রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের ঝুঁকি কমায় করলার রস

রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের ঝুঁকি কমায় করলার রস

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
ইউরিক অ্যাসিড রক্তে পাওয়া একটি বর্জ্য পদার্থ। এটি তৈরি হয় যখন শরীরে পিউরিন নামক রাসায়নিক ভেঙ্গে যায়। যাইহোক, ইউরিক অ্যাসিড রক্তে দ্রবীভূত হয়ে কিডনির মধ্য দিয়ে যায় এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে।

ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়ার অসুবিধা- অনেক সময় ইউরিক অ্যাসিড রক্তে বেশি হয়ে যায় এবং তা বাইরে আসতে না পেরে এখানে জমা হয়ে স্ফটিকের রূপ নেয়। কারণ এটি জয়েন্টে জমা হয়ে গেঁটেবাত, কিডনিতে পাথর এবং অন্যান্য অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। এতে রোগীর জয়েন্টে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। জয়েন্টে ব্যথা, শক্ত হয়ে যাওয়া, হাঁটতে কষ্ট হওয়া, ফুলে যাওয়া এবং জয়েন্টের লাল হওয়া বা ফাটল হওয়া ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির লক্ষণ।

পারিবারিক রোগভোগের ইতিহাস, কর্মঠ না হওয়া এবং প্রচুর পরিমাণ আমিষ খাওয়ার ফলে শরীরে অত্যধিক ইউরিক অ্যাসিড উৎপন্ন হতে পারে।

গবেষকদের মতে, রক্তে উচ্চ মাত্রার ইউরিক অ্যাসিড একজন ব্যক্তির আয়ু ১১ বছর কমিয়ে দিতে পারে। মানুষের রক্তের মধ্যে ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে শরীরের বিপদজনক অবস্থা তৈরি হতে পারে। এর পরিমাণ বেড়ে গেলে গাঁটে বাত, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি অকেজো হওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।

সাধারণত অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার কারণে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ ছাড়া কিছুক্ষেত্রে জিনগত সমস্যাও থাকে।

অত্যধিক প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। অধিকাংশ চিকিৎসকের মতে, যারা নিয়মিত মাছ-মাংস খেয়ে থাকেন, তাদের ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার ঝুঁকি বেশি। অত্যধিক মদ্যপানও ইউরিক অ্যাসিডের কারণ হতে পারে। আর ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই গাঁটের ব্যথা অনিবার্য। মূলত হাড় ও কিডনির উপরেই ইউরিক অ্যাসিড বেশি প্রভাব ফেলে।

শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে বার বার প্রস্রাব পাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। কারণ কিডনি চায় শরীরে থাকা অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিডকে বার করে দিতে। তবে বার বার প্রস্রাব ছাড়াও শরীরে ইউরিক অ্যাসিডে মাত্রা বেড়ে গেলে বেশি প্রস্রাব থেকে বেরতে পারে রক্তও। এছাড়া, হতে পারে ইউটিআই বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন।

ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বাড়লে প্রস্রাবের সময় অনেকেরই জ্বালা করে। এই জ্বালা এতটা বেশি হয় যে মানুষটি প্রস্রাব আসলেও অনেক সময় করতে চান না। এর থেকে কিডনিতে পাথরও হতে পারে। তাই আপনার সঙ্গেও এমনটা ঘটলে এক বার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে পাথর জমা হয় এবং একটি স্ফটিকের রূপ নেয়। কারণ এটি জয়েন্টে জমা হয় যা গাউট, কিডনিতে পাথর এবং অন্যান্য অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে পরিচালিত করে।

আয়ুর্বেদ মতে, ইউরিক অ্যাসিড কমাতে বাঁধাকপি, স্কোয়াশ, বেল মরিচ, বেগুন, মটরশুটি, বিটরুট, নির্দিষ্ট ধরনের মাছের মতো উচ্চ পিউরিনযুক্ত খাবার এড়ানোর পরামর্শ দেয়। আয়ুর্বেদের মতে, খাবারে করলা সহ ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

করলা রুচিবর্ধক সবজি। ভাজি, ভর্তা, ব্যাঞ্জনে করলার কদর অনেক। চিকিৎসকের মতে, নিয়মিত করলা খেলে রোগবালাই দূরে পালাবে।

করলা সবজি আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি-এর মতো পুষ্টিগুণে ভরপুর। আসলে এটি পুষ্টির একটি পাওয়ার হাউস। এটি ক্যালসিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন এবং পটাসিয়ামের ভালো পরিমাণে লোড হয়।

গবেষণা দেখা গেছে, একদল ইঁদুরকে কয়েকদিন করলার রস খাওয়ানো হয়েছিল। গবেষকরা দেখেছেন যে এটি ইঁদুরের ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমিয়েছে। গবেষকরা করলার রস এবং সিরাম ইউরিক অ্যাসিড লিপিড-লোয়ারিং প্রোফাইল কম করার ক্ষমতার মধ্যে একটি সংযোগ খুঁজে পেয়েছেন।

এক কাপ (৯৪ গ্রাম) করলার ক্যালোরি: ২০, শর্করা: ৪ গ্রাম, ফাইবার: ২ গ্রাম, ভিটামিন সি: ৯৩%, ভিটামিন এ ৪৪%, ফোলেট ১৭%, পটাসিয়াম ৮%, জিঙ্ক ৫% এবং আয়রন ৪% পাওয়া যায়।

করলার রস শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। স্ট্যামিনা বাড়ানোর পাশাপাশি ভালো ঘুম হতেও সহায়তা করে। করলার উপকার পেতে প্রতিদিন সকালে এক কাপ করে এর রস পান করতে পারেন। যদিও এটি এমন একটি সবজি যে যেকোন রূপে খেলে উপকার পাবেন। আপনি এটি আপনার সবজি বা স্যুপেও ব্যবহার করতে পারেন।

এছাড়া করলা উচ্চরক্তচাপ ও চর্বি কমায়। এতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ও চুল ভালো রাখে। বার্ধক্য ঠেকিয়ে তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। হিমোগ্লোবিন তৈরি করে রক্তের উপাদান বাড়াতে করলার জুড়ি মেলা ভার। রক্তশূন্যতায় ভুগছেন এমন রোগীদের জন্য উত্তম পথ্য করলা। করলা শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। করলায় রয়েছে রক্তে চিনি কমানোর উপাদান। ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত করলা খেতে পারেন। পানির সঙ্গে মধু ও করলার রস মিশিয়ে খেলে অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসরোগ ও গলার প্রদাহে উপকার পাওয়া যায়।