শি জিনপিংকে নিয়ে নতুন ইতিহাস তৈরি হতে যাচ্ছে চীনে
রয়েল ভিউ ডেস্ক:
চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেস শুরু হচ্ছে ১৬ই অক্টোবর রাজধানী বেইজিংয়ের গ্রেট হলে। ধারণা করা হচ্ছে কম্যুনিস্ট পার্টির ঐ সভায় শি জিনপিংকে তৃতীয় দফায় আরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার প্রস্তাব অনুমোদন করা হবে যা চীনের রাজনীতিতে নতুন ইতিহাস তৈরি করবে।
এমনিতেই শি জিনপিংকে দেখা হয় মাও জে দংয়ের পর সবচেয়ে ক্ষমতাধর চীনা নেতা হিসাবে। তৃতীয়বারের মত প্রেসিডেন্ট হতে পারলে চীনের ক্ষমতায় তার নিয়ন্ত্রণ আরো শক্ত হবে। অনেকেই মনে করেন এমনও হতে পারে যে ৬৯ বছরের শি আজীবনের জন্য ক্ষমতা ধরে রাখবেন।
বর্তমানে শি জিনপিং শীর্ষ তিনটি সবচেয়ে ক্ষমতাধর পদ ধরে রেখেছেন- জেনারেল সেক্রেটারি হিসাবে তিনিই চীনা কম্যুনিস্ট পার্টির এক নম্বর নেতা, প্রেসিডেন্ট হিসাবে তিনিই চীন রাষ্ট্রের প্রধান, কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি চীনের সেনাবাহিনীর শীর্ষ কম্যান্ডার।
ধারণা করা হচ্ছে দলের আসন্ন কংগ্রেসেও - যা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয় - শি তার প্রথম দুটো পদ ধরে রাখবেন - দলের সেক্রেটারি জেনারেল এবং সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান।
পার্টি কংগ্রেসে কী ঘটে?
বেইজিংয়ের তিয়েনআনমেন স্কোয়ারের গ্রেট হলে কম্যুনিস্ট পার্টির ২৩০০ ডেলিগেট বা প্রতিনিধি এক সপ্তাহের জন্য জড়ো হবেন। তাদের মধ্যে দুশ জনের মত দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হবেন। আরও ১৭০ জন হবেন বিকল্প সদস্য।
কেন্দ্রীয় কমিটি দলের পলিটব্যুরোর ২৫ জন সদস্য নির্বাচন করবে। তারপর পলিটব্যুরোর সদস্যরা পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়োগ করবেন। এরাই দলের ক্ষমতাধরদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাধর গোষ্ঠী।
বর্তমানে পলিটব্যুরো স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা সাত, যার মধ্যে রয়েছেন সেক্রেটারি জেনারেল শি জিনপিং। এদের সবাই পুরুষ।
কংগ্রেসেই যেসব সিদ্ধান্ত হয় তা নয়। কংগ্রেসের মূল অধিবেশন শেষ হওয়ার পর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বসবে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই কংগ্রেস
শি আরেক দফায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং সেই সাথে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর একটি সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব নেবেন। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, তার নতুন দফার শাসনামলে চীনে কর্তৃত্ববাদী শাসন আরো শক্ত হবে।
‘শির শাসনাধীনে চীন পুরোমাত্রায় একটি একনায়ক রাষ্ট্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে,’ বিবিসিকে বলেন লন্ডনের সোয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভ সাং। ‘মাও জে দংয়ের সময় যেমন একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এখনও পরিস্থিতি পুরোপুরি তেমন না হলেও চীন সেদিকেই এগুচ্ছে’।
অধ্যাপক সাং বলেন কম্যুনিস্ট পার্টির আসন্ন কংগ্রেসে দলের সংবিধান বদল করা হতে পারে। তিনি মনে করেন শি জিনপিংয়ের চিন্তাধারাই দলের জন্য অনুসরণীয় দর্শন হয়ে পড়বে।
চীনা সমাজতন্ত্রের স্বরূপ কী হওয়া উচিৎ সে সম্পর্কে শি জিনপিংয়ের নিজস্ব ধ্যান-ধারণা রয়েছে। তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শনের মূলে রয়েছে দৃঢ় জাতীয়তাবাদ। ব্যক্তি খাতের ব্যবসা নিয়ে তিনি সন্দিহান।
তার শাসনামলে চীনা কর্তৃপক্ষ অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের খুবই বড় কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর চড়াও হয়েছে। যদি তেমনটি হয় (তার চিন্তাভাবনাই দলের দর্শন হয়ে পড়ে) তাহলে দলই তাকে একজন স্বৈরাচারীতে পরিণত করবে’, বলেন প্রফেসর সাং।
কংগ্রেসে নির্বাচিত নতুন নেতৃত্ব চীনের জন্য বহু নতুন নতুন নীতি তুলে ধরবে। চীন আগামী দিনগুলোতে কোনে পথে যাবে সে ব্যাপারে যে কোনো ইঙ্গিতের দিকে বাকি বিশ্ব তাকিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে অর্থনীতি, রাজনীতি, কূটনীতি এবং পরিবেশ নিয়ে চীনের ভবিষ্যত চিন্তাভাবনা বাকি বিশ্বের জন্য এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।