আধাপাকা ধান কেটে লোকসানের শঙ্কায় কৃষক

আধাপাকা ধান কেটে লোকসানের শঙ্কায় কৃষক

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
ভারতে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের নদ-নদী এবং হাওরের পানি বেড়ে তলিয়ে গেছে জেলার সাতটি উপজেলার ১৪টি হাওরের বোরো ফসল। অন্যদিকে প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে, ১৭ এপ্রিলের মধ্যে বন্যা হতে পারে। তাই কোনো উপায় না পেয়ে কাঁচা-আধাপাকা ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষক। যদিও যে ধান কাটা হচ্ছে তার চার ভাগের তিন ভাগই নষ্ট। কৃষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, এ বছর হয়তো লোকসানের মুখে পড়তে যাচ্ছেন তারা।

জেলার ১২টি উপজেলায় চলতি বছর ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। এতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ১৩ লাখ টন। এর বাজারমূল্য সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার মতো। এরই মধ্যে জেলা সদর, দিরাই, শাল্লা, ধর্মপাশা, তাহিরপুর উপজেলাসহ অধিকাংশ উপজেলার ১৪টি হাওরের বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে বোরো ফসল। এতে হাওরের হাজার হাজার হেক্টর জমির কাঁচা ও আধাপাকা ধান ডুবে গেছে। বিভিন্ন উপজেলায় ফসলরক্ষা বাঁধ রক্ষায় কৃষকরা স্বেচ্ছায় সংস্কার কাজ করছেন। জরুরি অবস্থা মোকাবেলার জন্য জিও ব্যাগ ও সিনথেটিক বস্তায় মাটি ভরে রাখা হচ্ছে।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ১১ এপ্রিল পর্যন্ত হাওরের ৫ হাজার ১০ হেক্টর জমি ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যা সম্পর্কিত বিশেষ প্রতিবেদন তথ্য অনুযায়ী ১০ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তত্সংলগ্ন ভারতের আসাম (বরাক অববাহিকা) এবং মেঘালয় প্রদেশে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা, সোমেশ্বরী, ধনু-বাউলাই নদ-নদীগুলোর পানি বেড়ে কয়েকটি পয়েন্টে বিপত্সীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে এ সময়ের শেষার্ধে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার কতিপয় স্থানে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগাম বন্যার ঘোষণায় ফসল তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

খরচার হাওরের কৃষক আলী আসকর বলেন, প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে যে ১৭ এপ্রিলের মধ্যে আগাম বন্যা হতে পারে। তাই দ্রুত ধান কাটতে হবে। অথচ হাওরে ধান এখনো পাকেনি। ধান পাকতে আরো ১৫-২০ দিন সময় লাগবে। এ অবস্থায় ধান কেটে ফেলা হলে চার ভাগের এক ভাগ হয়তো কাজে লাগবে।

হাওরের কৃষকরা আক্ষেপ করে বলেন, প্রথমে খরা, এরপর পোকার আক্রমণ। সেটার রেশ কাটতে না কাটতেই ঢলের পানিতে হাওর তলিয়ে যাচ্ছে। এত কষ্ট করে ফলানো ফসল গোলায় তুলতে না পারার চেয়ে কষ্ট আর কিছুতে নেই। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে টিকে থাকার চিন্তায়ই দিন পার করতে হচ্ছে তাদের। সেজন্য সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণও চেয়েছেন হাওরের কৃষকরা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশরাফুল সিদ্দীকী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী ১০ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতের মেঘালয় ও আসামে ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে  সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি এবং আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। সেই প্রস্তুতি হিসেবে বাঁশ, বস্তা পর্যাপ্ত পরিমাণে সংরক্ষণ করা হয়েছে।  কোনো জায়গায় বন্যা বা বাঁধে ফাটল দেখা দিলে কৃষকদের নিয়ে তা মোকাবেলার প্রস্তুতি আমাদের আছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা দেয়া আছে, যতক্ষণ পর্যন্ত কৃষকদের ফসল কাটা না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত বাঁধকে রক্ষা করতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আশা করছি কৃষকরা তাদের স্বপ্নের বোরো ফসল হাসিমুখে গোলায় তুলতে পারবেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, ১১ এপ্রিল পর্যন্ত জেলার ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে হাওরে স্বল্পমেয়াদি ধানের চাষ শুরু করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ব্রি-২৮ জাতের ধানের পরিবর্তে উন্নত ফলনশীল ব্রি-৪৮, ব্রি-৮৮ জাতের ধান চাষাবাদ করতেও তাদের আমরা পরামর্শ দিচ্ছি। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কৃষকদের আতঙ্কগ্রস্ত না হতে পরামর্শ দিচ্ছেন। হাওরের বোরো ধান ৮০ শতাংশ পর্যন্ত পাকলেই তা কেটে ফেলতে বলা হচ্ছে। আমরা আশা করছি যদি ১৭ এপ্রিলের মধ্যে পানি না বাড়ে, তাহলে আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা তা অর্জন করতে পারব।

এ বছর ধান কাটার জন্য শ্রমিক সংকট হবে না বলেও জানান তিনি। এ কর্মকর্তা বলেন, বাইরে থেকে শ্রমিক আসতে শুরু করেছে। পাশাপাশি অন্যবারের তুলনায় কম্বাইন হারভেস্টারের সংখ্যাও বেশি। আমাদের কাছে চার শতাধিক হারভেস্টার মেশিন আছে। বিভিন্ন উপজেলায় এ মেশিন ব্যবহার করে ধান কাটাও শুরু হয়েছে।