ভিসির পদত্যাগ দাবিতে অনশন

অসুস্থ শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন সহপাঠীরা

অসুস্থ শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন সহপাঠীরা

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে চারদিন ধরে অনশন করে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনশনরত অধিকাংশ শিক্ষার্থী। এরমধ্যেই আবারো গণঅনশনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) জান্নাতুল নাইম নিশাত নামে অনশনরত এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাকে হাসপাতালে নিতে চাইলে তিনি যেতে অস্বীকৃতি জানান। জোর করে অ্যাম্বুলেন্সে উঠাতে গেলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তখন বলেন, আমি হাসপাতালে যাবো না, আমি তো আমরণ অনশন করতে এসেছি। হাসপাতালে কেন যাবো, আন্দোলনে এসেছি না?

এরপর থেকে নিশাত হাসপাতালে। এখনো তিনি অনশনরত থাকায় তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে।

নিশাতের সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান প্রোমি চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা তাকে অনেক বুঝিয়েছি। তার অবস্থা দেখে সবার কান্না আসছে, কিন্তু তাকে কিছু খাওয়াতে পারছি না। তার নিকট আত্মীয় যারা, তারাও বোঝানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু কেউ কিছু খাওয়াতে পারছেন না। সে বারবার আমাদের বলেছে, ‘দাবি না মানা পর্যন্ত আমি কিছু খাবো না’। অথচ চিকিৎসক বলছেন, তার শরীরের ভেন খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে চললে সে কোমায় চলে যেতে পারে।

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ৯২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের ১৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অনশনে অংশ নেওয়া মেয়ে শিক্ষার্থীরা সবাই এখন হাসপাতালে।

ক্যাম্পাসে অনশনরত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসাসেবার জন্য নিয়োজিত মেডিকেল টিমের সদস্য মোস্তাফিজ রহমান বলেন, মেয়েরা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এদের দ্রুত খাবার না খাওয়ালে শারীরিকভাবে আরো অসুস্থ হয়ে পড়বেন। কারো কারো ডায়াবেটিসের সমস্যা হচ্ছে।

এদিকে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে এসে শাবি শিক্ষার্থী অরুণ কুমার চাকি বলেন, আমি কারো মুখের দিকে তাকাতে সাহস পাচ্ছি না। যদি আমাকে বলে ভাই খুব কষ্ট হচ্ছে।

এই বলে তিনি চোখের পানি মুছতে থাকেন।

অন্যদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী হাসিব রহমান বলেন, আমি এদিকে এলে তাদের দিকে তাকাতে সাহস পাই না। তাদের ওই চেহারা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে।

চিকিৎসা নিয়ে একটু স্বাভাবিক বোধ করায় আবারো অনশনে ফিরেছেন চার শিক্ষার্থী। তারা হলেন, শাহরিয়ার আবেদিন, কাজল দাস, আব্দুল্লাহ আর রাফি এবং আরেকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। বাকি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ জন এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, দুইজন জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং দুইজন মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে শনিবার দুপুর দুইটা ৫০ মিনিটের দিকে প্রতীকী লাশ নিয়ে কাফনের কাপড় পরে মৌন মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। প্রতীকী লাশ নিয়ে কাফনের কাপড় পরে মৌন মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে অবস্থান নিয়ে লাশ মাঝে রেখে গোল হয়ে বসে নীরবতা পালন করেন। এরপর আবার সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করা হয়। এরমধ্যেই রাত ৮টা থেকে গণঅনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন তারা। প্রাথমিকভাবে আরো তিন শিক্ষার্থী গণঅনশনে যোগ দিয়েছেন।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের এই অবস্থা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের। আমি অনুরোধ করে বলবো জীবন বিসর্জন দিয়ে ভিসি অপসরণের প্রয়োজন নেই। এখন তাদের জীবন বাঁচাতে শাবির সব পক্ষের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীর সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুত একটা সমাধান কামনা করছি এবং এই পরিস্থিতির জন্য দোষী কেউ থাকলে তার শাস্তি হোক।

এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছে শাবির শিক্ষকদের প্রতিনিধি দল। মধ্যরাতে ভার্চুয়ালি শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলেন মন্ত্রী। কোনো সমাধান আসেনি এখনো। রোববারও এ বিষয়ে আরো আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে শিক্ষামন্ত্রী বারবার অনশন ভাঙার কথা বললেও সময় চেয়েছেন শিক্ষার্থীরা এবং তাদের দাবিতে অনেকটা অনড় তারা। আলোচনার পাশাপাশি অনশন চালিয়ে যাবেন।