ভারত-বাংলাদেশ ট্রানজিট চুক্তি

সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে মেঘালয়ে প্রবেশ করলো কন্টেইনারের পরীক্ষামূলক প্রথম চালান

সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে মেঘালয়ে প্রবেশ করলো কন্টেইনারের পরীক্ষামূলক প্রথম চালান

মনজুর আহমদ, গোয়াইনঘাট থেকে : এগ্রিমেন্ট অন দ্যা ইউজ অব চট্টগ্রাম এন্ড মংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া (এসিএমপি) চুক্তির আওতায়  বাংলাদেশের ভুখন্ড ব্যবহার করে ট্রায়াল রান (পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহন) শুরু হয়েছে। এরই আলোকে গতকাল বুধবার দুপুরে কলকাতা থেকে মেশিনারিজ পণ্য নিয়ে আসা প্রথম চালানটি সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে মেঘালয়ে পাঠানো হয়। এসময় তামাবিল স্থল বন্দরে সিলেটের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার ও সিলেটে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারি হাই কমিশনার, গোয়াহাটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারি হাই কমিশনার ও মিশন প্রধান এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। এরপর কলকাতা থেকে মংলা বন্দর হয়ে মেশিনারিজ পণ্য নিয়ে আসা ইলেক্ট্রো স্টিল কাস্টিং লিমিটেডের ৭০ প্যাকেজের ১৬.৩৮০ মেট্টিক টন লোহার পাইপসহ একটি কন্টেইনারের চালান সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে মেঘালয়ে প্রবেশ করে। 

সূচনাকালে সিলেটের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত এসিএমপি ট্রানজিট চুক্তির আওতায় বাংলাদেশি বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতের সাথে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে একটি অনন্য মাইলফলক সৃষ্টি হলো। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশের সাথে বন্ধুত্ব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

সিলেটে নিযুক্ত ভারতের সহকারী হাই কমিশনার নীরজ কুমার জয়সওয়াল সাংবাদিকদের জানান, ভারত-বাংলাদেশ প্রটোকল রুটে অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে ব্যবসায়িক গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনীতি ও দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। 
তিনি আরও বলেন, ‘২০২২ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ১৩তম ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমস (জেএসসি) বৈঠকের পর ট্রায়াল রান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তাই প্রথম ট্রায়ালের পণ্য মংলা বন্দর দিয়ে খালাসের পর তামাবিল দিয়ে মেঘালয়ে পাঠানো হলো। এ চালানের মাধ্যমে দু’দেশের ট্রান্সশিপমেন্টের দরজা খুলল। পরে ব্যবসায়িক গতি আরো বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন। 
বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার এবং মিশন প্রধান ড. শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর বলেন, এ চালানের মাধ্যমে দু দেশের মধ্যে বড় একটি বাধা অতিক্রম করলো। আর বাংলাদেশের সাথে ভারতের একটি অংশ (সেভেন সিস্টার) যুক্ত হলো।
জানা গেছে, গত ১ আগস্ট ভারতের কলকাতা বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে একটি জাহাজ ছেড়ে আসার পর গত রোববার সকালে মংলা বন্দরে পৌঁছায়। সোমবার দুপুরে কন্টেইনার ও স্টিল পণ্য খালাসের পর দুটি কন্টেইনারের একটি ভারতের মেঘালয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে গতকাল বুধবার সকালে সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দরে আসে। 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ করতে দুই দেশের মধ্যে ২০১৮ সালের অক্টোবরে চুক্তিটি হয়। এরপর প্রথমবারের মতো ট্রায়াল রান হয়েছিল ২০২০ সালের জুলাইয়ে। তখন কলকাতা বন্দর থেকে পণ্যবাহী নৌযান চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। সেখান থেকে স্থলপথে পণ্য আগরতলা নেয়া হয়েছিল। তখনকার পণ্য ছিল ডাল ও রড। কিন্তু করোনা মহামারিসহ নানা জটিলতায় গত চার বছরে এই চুক্তির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। পরে ভারতের পক্ষ থেকে চারটি রুটে ট্রায়াল রানের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। তবে আপাতত দুটি স্থলবন্দর দিয়ে ট্রান্সশিপমেন্ট দিতে রাজি হয় বাংলাদেশ। তার প্রেক্ষিতেই মংলা বন্দর ব্যবহার বিষয়ক চুক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নে চারটি ট্রায়াল রানের প্রথমটি শুরু করেছে কলকাতা বন্দর।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম ট্রায়ালে ভারতের কলকাতা থেকে বাংলাদেশি নৌযান ‘এমভি রিশাদ রায়হান’ পণ্য বোঝাই দুটি কন্টেইনার নিয়ে মংলা বন্দরে আসে। এদুটি কন্টেইনারের একটিতে ইলেক্ট্রো স্টিল কাস্টিং লিমিটেডের ৭০ প্যাকেজের ১৬.৩৮০ মেট্টিক টন লোহার পাইপ এবং আরেকটিতে ২৪৯ প্যাকেজে ৮.৫ মেট্টিক টন প্রিফোম রয়েছে। যার মধ্যে ইলেক্ট্রো স্টিল কাস্টিং লিমিটেডের ৭০ প্যাকেজের ১৬.৩৮০ মেট্টিক টন লোহার পাইপ ভর্তি কন্টেইনারটি তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে মেঘালয়ে পাঠানো হয়েছে। অপরটি কুমিল্লার বিবিরবাজার স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আসামে যাওয়ার কথা রয়েছে।
গতকাল তামাবিল স্থল বন্দরে ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রমের সূচনাকালে অন্যান্যের মধ্যে সিলেটের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট এর সহকারি কমিশনার মোহাম্মদ রাশেদুল আলম, ভারতের সহকারী হাইকমিশন সিলেট অফিসের সেকেন্ড সেক্রেটারী এন কে গঙ্গোপাধ্যায় ও মি. রামপ্রকাশ ও তামাবিল বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন ।