সিসিক’র মেয়র পদে লড়াইয়ে প্রস্তুত ৬ আ’লীগ নেতা

সিসিক’র মেয়র পদে লড়াইয়ে প্রস্তুত ৬ আ’লীগ নেতা

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
সিসিক নির্বাচনের এখনো অনেকটা সময় বাকি। তবে এই দীর্ঘ সময়কে পত্তা দিচ্ছেন না সরকারী দলীয় নেতাকর্মীরা। এখন থেকেই দলীয় মনোনয়ন পেতে নেতাদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুর কারণে নতুন প্রার্থী বাছাইয়ের কথা ভাবতে হচ্ছে দলটিকে। এখন পর্যন্ত অন্তত ছয় নেতা কামরানের বিকল্প হতে নানাভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সিসিক নির্বাচন হতে পারে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের পাশাপাশি নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে নগরবাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করছেন। করোনায় দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও অন্যান্য সেবা দিয়ে জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন তারা।

সাবেক মেয়র কামরান করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ১৫ জুন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২০০২ সালে পৌরসভা থেকে সিলেট সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর প্রথম দুই দফা মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি কামরান। ২০১৩ ও ২০১৮ সালে দু'বার তিনি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীও ছিলেন। সর্বশেষ সম্মেলনে মহানগরের সভাপতিত্ব হারালেও জনপ্রতিনিধি হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন কামরান। সিসিক নির্বাচন মাথায় রেখে প্রায় তিন দশক পর আওয়ামী লীগকে নতুন প্রার্থীর সন্ধানে নামতে হচ্ছে।

ব্যাপক জনপ্রিয় কামরানের বিকল্প প্রার্থী হতে আগ্রহী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় ছয় নেতা। সর্বশেষ নির্বাচনে কামরানের সঙ্গে মনোনয়নযুদ্ধে নামা দু'জনের সঙ্গে এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছেন আরও চার নেতা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট মহানগরের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আরমান আহমদ শিপলুর নাম আলোচনায় রয়েছে। তাদের মধ্যে ডা. শিপলু প্রয়াত কামরানের বড় ছেলে হিসেবে বাবার স্থলাভিষিক্ত হতে চান। তবে আসাদ, জাকির ও আজাদ মনে করেন, কামরানের বিকল্প হিসেবে তারা এগিয়ে রয়েছেন।

বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন মহানগরের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আসাদ ও সিসিকের টানা তিনবারের কাউন্সিলর আজাদ। সে সময় মনোনয়নবঞ্চিত আসাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারীদের প্রচারে 'বিব্রতবোধ' করেন। তবে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়ে মাঠে থাকার ইঙ্গিত রেখেছেন তিনি। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি প্রচার চালাচ্ছেন। সিলেট-ঢাকা সড়কের ছয় লেনের কাজ উদ্বোধন করায় গত ৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে অভিনন্দন জানিয়ে নগরীতে শোডাউনের মাধ্যমে নিজের শক্তি জানান দেন আজাদ।

দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ (নগর-সদর) আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন অ্যাডভোকেট মিসবাহ। সর্বশেষ সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মহানগর আওয়ামী লীগে কামরানের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী মিসবাহ এবার মেয়র হতে চাইছেন। অন্যদিকে, মৌলভীবাজার-২ আসনে বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী নাদেল ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে নগরীতে সক্রিয় রাজনীতি করেছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক নাদেল ময়মনসিংহ বিভাগে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দায়িত্বে রয়েছেন। করোনাকালে সক্রিয়ভাবে নগরবাসীর পাশে দাঁড়ানো নাদেলকে তার অনুসারীরা সিসিকের মেয়র পদে দেখতে চান।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে টানা তিনবার সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর বাদ পড়েন মিসবাহ। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এই নেতা বলেন, কে বা কারা মনোনয়ন চাইলেন, তা মুখ্য বিষয় নয়। আমি মনে করি, সময়মতো দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে যোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। তাই ব্যক্তিগতভাবে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তিনি আরও বলেন, সরকারি বা বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছি। সবসময় অর্পিত দায়িত্ব সুচারুভাবে পালনের চেষ্টা করেছি। আন্তরিকতার কোনো অভাব ছিল না।

২০১৮ সালের নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী আরিফের কাছে কামরানের পরাজয়ের পর সিলেট আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভেদের বিষয়টি সামনে আসে। মেয়র প্রার্থীসহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের শোকজ করেন হাইকমান্ড। পাশাপাশি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়া হয়। ২০১৯ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন অধ্যাপক জাকির। নিজেকে নগরপিতা নয়, জনগণের সেবক হিসেবে দেখতে চান বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, গতবারও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এবার মহানগরের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজের পরিধি বেড়েছে। মহানগরের রাজনীতি করতে গিয়ে সবসময় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কামরানের জীবদ্দশায় তার বড় ছেলে ডা. শিপলু জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে ছিলেন। সর্বশেষ কমিটি থেকে কামরান বাদ পড়ার পর শিপলুকে মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। বাবার অবর্তমানে তিনি মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে নানাভাবে প্রচার শুরু করেছেন। বাবার মতোই মানুষের সেবা করতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে আব্বাকে মানুষের জন্য কাজ করতে দেখেছি। আমিও মানুষের সেবা করতে আনন্দ পাই। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড যদি আমাকে যোগ্য বলে বিবেচনা করেন, তাহলে আমি মেয়র পদে প্রার্থী হতে চাই।

চলতি মাসের শুরুতে শোডাউনকে কৌশলী প্রচার বলে মানতে না চাইলেও আজাদের অনুসারীরা তাকে এবারে মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। নগরীতে 'টিলাগড় গ্রুপ' নামে স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী একটি বলয়কে নিয়ন্ত্রণ করেন আজাদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে মেয়র হিসেবে দেখতে চেয়ে প্রতিনিয়ত প্রচার চালানো হচ্ছে। শোডাউনের পেছনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে শক্তি প্রদর্শনের বিষয় অস্বীকার করলেও মেয়র পদে ভবিষ্যতে মনোনয়ন চাওয়ার কথা স্বীকার করেন আজাদ। জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে সফল দাবি করে তিনি বলেন, এই অভিজ্ঞতায় আরও বড় পরিসরে কাজ করতে চাই।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়র পদে প্রার্থিতা নিয়ে পোস্ট দিলে দলে বিভাজন সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে বলে মন্তব্য করেছেন আসাদ। গত আগস্টে ফেসবুকে নিজের ওয়ালে আসাদ মেয়র প্রার্থী হিসেবে তাকে নিয়ে স্ট্যাটাস না দেওয়ার অনুরোধ করেন। এতে দলীয় বিভেদ প্রকট হয়ে ওঠে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিগত নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কামরান ভাইকে বেছে নিয়েছিলেন। সেই সময় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে কামরান ভাইয়ের সঙ্গে মূল আলোচনায় ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী চাইলে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইব। সবসময় নগরবাসীর পাশে থাকার চেষ্টা করি। তারাও আমাকে চান।

নাদেলের অনুসারীরাও তাকে মেয়র পদে দেখতে চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন। নাদেল বলেন, মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া দলের হাইকমান্ডের দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী আমাকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। এই দায়িত্ম সুচারুভাবে পালনের চেষ্টা করছি। অতীতে যখনই দল থেকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা পালনের চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।-তথ্য সূত্র: সমকাল