পবিত্র আশুরা আজ 

পবিত্র আশুরা আজ 
ফাইল ছবি

স্টাফ রিপোর্টার : আজ মঙ্গলবার পবিত্র আশুরা। কারবালার শোকাবহ ঘটনাবহুল এ দিনটি মুসলমানদের কাছে ধর্মীয়ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের পাশাপাশি বিশেষ পবিত্র দিবস হিসেবে দিনটি পালন করা হয় মুসলিম বিশ্বে। বাংলাদেশেও আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় ও কর্মসূচিতে পবিত্র আশুরা পালিত হবে। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

আশুরা অর্থ দশম। রাব্বুল আলামিন যে চারটি মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ তথা অতি সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো মহররম। যা হিজরি বর্ষের প্রথম মাস। আর এ মাসের ১০ তারিখের দিনটিকে আশুরা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা থেকে অসংখ্য বিস্ময়কর ঘটনার একটি দিন আজ। এই দিন ইসলামের ইতিহাসে অসামান্য তাৎপর্যে উজ্জ্বল। ইবাদত-বন্দেগির জন্যও এ দিবসটি অতুলনীয়। সবকিছু ছাপিয়ে কারবালার করুণ শোকগাঁথা এ দিবসকে গভীর কালো রেখায় উৎকীর্ণ করে রেখেছে। ৬১ হিজরি সালের এই দিনে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার ময়দানে শহীদ হন। পবিত্র আশুরা তাই মুসলিম উম্মাহর জন্য এক তাৎপর্যময় ও শোকাবহ দিন। দিনটি মুসলমানদের কাছে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠারও দিন। এ দিনটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে খুবই প্রিয়। তাই, তিনি এ দিনে রোজা পালনের সওয়াব প্রদান করে থাকেন বহুগুণ। বিগত বছরের গুণাহ এর কাফফারা হিসেবে মহররমের দুটি রোজা রাখা মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আশুরা কেবল কারবালার শোকাবহ স্মৃতিতেই ভাস্বর নয়। ইতিহাসের আরো অনেক ঘটনার সাক্ষ্য বহন করছে। মহান আল্লাহ তায়ালা এ দিনেই আরশ, কুরছি, লওহ, কলম, আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং এ দিনেই আদমকে (আ.) সৃষ্টি করে তাকে বেহেশতে স্থান দিয়েছেন। পরবর্তীতে শয়তানের  প্ররোচণায় ভুলের কারণে এ দিনেই তাঁকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। হযরত নূহ (আ.) সাড়ে নয়শত বছর ধরে তাওহীদের বাণী প্রচারের পর যখন সে যুগের মানুষ আল্লাহর বিধি-নিষেধ পালনে অস্বীকৃতি জানায়, তখন নেমে আসে আল্লাহর গজব। ফলে হযরত নূহ (আ.) এর সম্প্রদায় ধ্বংস হয়েছে। শুধু রক্ষা পেয়েছে তাওহীতে বিশ্বাসী নূহ (আ.) এর অনুসারীবৃন্দ। পবিত্র আশুরার দিনে মহাপ্লাবনের সময় হযরত নূহ (আ.) এর নৌকা তার অনুসারীদের নিয়ে জুদি পাহাড়ের পাদদেশে এসে থেমেছিল। আজো তার কিছু নিদর্শন সেখানে পাওয়া যায়। পবিত্র আশুরার দিনেই হযরত ইব্রাহীম (আ.) শত বিধি-নিষেধের মধ্য দিয়ে জন্মগ্রহণ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি নমরুদের অগ্নিকুন্ড থেকে উদ্ধার লাভ করেন এবং নিজের প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইলকে (আ.) আল্লাহর নামে কোরবানি দিতে উদ্যত হলে খলিলুল্লাহ বা আল্লাহর বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছিলেন পবিত্র আশুরার দিনে। এদিনেই হযরত আইউব (আ.) কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, হযরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং কাফেরদের ষড়যন্ত্রের শিকার হলে আল্লাহ তাকে চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে নেন। এদিনেই হযরত দাউদ (আ.) আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করেছিলেন, হযরত সোলায়মান (আ.) তাঁর হারানো রাজত্ব পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছিলেন, হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন, হযরত ইয়াকুব (আ.) তাঁর হারানো পুত্র হযরত ইউসূফকে (আ.) চল্লিশ বছর পর ফিরে পেয়েছিলেন। পবিত্র আশুরার দিনে ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া শিশু মুসাকে গ্রহণ করেছিলেন। আবার স্বীয় কওমের লোকজনসহ হযরত মূসা (আ.) নীল নদ অতিক্রম করে ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি লাভ করেন। পক্ষান্তরে ফেরাউন সদলবলে নীল নদে ডুবে মারা যায়। পবিত্র আশুরা সমগ্র জগৎ সৃষ্টির দিন হিসেবে যেমন স্বীকৃত, তেমনি এদিন কেয়ামত অনুষ্ঠিত হয়ে জগৎ ধ্বংস প্রাপ্ত হবে। পবিত্র আশুরার দিন মুসলিম জাহানের জন্য যে কারণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হলো, এদিনে স্বৈরাচারী ইয়াজিদ বাহিনী হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) কে একজন ব্যতিত সপরিবারে কারবালার মরু প্রান্তরে নির্মমভাবে হত্যা করে। হযরত ইমাম হোসাইন ক্ষমতার জন্য ইয়াজিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেননি। বরং তিনি লড়াই করেছিলেন ইয়াজিদের ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে। সত্যের পতাকা সমুন্নত রাখার জন্য তিনি সপরিবারে জীবন উৎসর্গ করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সারা দেশের মতো সিলেটেও বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারি টিভি চ্যানেলসমূহ বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ প্রবন্ধ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। আজ সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান এবং সংবাদপত্র অফিসসমূহে ছুটি থাকবে। মসজিদ, মাদরাসা ও ধর্মীয়   প্রতিষ্ঠানে বিশেষ আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

ওসমানীনগর ঃ ওসমানীনগর (সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ওসমানীনগরে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে পবিত্র আশুরা। কর্মসূচির মধ্য রয়েছে- পবিত্র কোরআন খতম, আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল, রোজা পালন, গরিবদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করছেন মুসলিমগণ। শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ নারী-পুরুষ সবাই একত্রে মাতম করছেন শানে পাঞ্জাতনে বুক চাপড়ে। উপজেলার বেশ কতগুলো স্থানে পবিত্র আশুরার জারী চলছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পীর মজনু মিয়ার বাড়ী পূর্ব ব্রাহ্মণগ্রাম, এওলাতৈল, মোতিয়ার গাঁও, নিজ করনসী ২টি, উমরপুর ইউনিয়নের বড় ইসবপুর পীর বাড়ী, সাদিপুর ইউনিয়নের চাতলপাড় বাজার, পূর্বতাজপুর, গজিয়া, ইব্রাহিমপুর ৩টি, সম্মানপুর মোকামপাড়া, পূর্ব সুন্দিখলা, বুরুঙ্গা ইউনিয়নের কামারগাও, পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া পাঞ্জাতনের মোকাম। সকাল, দুপুর ও গভীর রাত পর্যন্ত চলছে মাতম, জারি, সঙ্গে রোজা ও নফল নামাজ, ইবাদত বন্দেগি ও শিরনী বিতরণ। ১০ই মহররম তাজিয়া মিছিলের মধ্য দিয়ে সাঙ্গ হবে এ শোক কার্যক্রম। ওসমানীনগর থানার ওসি এসএম মাঈন উদ্দিন বলেন, পবিত্র আশুরায় ওসমানীনগরে ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছি বলে জানান ওসি।