সংসার খরচের হিসাব মেলে না

সংসার খরচের হিসাব মেলে না

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
একটি বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে হিসাবরক্ষকের কাজ করেন শামীম মিয়া। থাকেন রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর। প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে প্রশিক্ষণের জন্য কাঁটাবন এলাকার একটি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে নিয়মিত যেতে হয় তাকে। আধাবেলা অফিস করে উত্তরা থেকে গতকাল রবিবার দুপুরের পর ‘গ্রিন ঢাকা’ পরিবহনে রওনা দেন পল্টনের উদ্দেশে। সেখান থেকে রিকশায় করে যাবেন কাঁটাবন। এ পথে গেলে তার জন্য সুবিধা হয়।

বাসে যেতে যেতে শামীম মিয়ার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর ‘গ্রিন ঢাকা’ পরিবহন ১২০ টাকার ভাড়া বাড়িয়ে ১৫০ টাকা করেছে। এতে তার খরচ বেড়েছে ৩০ টাকা। তারপর চলে আসেন সংসার খরচের প্রসঙ্গে। শামীম বলেন, বাসায় খাওয়ার জন্য তিনি প্যাকেটজাত তরল দুধ কেনেন। আগে এক লিটার দুধ কিনতেন ৮০ টাকা করে। এখন কিনছেন ১০০ টাকা করে। গত এক-দেড় সপ্তাহ ধরে কাঁচা মরিচের দাম বেশি। আগে ২০ টাকার কাঁচা মরিচ কিনলে এক সপ্তাহ চলত। এখন ৩০ টাকার কাঁচা মরিচ কিনলে ৩ দিনও চলে না।

বাড়িওয়ালা গত জুলাই মাস থেকে ৫০০ টাকা বাসা ভাড়া বাড়িয়েছে। পানির বিল ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা করেছে। গ্যাস বিলও কিছুদিন আগে বেড়েছে বলে জানান শামীম। এখন বিদ্যুতের বিল বাড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন নির্দিষ্ট আয়ের এই নগরবাসী। সাড়ে ৫ বছরের এক মেয়ে, স্ত্রীসহ তিনজনের সংসারে প্রতি মাসেই কোনো-না-কোনো ব্যয় বাড়ছে তার। কিছুদিন আগেও ৬৫০ টাকায় এক কেজি গরুর মাংস কিনতে পারতেন। এখন কিনতে হচ্ছে ৭০০ টাকা দরে। তিনি বলেন, ‘বাসা থেকে একটু দূরে বাজার। রিকশা ভাড়া দিতে হয় ২০ টাকা। কখনো কখনো টাকা বাঁচানোর জন্য পায়ে হেঁটে বাজারে যাই। কিন্তু যখন মাংস কিনে ৭০০ টাকা গুনে দেই তখন মনে হয়, ২০ টাকা রিকশা ভাড়া বাঁচিয়ে লাভ কী। মাংসের দোকানদাররা তো ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। মাসে এক-দুই দিন তো মাংস না খেয়ে পারা যায় না।’

মাংসের দাম ও উপযোগ নিয়ে শামীমের মনে প্রশ্ন জাগে, ‘এক কেজি মাংসের পেছনে ৭০০ টাকা ব্যয় করতে হয়। এই টাকা দিয়ে তো প্রায় ১০ কেজি চাল কেনা যায়। মাংসের দামে এত ব্যবধান হলে কীভাবে হয়?’ তিনি বলেন, ‘সয়াবিন তেলের দাম বাড়ছে আবার। দেড় বছরের ব্যবধানে তেলের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আগে ৫ লিটার তেল ৫৮০-৫৯০ টাকায় কিনতে পারতাম। এখন কিনতে হচ্ছে প্রায় ১ হাজার টাকায়।’   সংসার খরচ কত বাড়ল কখনো হিসাব করে দেখেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে এই চাকরিজীবী বলেন, “আগে একসময় সংসার খরচের হিসাব রাখার জন্য ‘মানি ম্যানেজার’ নামে একটি অ্যাপ ব্যবহার করতাম। সেখানে প্রতিদিনের আয়-ব্যয় তুলে দিলে সুন্দরভাবে মাসের হিসাব রাখা যেত। নগদ টাকা কত ব্যয় করলাম, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কত ব্যয় করলাম, কার্ডে কত খরচ করলাম, সব হিসাব রাখতাম। এখন আর এই হিসাব নিয়মিত রাখা হয় না। ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় হিসাব রাখতে ইচ্ছা করে না।’’
 
মধ্যবয়সী শামীমের গ্রামের বাড়ি জামালপুর। সেখানে তার মা-বাবাকে প্রতি মাসে খরচের জন্য ৭ হাজার টাকা পাঠাতেন। গত মাস থেকে ৮ হাজার টাকা করে পাঠাতে শুরু করেছেন। মেয়ের স্কুল ও পড়ালেখার খরচ খুব একটা বাড়েনি। তবে বাচ্চার জন্য চকলেট, চিপস কিনতে আগের থেকে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। প্রিঙ্গলস চিপস ২২৫ টাকা ছিল, এখন কিনতে হচ্ছে ২৫০ টাকায়। কিটক্যাট চকলেট কিনতেন ৭০০ টাকা দিয়ে, এখন সেই প্যাকেটের দাম হয়েছে ৯০০ টাকা।

বেতনের টাকা থেকে সামান্য কিছু টাকা বাঁচিয়ে কিছু সঞ্চয় করতে শুরু করেছিলেন। এখন সেই ডিপিএসগুলো কোনোরকমে চালিয়ে নিচ্ছেন শামীম। তিনি বলেন, ‘তাও দুই-তিন বছর আগের ডিপিএস। এর মধ্যে ভেবেছিলাম স্ত্রীর নামে আরও একটি ডিপিএস খুলব। তা আর হয়ে ওঠেনি।’