ফেঞ্চুগঞ্জে দোকান কর্মচারী হত্যা : দুইজনের যাবজ্জীবন
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় মুদি দোকানের কর্মচারী সজল বিশ্বাসকে হত্যার দায়ে দুই আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মশিউর রহমান চৌধুরী দুই আসামিকে এই দন্ড দেন। দন্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ভোলার কান্দি গ্রামের মৃত দছির আলীর পুত্র শাকিল আহমদ (২০), একই গ্রামের মিয়াধন মিয়ার পুত্র সুমন আহমদ (২২)।
সিলেট জেলার পিপি এডভোকেট মো. নিজাম উদ্দিন সিলেটের ডাককে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন,আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে হত্যাকান্ডে দুই আসামির সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। বয়স বিবেচনায় আদালত তাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন।
জানা গেছে, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া ইউনিয়নের নিজ ঘিলাছড়া ইছাপুর গ্রামে ঋষিকেশ দে’র বাড়ির সামনের দোকানে কর্মচারী হিসেবে সজল বিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ছিলেন। গত বছরের ২০ জুলাই রাতে প্রতিদিনের ন্যায় দোকান বন্ধ করে দোকান মালিকের বাড়িতে খাবার খেতে যান সজল বিশ্বাস। এরপর রাত ১১টার দিকে ফিরে দোকানে ঘুমাতে যান সজল। রাত পৌনে ১২টার দিকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা সজল বিশ্বাসকে গলায় গামছা পেচিয়ে হত্যার পর মরদেহ দোকানের মেঝেতে ফেলে যায়। সজলের মরদেহ মেঝেতে গামছা পেচানো অবস্থায় দেখে স্থানীয়রা দোকান মালিক ঋষিকেশ দেবকে খবর দেন।
পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় দোকান মালিক ঋষিকেশ দেব বাদী হয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর ঘিলাছড়া আশ্রয়ন প্রকল্প এলাকা থেকে শাকিল, সুমন, জিপু ও জুবেলকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। ফেঞ্চুগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক আতিক উজ জামান জুনেল আসামি শাকিল ও সুমনকে অভিযুক্ত করে চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ ঘটনায় জড়িত আতিক মিয়া, জিপু মিয়া ও জুবেল মিয়া অপ্রাপ্ত বয়স হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শিশু আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
গত ১২ জুন মামলাটি বিচারের জন্যে সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হয়। এই আদালতে গত ১৮ জুন আসামি শাকিল ও সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর মামলার ৩০ সাক্ষির মধ্যে ১৯ জনের স্বাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।পরবর্তীতে যুক্তিতর্কসহ সকল কার্যক্রম শেষে গতকাল সকালে সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মশিউর রহমান চৌধুরী চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামি শাকিল আহমদ ও সুমন আহমদকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রদানের পাশাপাশি তাদেরকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অপর একটি ধারায় আরও ২ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড, পৃথক আরেকটি ধারায় ৫ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড, ২ হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়। প্রতিটি ধারায় কারাদন্ডের সাথে অর্থদন্ড এবং অনাদায়ে একমাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সিলেট জেলার পিপি এডভোকেট মো. নিজাম উদ্দিন। আসামিপক্ষে ছিলেন এডভোকেট মো. জয়নাল আবেদীন।