উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মাঝে হাওরে চলছে বোরো ধান কাটা

উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মাঝে হাওরে চলছে বোরো ধান কাটা

তাহিরপুর সংবাদদাতা ॥ সপ্তাহব্যাপী ধরে প্রতিদিন রাতে বৃষ্টি হয়, সেই সাথে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং অস্বাভাবিকভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধ ভেঙে যে কোনো সময় একদিনেই তলিয়ে যেতে পারে তাহিরপুর উপজেলার শনি, মাটিয়ানসহ কয়েকটি হাওরের বোরো ধান। এই অবস্থায় কৃষকরা কষ্টের ফসল মাঠে ফেলে রাখতে চান না। উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে হাওরের ধান গোলায় তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন কৃষকরা। তবে ধান কাটা শ্রমিক সঙ্কটের পাশাপাশি শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বেশি হওয়ায় হতাশ কৃষকরা।

সরেজমিনে তাহিরপুর উপজেলার সর্ববৃহৎ শনি ও মাটিয়ান হাওর ঘুরে দেখা যায়, কৃষকদের নিজ বাড়ির সম্মুখে খলায় ধান কাটা, ধান মাড়াই, ধান শুকানোসহ বোরো ধান নিয়ে কৃষকদের ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে। 

পবিত্র মাহে রমজান মাস হওয়ায় শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে পারলেও সেই ধান জমি থেকে মাড়াই করার স্থানে আনতে কৃষক নিজেই পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। পুরুষের সঙ্গে সমানতালে মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন নারী ও শিশুরা।

শ্রমিক ধান কাটছেন এবং পাশের খালি জায়গায় রাখছেন।  পুরুষরা ধান মেশিনে মাড়াই করছেন। পাশাপাশি নারীরা ধান খলায় নিয়ে শুকানোর কাজ করছেন। 

ভাটি তাহিরপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম  জানান, তিনি ৫ হাল জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। রোজার কারণে ও বয়সের ভারে তিনি নিজে ধান কাটতে পারছেন না। ১২ জন ধান কাটার শ্রমিক লাগিয়েছেন। খাবারসহ প্রতিদিন শ্রমিকদের ৫০০ টাকা হারে দিতে হচ্ছে। ফলে ১২ জন শ্রমিকের প্রতিদিন খাবারসহ খরচ কমপক্ষে ৬ হাজার টাকা।

মাটিয়ান হাওর তীরের বড়দল গ্রামের সামায়ুন কবির ৫ বিঘা জমিতে, পুরানহাটি গ্রামের কৃষক আব্দুর রউফ প্রায় ২ একর জমিতে, রতনশ্রী গ্রামের আব্দুস সালাম ৭ একর, শামীম মিয়া ২ বিঘা জমিতে, সূর্যেরগাঁও গ্রামের সত্যরঞ্জন ২২ বিঘা জমিতে, লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষক উসমান আলী ১২ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন।

তারা প্রত্যেকেই জানান, এবার তারা বিআর-১৪, ব্রি-২৯, ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণ করেছেন। এবার চৈত্র মাস থেকে বৃষ্টিপাত হওয়ায় বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে।
গত ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ থেকে ধান কাটা শুরু করেছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। তবে ধান কাটা শ্রমিকের খরচ বেশি হওয়ায় তারাও হতাশ। পয়লা বৈশাখ থেকে প্রায় প্রতিদিন রাতে ভারি বৃষ্টিপাত ও শিলাবৃষ্টি হওয়ায় ধানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। 
কৃষক সেলিম আখঞ্জী বলেন, প্রায় প্রতি রাতেই ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। বোরো ধান যেন আরও পোক্ত হয় সেজন্য অপেক্ষা করছেন অনেকে। কিন্তু বৃষ্টি দেখে ভয় হয়। তবে উপজেলা প্রশাসনের মাইকিং ও বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ভয়ে অনেকেই বোরো ধান কিছু কাঁচা থাকতেও কেটে ফেলছেন।
অনেক কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজে গাফিলতি ও অনিয়মের কারণে আমরা উৎকন্ঠায় আছি। পানি আসার আগেই বাঁধগুলো ভালো করে তদারকি করলে এখন এমন পরিস্থিতি হতো না। 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান উদ দৌলা বলেন, চলতি মৌসুমে তাহিরপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ১৭ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোর ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রমজান মাস থাকায় বোরো ধান কাটতে শ্রমিক সংকট কিছুটা থাকলেও সরকার ভর্তুকিতে ধান কাটার মেশিন ( কম্বাইন্ড হারভেস্টার) দেওয়ায় এখন আর শ্রমিক সংকট নেই বললেই চলে । 
কৃষিবিভাগ কৃষকদের ধান কাটা শ্রমিক দেয়ার পাশাপাশি ধান কাটা ও মাড়াই দিতে কৃষকদের এখন পর্যন্ত ২০টি (কম্বাইন্ড হারভেস্টার) মেশিন দেয়া হয়েছে। 
তিনি আরো জানান, ঝড়-বৃষ্টির কারণে উপজেলায় ক্ষেতের বোরো ধানের ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগে পুরো ফসল যেন নষ্ট না হয়, সেজন্য ৮০% পাকা ধান কেটে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে । বোরো চাষিদের দ্রুত ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছে।