আবারো ৫ বছরের জন্য ক্ষমতায় শি জিনপিং, চীনে নতুন ইতিহাস

আবারো ৫ বছরের জন্য ক্ষমতায় শি জিনপিং, চীনে নতুন ইতিহাস

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
বিশ্বের সবচেয়ে বড় কমিউনিস্ট দল চায়না কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কংগ্রেস শেষ হয়েছে আজ। শনিবার কংগ্রেস শেষে আবারও ৫ বছরের জন্য কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ ফোরাম পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির (পিএসসি) প্রধান হয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ফলে তিনিই ফের প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে চীনের রাজনীতিতে নতুন ইতিহাস তৈরি হল। মাও সে-তুংয়ের পর দেশটির সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে আবির্ভুত হলেন শি জিনপিং।

এই নিয়ে টানা তৃতীয় বার সিপিসির পলিটব্যুরো কমিটির প্রধানের পদে এলেন ৬৯ বছর বয়সী জিনপিং। প্রতি ৫ বছর পর পর কংগ্রেসে অনুষ্ঠিত হয় চীনের কমিউনিস্ট পার্টিতে। সেই হিসেবে গত ১০ বছর ধরেই পার্টির সর্বোচ্চ ফোরামের প্রধান হিসেবে আছেন শি জিনপিং।

কমিউনিস্ট শাসিত চীনের সংবিধান অনুযায়ী, পার্টির ২৫ সদস্যবিশিষ্ট পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রধানই দেশটির রাষ্ট্রপতি হন। শি জিনপিং তৃতীয় বারের মতো এই কমিটির প্রধান হওয়ায় নিশ্চিতভাবেই আরও ৫ বছর চীনের প্রেসিডেন্ট থাকছেন তিনি। এমনকি তিনি চাইলে আজীবনও চীনের রাষ্ট্রপ্রধান পদে থাকতে পারবেন। এমনকি অনেকেই মনে করেন যে, ৬৯ বছরের শি জিনপিং হয়তো আজীবনের জন্য ক্ষমতা ধরে রাখবেন।

পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রধান নির্বাচিত হলেও এই কমিটির বাকি সদস্যরা শনিবার নির্বাচিত হননি। রবিবার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হবেন পলিটব্যুরো সদস্যরা। পলিটব্যুরো থেকে হবে ৭ সদস্যের স্ট্যান্ডিং কমিটি। চীনের সর্বসময় ক্ষমতার অধিকারী এই কমিটি।


শি জিনপিংয়ের জন্ম ১৯৫৩ সালের ১৫ জুন, রাজধানী বেইজিংয়ে। তবে তার পৈত্রিক নিবাস চীনের হুনান প্রদেশের তেংচু জেলার শিয়িং শহরে। জিনপিংয়ের বাবা শি জোংশুন সিপিসির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান ও শীর্ষ নেতা মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট গেরিলা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন। পরে কমিউনিস্ট সরকারের উপপ্রধানও হন তিনি।

বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ১৯৭১ সালে ১৮ বছর বয়সে সিপিসির অঙ্গসংগঠন কমিউনিস্ট ইউথ লীগে যোগ দেন শি জিনপিং। চার বছর ইউথ লীগে কাজ করার পর ১৯৭৫ সালে মূল পার্টি সিপিসির সদস্যপদ পান তিনি। ওই বছরই চীনের বিখ্যাত কিংহুয়া বিশ্ববিধ্যালয়ে রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের স্নাতক শাখায় ভর্তি হন; এবং ১৯৭৯ সালে ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৭৫ সালে সিপিসির সদস্যপদ পাওয়ার পর পার্টির আঞ্চলিক শাখা প্রধান হিসেবে ২০০২ সাল পর্যন্ত চীনের চারটি প্রদেশে কাজ করেছেন জিনপিং। এই প্রদেশগুলো হলো শ্যাংসি, হুবেই, ফুচিয়েন ও চচিয়াং। তারপর ২০০২ সালে সিপিসির দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ পান জিনপিং। সেই পথ ধরেই ২০০৭ সালে সিপিসির পলিটব্যুরো সদস্য ও পরে চীনের রাষ্ট্রপতি হন তিনি।

মূলত তার শাসনামলেই চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিতি পায়। ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সংস্কারের পাশাপাশি সিপিসিকে শক্তিশালী করতেও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।

কমিউনিস্ট বা মার্কসবাদী রাজনীতির বিকাশেও মৌলিক অবদান রয়েছে তার। বর্তমানে চীনে যারা মার্কসবাদী রাজনীতি করেন, তাদের সবাইকে কার্লমার্কস, ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস, লেনিন ওমাও সে তুংয়ের পাশাপাশি শি জিনপিংয়ের রচনাবলীয় পড়তে হয়।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, শির নতুন দফার শাসনামলে চীনে কর্তৃত্ববাদী শাসন আরো শক্ত হবে। তাদের মতে, শির শাসনাধীনে চীন পুরোমাত্রায় একটি একনায়ক রাষ্ট্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মাও সে তুংয়ের সময় যেমন একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এখনও পরিস্থিতি পুরোপুরি তেমন না হলেও চীন সেদিকেই এগুচ্ছে।

চীনা সমাজতন্ত্রের স্বরূপ কী হওয়া উচিৎ সে সম্পর্কে শি জিনপিংয়ের নিজস্ব ধ্যান-ধারণা রয়েছে। তার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শনের মূলে রয়েছে দৃঢ় জাতীয়তাবাদ। ব্যক্তি খাতের ব্যবসা নিয়ে তিনি সন্দিহান। শি জিনপিংয়ের চিন্তাধারাই দলের জন্য অনুসরণীয় দর্শন হয়ে পড়তে পারে।