রোজার নানাবিধ ফজিলত

রোজার নানাবিধ ফজিলত

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা রোজার গুরুত্ব ও রোজাদারের ফজিলত এবং তাদের পুরস্কারের কথা বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি ধৈর্যশীলদের তাদের পুরস্কার অপরিমিতভাবে দিয়ে থাকি।’ (সুরা জুমার : ১০)

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর।’ (সুরা বাকারা: ১৫৩)

উল্লেখিত দুই আয়াতে আল্লাহ তাআলা ধৈর্যশীলদের পুরস্কারের কথা বলেছেন। আর রোজাদার দীর্ঘ সময় রোজা রাখেন এবং সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকেন। যেহেতু তারা রোজা রাখার মাধ্যমে ধৈর্যের পরিচয় দেন, সেহেতু তারাই প্রকৃতপক্ষে ধৈর্যশীল এবং সহনশীল।

সাহরি ও ইফতারে অতিভোজন নিন্দনীয়
রমজানের রোজা রোজাদারকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও একনিষ্ঠতা সহকারে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোজা রাখে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ: ১৭৩)

অপর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পালন করবে, সে মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ নিষ্পাপ শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যাবে।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ: ১৭৩)

রোজাদার আল্লাহর সাক্ষাত পাবে
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজা রাখে আল্লাহ তাআলা তাদের পুরস্কৃত করবেন। জান্নাতে আল্লাহ তাআলা তাদের দেখা দেবেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘রোজাদার বান্দার জন্য দুটি খুশি। একটি ইফতারের সময়, বান্দা যখন ইফতার করবে। অন্যটি পরকালে, বান্দা যখন তার প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতে করবে। (বুখারি)

রোজাদারের মুখের গন্ধ মেশকের চেয়েও সুগন্ধি
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজা রাখে, তাদের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ তাআলার কাছে মেশকের চেয়েও বেশি সুগন্ধিযুক্ত। নবীজি (সা.) বলেন, ‘রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও বেশি সুগন্ধি।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ: ১৭৩)

রোজা ঢালস্বরূপ
মুজাহিদরা যেভাবে ঢাল দিয়ে প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করে, ঠিক তেমনি রোজা জাহান্নাম থেকে রোজাদারকে রক্ষা করবে। রোজাদার ও জাহান্নামে মাঝখানে রোজা ঢাল হয়ে থাকবে। হাদিসে আছে, ‘ঠিক তেমনি পরকালেও জাহান্নাম থেকে রোজা রোজাদারদের রক্ষা করবে।’ (বায়হাকি)

রোজা ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে
কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রমজানের রোজা এবং কুরআনুল কারিম কিয়ামতের ময়দানে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আমার প্রভু! আমি তাকে (রোজাদারকে) দিনের বেলায় পানাহার এবং নফসের কুপ্রবৃত্তি থেকে নিষেধ করেছি। সুতরাং আপনি তার হকে আমার সুপারিশ কবুল করুন। আর কুরআনুল কারীম বলবে, আমি তাকে (তেলাওয়াতকারীকে) রাতের বেলায় ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। সুতরাং আপনি তার হকে আমার সুপারিশ কবুল করুন। অতঃপর উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ (বুখারি)

রোজাদারের জন্য জান্নাতের দরজা রাইয়ান
রোজাদারের জন্য জান্নাতে প্রবেশ করার একটি স্পেশাল দরজা থাকবে, ওই দরজা দিয়ে শুধু রোজাদাররা জান্নাতে প্রবেশ করবে, অন্য কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সাহল ইবনে সাদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘জান্নাতে স্পেশাল একটি দরজা আছে যাকে রাইয়ান বলা হয়। এই দরজা দিয়ে শুধু রোজাদাররা জান্নাতে প্রবেশ করবে। রোজাদার ব্যতীত অন্য কেউ এই দরজা দিয়ে তাদের সঙ্গে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (হাদিস)

রোজাদারের দোয়া কবুল হয়
রোজাদাররা আল্লাহর কাছে এত বেশি প্রিয় যে, তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। বিশেষ করে ইফতারের সময় রোজাদারগণ ইফতার সামনে নিয়ে যখন দোয়া করে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইফতারের সময়ে রোজাদারদের দোয়া প্রত্যাখ্যান হয় না।’ (ইবনে মাজাহ)

হাশরের ময়দানে রোজাদারদের চেনা যাবে
হাশরের ময়দানে যারা দুনিয়াতে রোজা রেখেছিলেন, তাদের চেনা যাবে। যেমন হাদিসে এসেছে, ‘রোজাদাররা কবর থেকে বের হলে তাদের মুখের সুগন্ধি দ্বারা তাদের চেনা যাবে। তাদের মুখের সুগন্ধি মেশকের চেয়ে উত্তম হবে। ইমাম মকহুল (রা.) বলেন, জান্নাতবাসীরা একটা সুগন্ধি পাবে। তারা বলবে, হে আমাদের প্রভু! আমরা জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে এই সুগন্ধির মতো উত্তম সুগন্ধি আর পাইনি। তখন বলা হবে, এই সুগন্ধি রোজাদারের মুখের।’ (ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.), লাতায়েফুল মাআরিফ, পৃষ্ঠা: ২৬০)

বেহেশতের খাবার পরিবেশন
রমজান মাসে মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালো কাজ করে এবং দিনের বেলায় পানাহার থেকে বিরত থাকার কষ্ট সহ্য করে। যারা দিনের বেলায় পানাহার থেকে বিরত থাকার কষ্ট সহ্য করবে কেয়ামত দিবসে এটার বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তাদের বেহেশতের সুগন্ধযুক্ত খাবার ও পানীয় দেবেন। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘বিগত দিনের (দুনিয়াতে) তোমরা যা প্রেরণ করেছিলে তার প্রতিদানে তোমরা খাও এবং তৃপ্তি সহকারে পান কর। (সুরা হাক্কাহ: ২৪)

রমজানের রোজার গুরুত্ব ও রোজাদারের ফজিলত অপরিসীম। আল্লাহ তাআলার কাছে একজন রোজাদারের সম্মান ও মর্যাদা অনেক বেশি। রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ মেশকের চেয়ে বেশি সুগন্ধিযুক্ত। আসুন, আমরা বরকতময় এই রমজান মাসের রোজা, নামাজ, সাহরি, ইফতারি, তারাবি, দান-সদাকা, কুরআনুল কারিমের তেলাওয়াতসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি।