পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় নিজ গৃহে  ঠাঁই নেই ৮২ বছরের বৃদ্ধের

পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় নিজ গৃহে  ঠাঁই নেই ৮২ বছরের বৃদ্ধের
ফাইল ছবি

রাজনগর (মৌলভীবাজার) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : পুত্র বধূর পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় নিজ গৃহে ঠাঁই নেই ৮২ বছরের বৃদ্ধের। আপন ছেলে, পুত্র বধূ ও গৃহকর্মী মিলে তাকে বের করে দেয় ঘর থেকে। বৃদ্ধ এখন আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের ঘরে। ঘটনাটি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামের। 

সরেজমিনে গেলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন দুই সন্তানের জনক মো. ছুয়াব মিয়া। চাপা কান্না ও লোক-লজ্জা ছেড়ে দিয়ে নিজের পুত্রবধূ রিমা আক্তার, বাড়িতে থাকা গৃহকর্মী মো. রয়েছ আহমদ ও পুত্র সেলিম আহমদ এর বিরুদ্ধে নির্যাতনের বর্ণনা দেন ছুয়াব মিয়া। 

তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, তার ছেলে সেলিম মিয়া নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে সিলেটে কর্মরত ছিলেন এবং কর্মস্থলেই বসবাস করতেন। চাকুরী করার সুবাদে দীর্ঘ ৮ মাস ধরে বাড়িতে একটি পোল্ট্রি ফার্ম চালু করে ছেলে। ছেলে বাড়িতে না থাকায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও এলাকার রয়েছ আহমদ নামের গৃহকর্মীকে ফার্মটি দেখভাল করার জন্য রাখা হয়। পুত্রবধূ রিমা স্বামী বাড়িতে না থাকার কারণে ওই গৃহকর্মীর সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি বৃদ্ধের নজরে পড়লে তিনি বাধা দেন। সেই থেকে ঘরে বৃদ্ধের খাবার বন্ধ করে দেন পুত্রবধূ। পরে তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে গৃহকর্মী ও পুত্রবধূ মিলে চালায় শারীরিক নির্যাতন। বিষয়টি তিনি পুত্রকে মুঠোফোনে জানালেও পিতার কথাকে কোন গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো স্ত্রী ও গৃহকর্মীর কথা বিশ্বাস করে। 
আক্ষেপ করে বৃদ্ধ বলেন, এরকম ঘটনায় আরেকদিন তারা আমার গলায় চেপে শ্বাসরুদ্ধ করে রাখে। ওই দিন কোনক্রমে প্রাণে বেঁচে যাই। কিছুদিন আগে পুত্র সেলিম চিকিৎসার কাগজপত্র দেখিয়ে আমার জমি ও বাড়ির সম্পত্তি তার নামে সই করিয়ে লিখে নেয়। এরকম নির্যাতনের পর আমার মেয়েকে বাড়িতে ডেকে পাঠিয়ে তার সঙ্গে জামাইর বাড়িতে চলে যাই। 
মেয়ে নিহারুন বলেন, বাবার উপর নির্যাতন দেখে আমি তাকে আমার বাড়ি নিয়ে আসি। 

বৃদ্ধের ভাতিজা ডা. ছালিকুর রহমান জানান, বিষয়টি তিনি আমাকে ও গ্রামের সবাইকে অবহিত করেন। আমরা ও গ্রামবাসী মিলে সেলিমকে বুঝাতে গেলে তার স্ত্রী দিয়ে আমাকে ও চাচার দুই ভাই বাসিক মিয়া ও সাতির মিয়াকে আসামী করে আদালতে মিথ্যা ধর্ষণ মামলা দায়ের করে। 

করিমপুর গ্রামের মুরব্বী মো. হাজির মিয়া, মুতলিব মিয়া, ইসলাম খান, বশির মিয়া, বারিক মিয়া, হামজা মিয়া, মান উল্লাহ ও জমসেদ মিয়া জানান, ওই বৃদ্ধের উপর নির্যাতনের বিষয়টি সমাধান করতে স্থানীয় মেম্বারসহ উদ্যোগ নিলে সেলিম পড়ে জানাবে বলে স্ত্রীকে দিয়ে মামলা দায়ের করে। গ্রামবাসীর কথায় কোন কর্ণপাত করেনি। 
ঘটনার বিষয়টি জানতে চাইলে পুত্রবধূ রিমা বেগম জানান, তার শ্বশুর দীর্ঘদিন যাবৎ তাকে নির্যাতন করে আসছেন। 
পুত্র সেলিম মিয়া জানান, ‘পুয়ায়-বাবায় পারিবারিকভাবে সমস্যা হইতেও পারে’। বাবা যা কিছু বলেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাদের বাড়িতে যিনি থাকেন তিনি গৃহকর্মী নয় আমার স্ত্রীর চাচাতো ভাই। 
স্থানীয় ইউপি সদস্য লিটন মিয়া জানান, বৃদ্ধকে নির্যাতন ও পুত্রবধূর অনৈতিক কার্যকলাপের কথা বৃদ্ধের কাছ থেকে আমি শুনেছি। তবে ২৫ জুলাই রাত সাড়ে ৩টায় সেলিম মিয়া তার শ্বশুর বাড়িতে মালামাল নিতে একটি পিকআপ নিয়ে বাড়িতে আসলে রাজনগর থানার এসআই আরিফুল ইসলামসহ আমরা বাধা দেই। পরবর্তীতে ঘরের চাবি আমার কাছে দেয়া হয়। পরে অন্য একদিন সেলিম দুপুরে এসে গ্রিলের তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে।  
রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিনয় ভুষণ রায় জানান, বাবার সম্পত্তি ছেলে আত্মসাৎ করে বৃদ্ধ বাবাকে একা রেখে স্থান ত্যাগ করতে যাচ্ছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে বৃদ্ধ পিতার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ছেলেকে কোন কিছু নিতে দেয়া হয়নি। বাবার নামের ভূমি ছেলে ও ছেলের স্ত্রীর নামে কৌশলে রেজিস্ট্রারী করে নিয়ে গেছে।