বৃষ্টি ॥ সিলেটে বাড়ছে  জনদুর্ভোগ 

বৃষ্টি ॥ সিলেটে বাড়ছে  জনদুর্ভোগ 

স্টাফ রিপোর্টার : বৈশাখের শেষ বেলাতে বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন সিলেট নগরবাসী। নগরীর নিম্নাঞ্চলসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা কমেনি এখনো। নগরীর বেশ কয়েক’টি স্থানে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় জমে থাকা পানি ঢুকে যাচ্ছে বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। 

ঘূণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। যার কারণে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানের মতো সিলেটেও গত ক’দিন ধরে চলছে টানা বর্ষণ। তবে, নিম্নচাপের প্রভাব চলে গেলেও আগামী এক সপ্তাহেরও বেশী সময় ধরে সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

তারা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে সিলেটেও গত কয়েকদিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি কিংবা মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। নিম্নচাপের প্রভাব এখন ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। তবে, নিম্নচাপের প্রভাব কেটে গেলেও এখনই বর্ষণমুক্ত হচ্ছে না সিলেট। আজ শুক্রবারও সিলেটে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাত হতে পারে । আগামী ২১ মে পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে মর্মে আভাস আবহাওয়া বিভাগের। 

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত বুধবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৮২.৩ মিলিমিটার। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল গতকাল সকাল ৯টায় ৮৯ এবং সন্ধ্যা ৬টায় ৯৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে সর্বশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ দুর্বল ও গুরুত্বহীন হয়ে নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। একইসঙ্গে সমুদ্র বন্দর গুলো থেকে সতর্ক সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, ভারতের অন্ধ্র উপকূল এবং এর কাছাকাছি স্থলভাগ ও পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে পড়েছে। দুর্বল হওয়ার পর এটি নিম্নচাপ আকারে গতকাল সকাল ৬টায় উপকূলীয় অন্ধ্র প্রদেশের স্থলভাগ ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল ও গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে।

বুলেটিনে বলা হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর গুলোকে সতর্ক সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

এদিকে, বর্ষণের মধ্যেও থেমে থাকেনি জনজীবন। বিশেষ করে দক্ষিণ সুরমার ক্বীনব্রীজ, বাবনা মোড় এবং হুমায়ুন রশীদ চত্বর এলাকায় অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়। 
সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন জলমগ্ন স্পট ঘুরে দেখা গেছে, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লাউয়াই, বঙ্গবীর রোডসহ সেখানকার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা কমেনি। বরং নতুন করে জলমগ্ন হয়েছে আরো বেশ কিছু এলাকা। হাঁটু সমান পানিতে নিমজ্জিত সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাস। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির নিচ তলায় অধ্যক্ষের কক্ষসহ সব ক’টি রুমে ঢুকেছে পানি।
জানা জায়, অল্প-বিস্তর বৃষ্টিপাতেই এই প্রতিষ্ঠানে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এ জন্য প্রতিষ্ঠানে সাময়িক বন্ধ থাকে পাঠদান। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, সুরমা নদীর উপর কাজিরবাজার ব্রিজ নির্মাণের পর থেকে সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ আশপাশ এলাকায় পানি জমে থাকে। পরিকল্পনা মাফিক পানি নষ্কিাশন ব্যবস্থা না থাকায় সৃষ্টি হচ্ছে এমন পরিস্থিতির। 
নগরীর পাঠানটুলা, লন্ডনীরোড, সাগরদীঘিরপার, সুবিদবাজার, শিবগঞ্জ, মেজরটিলা ও উপশহরসহ নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের চিত্র গতকাল বৃহস্পতিবারেও ছিল একই। পথচারী, ব্যবসায়ীসহ সেখানকার স্থানীয়দের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। এছাড়াও, প্রকৃতির টানে সিলেটে ছুটে আসা পর্যটকরা টানা এই বৃষ্টিতে পড়েছেন বিপাকে। বৃষ্টির কারণে বের হতে না পেরে অনেকেই দিনভর আটকা পড়েন হোটেলে।
এদিকে, বৃষ্টিপাতের ফলে বৃহত্তর সিলেটের হাওরাঞ্চলেও দেখা দিয়েছে শঙ্কা। ধান কেটে গোলায় তোলা থেকে শুরু করে বন্যার আশঙ্কাও ভাবাচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের। টানা বৃষ্টি থেকে রেহাই পেতে অপেক্ষায় আছেন সিলেটের বিভিন্ন উপজেলাসহ বিভাগের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের কৃষকরা।