকে ১৬৭ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন ট্রেসেলের ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ক্যাবল কারে  নদী, টিলা ও হাওরের উপর দিয়ে সাদা পাথর ভ্রমণ ও মেঘালয়ের নীল পাহাড়ের অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করা যাবে।  তারা বলেন, ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে সাদা পাথর ও ভোলাগঞ্জ বর্ডার হাটের একেবারে লাগোয়া অবস্থিত। এর ফলে সুনামগঞ্জ-ছাতকসহ দেশী-বিদেশী পর্যটকদের সাদাপাথর ঘুরে দেখার সুযোগ সৃষ্টি হবে। শিল্পনগরী ছাতকের ব্যবসায়ীরাও সহজে ভোলাগঞ্জে যাতায়াত করতে পারবেন।  এর মাধ্যমে সরকার বিপুল রাজস্ব আয় করতে পারবে। 
ছাতক সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মঈন উদ্দিন আহমদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী মুহিবুর রহমান,আবু হুরায়রা ছুরত, নোটারি পাবলিক এডভোকেট আব্দুস সালাম,ব্যাংকার জহির আহমদ চৌধুরী, ছাতক প্রেসক্লাব সেক্রেটারি আব্দুল আলীম, কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাব সেক্রেটারী আবিদুর রহমান ও সিলেটস্থ ছাতক সমিতির সাবেক সেক্রেটারি আফজাল হোসেন বলেন, অযত্ম-অবহেলায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সরকারি বিপুল অর্থের সম্পদ। ভোলাগঞ্জ রোপওয়েকে পর্যটন খাতে ব্যবহার করা গেলে এটি হবে অপার সম্ভাবনাময় ও লাভজনক। এ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি দেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে হবে। 
প্রসঙ্গত,ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে নেমে আসা ধলাই নদীর সাথে প্রতিবছর বর্ষাকালে নেমে আসে প্রচুর পাথর। ধলাই নদীর তলদেশেও রয়েছে পাথরের বিপুল মজুদ। এই পাথর দিয়ে পঞ্চাশ বছর চালানো যাবে- এই হিসাব ধরে ১৯৬৪-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সময়কালে সোয়া দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে প্রকল্প। বৃটিশ রোপওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পের আওতায় ভোলাগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত সোয়া ১১ মাইল দীর্ঘ রোপওয়ের জন্য নির্মাণ করা হয় ১২০টি টাওয়ার এক্সক্যাভেশন প্ল¬্যান্ট। মধ্যখানে চারটি সাব স্টেশন-যে গুলো স্থানীয়ভাবে ‘এঙ্গেল’ নামে পরিচিত।  দু’প্রান্তে ডিজেল চালিত দুটি ইলেকট্রিক পাওয়ার হাউস, ভোলাগঞ্জে রেলওয়ে কলোনী , স্কুল,মসজিদ ও রেস্ট হাউস নির্মাণও প্রকল্পের আওতাভুক্ত ছিল। একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত রোপওয়েটিকে পুনরায় সংস্থার করা হয়। এক্সক্যাভেশন প্ল্যান্টের সাহায্যে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাথর উত্তোলন করা হলেও বর্তমানে এ পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এলাকাটি দেখতে অনেকটা ব-দ্বীপের মতো। ভারতের ওমঘাট নদী বাংলাদেশে ধলাই নামে প্রবেশ করে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে প্ল্যান্টের চারপাশ ঘুরে আবার একীভূত হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরের কাছে ধলাই নদী মিলিত হয়েছে-পিয়াইন নদীর সাথে। যে কারণে এ স্থাপনাটি পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয়। 

- তথ্য সূত্র: দৈনিক সিলেটে ডাক