সুনামগঞ্জে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে ধীরগতি
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে ধীরগতির অভিযোগ করেছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন। তাদের দাবি, চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জের ফসলের সুরক্ষায় হাওরে ৫৯১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে ৭৩৩টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি অর্থবছরের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন কৃষকরা। অন্যদিকে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ না হলে জেলাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচির পাশাপাশি কৃষকদের সাথে নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে হাওর ও কৃষকের সংগঠন হাওর বাঁচাও আন্দোলন। একই সাথে সংগঠনটি দাবি করছে, এখন পর্যন্ত বাঁেধর ৪০ ভাগ কাজ হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বাঁধ নির্মাণকাজের সার্বিক অগ্রগতি তুলে ধরে বোরো ফসলের সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে সংগঠনটি। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দাবি করেন, ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের কাজ শুরু ও ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১ মাস থেকে দেড় মাস পরে কাজ শুরু করা হয় অনেক প্রকল্পে। বিলম্বে পিআইসি গঠন ও সময় মতো কাজ শুরু না করতে পারায় বাঁধ নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি পিছিয়ে যায়। অন্যান্য বছরের মতো এবারও পিআইসি গঠনে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কৃষককে প্রাধান্য না দিয়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে অকৃষকদের নামে পিআইসি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। গণশুনানির মাধ্যমে পিআইসি গঠন করার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি প্রতিপালন হয়নি।
৩ শতাধিক প্রকল্প সরেজমিনে পরিদর্শন করে বাঁধ নির্মাণ কাজে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অক্ষত বাঁঁধে পূর্ণ বরাদ্দ, প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ বেশি, অপ্রয়োজনীয় পিআইসি গঠনসহ হাওরের কাজে আসবে না-এমন স্থানে প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারের টাকা অপচয়, হাওরের টাকায় গ্রামের রাস্তা, বালি মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরী, বাঁধের গোড়া থেকে মাটি উত্তোলন, দুর্মজ বা কম্পেশন না করা, পুরাতন বাঁধ কেটে নতুন বাঁধ তৈরীসহ বাঁধের কাজে বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী, চলতি মাসের ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত বাঁধের কাজের অগ্রগতি ৬৭ ভাগ উল্লেখ করা হলেও এই তথ্য বাস্তব সম্মত নয় বলে উল্লেখ করেন সংগঠনের নেতারা।
সংগঠনের নেতারা দাবি করেন, জেলার শাল্লা, দিরাই, জামালগঞ্জ, বিশ^ম্ভরপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর, শান্তিগঞ্জ ও সদর উপজেলায় ধীরগতিতে বাঁধের কাজ হচ্ছে। জেলার অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজার উন্মুক্ত রয়েছে। অনেক বাঁধে সবেমাত্র মাটির কাজ শুরু হয়েছে। স্লোভ, দুর্মুজের কাজ হয়নি, অনেক ক্লোজার বা ভাঙ্গায় বাঁশ, বস্তা, ছাটাই বসানো হয়নি। সংগঠনের মাঠ পর্যায়ের তথ্য বলছে, বাঁধের কাজের সার্বিক ৪০ ভাগের কাছাকাছি। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন করা কঠিন হবে বলে মনে করেন তারা। দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে গিয়েও বাঁধের কাজের গুণাগুণ বজায় রাখা সম্ভব হবে না। এতে ফসল ঝুঁকির মুখেই থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে চলমান বাঁধ নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ও সরজমিন তথ্য তুলে ধরে সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন জেলা কমিটির সভাপতি ইয়াকুব বখত বাহলুল। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলনের সঞ্চলনায় এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার, সুখেন্দু সেন, সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল ভট্টাচার্য্য, জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ নূর আহমেদ, সদস্য আলী নূর, ইসমাইল মিয়া প্রমুখ।