ঈদের ছুটিতে মৌলভীবাজারে পর্যটকদের ঢল

ঈদের ছুটিতে মৌলভীবাজারে পর্যটকদের ঢল

মৌলভীবাজার সংবাদদাতাঃ
পর্যটন খ্যাত মৌলভীবাজার জেলায় দর্শনীয় স্থান, বিনোদন পার্ক, পর্যটন স্পট,  বিভিন্ন চা-বাগান, হাওরে সুন্দর্য্য উপভোগ করতে পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের উপছে পড়া ভীড় ছিল।

ঈদুল ফিতরের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মৌলভীবাজারে রেকর্ড পরিমাণ পর্যটকদের আগমন ঘটেছে বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া স্থানীয় লোকজনও পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দিনভর ঘুরে বেড়িয়েছেন জেলার মাধবকুন্ড জল প্রভাত, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেইক সহ বিভিন্ন চা-বাগানগুলোতে।

গত দুইটি বছর করোনাভাইরাসের কারণে ঈদসহ বিভিন্ন সময়ে পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো অনেকটা বন্ধ ছিল। কিন্তু এবার তা নেই। তাই এবার মৌলভীবাজারে পর্যটকরা যেন বাঁধনহারা।

ঈদের আগেই সংশ্লিষ্টরা জানিয়ে বলেছিলেন- পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে মৌলভীবাজারের পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় থাকবে। ঈদ পরবর্তী চার দিন (বুধ থেকে শনিবার পর্যন্ত) স্থানীয় পর্যটকসহ প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার পর্যটক পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় উপস্থিত থাকবেন।

ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ঈদের দিন বিকেল থেকেই স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক  আসতে শুরু করে মৌলভীবাজারে আবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত মাধবকুন্ড, কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, ছায়া নিবিড় পরিবেশে অবস্থিত নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর, বিভিন্ন উপজেলায় টিলাঘেরা সবুজ চা বাগান, খাসিয়া পল্লী, ঝর্ণাধারা হামহাম জলপ্রপাত, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, শিল্পকলা সমৃদ্ধ মণিপুরীসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা, শ্রীমঙ্গলের নীলকণ্ঠের সাত রংয়ের চা, আন্তর্জাতিক মানের হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান, চা গবেষণা কেন্দ্র, কুলাউড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাববাড়ী, মুরইছড়া ইকোপার্ক, গগণ ঠিলা, দোলন চাপা ইকোপার্ক, মৌলভীবাজার সদরের বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, মুন ব্যারেজ, রাজনগরের কমলারানীর দিঘী সহ জেলার বিভিন্ন চা বাগান জীবনধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই জনপদে। 

মাধনকুন্ড জলপ্রভাতে ঘুরতে আসা কলেজ ছাত্র রায়হান ইসলাম নাহিদ বলেন, দীর্ঘ দুই বছর করোনার কারণে পর্যটন স্পট বন্ধ ছিল তাই ঘুরতে পারিনি। এবার বন্ধুদের সাথে ঘুরতে এসেছি অনেক ভাল লাগছে। আর মাধবকুন্ড জলপ্রভাত দেখতে এসে আরো খুব ভাল লেগেছে।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যোনে ঘুরতে আসা সালমা আক্তার, জুবেল মিয়া ও শাহীন আহমদ বলেন, দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার কারনে কোথায়ও ঘুরতে যেতে পারিনি। এ বছর উন্মুক্ত ভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘোরতে পারছি। খুব আনন্দ লাগছে।
জানা যায়, ঈদের আগ থেকেই পর্যটকেরা হোটেল বুকিং শুরু করেন। ঈদে উপলক্ষে মৌলভীবাজার হোটেল-মোটেলগুলোর শতাভাগ বুকিং হয়েছে। 

এদিকে, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, জেলা পুলিশ পর্যটনকেন্দ্রে  ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া সাদাপোশাকেও নিযুক্ত রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

এছাড়াও পর্যটনকেন্দ্রের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো চিহ্নিত করে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থার পাশাপাশি পর্যটকদের সতর্ক করতে লাল নিশানা কিংবা নির্দেশনামূলক বোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।

লাউয়াছড়া ইকো টুরিস্ট গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. আহাদ মিয়া বলেন, ঈদের ছুটিতে লাউয়াছড়াসহ সব পর্যটনকেন্দ্রে প্রচুর পর্যটকের আগমন হয়। ঈদের দিন বৃষ্টি থাকলেও পর্যটকের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো ছিল। কিন্তু ঈদের পরের ৭দিন পর্যন্ত পর্যটক বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, এ ঈদের অন্যান্য সময়ের তুলনায় পর্যটকের সমাগম অধিক ঘটেছে। তবে ঈদে পর্যটকদের উপস্থিতি সব সময়েই বেশি হয়ে থাকে। মেঘ-বৃষ্টি উপেক্ষা করেও আগত অত্যাধিক পর্যটকের কারণে কিছুটা বিঘ্ন হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ভ্রমণ করার জন্য পায়ে হাঁটার তিনটি ট্রেইল পথ রয়েছে। দর্শনার্থীরা এই ট্রেইল ঘুরেই চলে যান। এখানে গাইডরাও রয়েছে, এদের বলে দেওয়া হয়েছে যাতে পর্যটকরা এর বাইরে ও কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে যাতে বন ও পরিবেশের ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। 
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, পর্যটন স্পটে যাতে কোন পর্যটন হয়রানির শিকার না হন এ জন্য স্পটগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।