এই সেতুটিকে কিন্তু পদ্মা সেতু মনে করে ভুল করবেন না

এই সেতুটিকে কিন্তু পদ্মা সেতু মনে করে ভুল করবেন না

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
বাংলাদেশের গর্বের পদ্মা সেতুর মতো দেখতে ভারতের আসামেও একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু রয়েছে। নাম বগিবিল সেতু। পদ্মা ও বগিবিল সেতু দেখতে কিছুটা এক হলেও এদের নকশা, উপাদান, দৈর্ঘ্য, নির্মাণ ব্যয় ও অর্থনৈতিক গুরুত্বে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এই প্রতিবেদনে পদ্মা ও বগিবিল সেতুর তুলনামূলক কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো-

বগিবিল সেতু

আসামের ডিব্রুগড়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর তৈরি করা হয়েছে সেতুটি। এটি দেশটির দীর্ঘতম দোতলা সেতু। এর দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার। সেতুটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৫ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে সেতুটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, সেতুটিতে কোনো নাট-বল্টু ব্যবহার করা হয়নি সেতুর স্টিলের কাঠামোটি তৈরি করতে। পুরোটাই ওয়েল্ডিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে। যা ভারতে মধ্যে প্রথম।১৯৯৭ সালে বগিবিল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া। ২০০২ সালে রেলের ছাড়পত্র পাওয়ার পরই নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২১ বছর সময় লেগেছে সেতুটি তৈরি করতে।

আধুনিক স্থাপত্য ও প্রযুক্তির মিশেলে ব্রহ্মপুত্রের ওপর তৈরি করা হয়েছে বগিবিল সেতু। দোতলা এই সেতুর উপরের তলা দিয়ে চলে বাস, লরি, ট্রাক ইত্যাদি যানবাহন। আর নীচ দিয়ে চলে ট্রেন। যান চলাচলের জন্য বগিবিল সেতুতে তিনটি লেন রয়েছে। আর ট্রেন চলাচলের জন্য রয়েছে ডাবল লাইন।

আসামের ডিব্রুগড় জেলার সঙ্গে ধেমাজি জেলার সংযোগ স্থাপন করেছে এই বগিবিল সেতু। এই সেতুর কারণে দুই জেলার মধ্যে রেলপথে দূরত্ব ৫০০ কিলোমিটার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০০ কিলোমিটার। রেল সফরের সময়ও কমেছে প্রায় ১০ ঘণ্টা। দীর্ঘায়ুর জন্য সেতুটিতে ইলেকট্রিক আর্ক ওয়েল্ডিং টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। ১২০ জন ইঞ্জিনিয়ার ও ৩০০ ইউরো-সার্টিফায়েড ওয়েল্ডারের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই বগিবিল।

রিখটার স্কেলে ৭ তীব্রতার ভূমিকম্প সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে সেতুটির। আসামে ব্রহ্মপুত্রের ওপর এটি চতুর্থ রেল-রোড সেতু। আসাম-অরুণাচল সীমান্ত থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে এই সেতু। সীমান্তের খুব কাছাকাছি হওয়ায় অবস্থানগত দিক থেকে এর গুরুত্ব অপরিসীম। ভারত-চীন সীমান্ত সেনা সরঞ্জামও আসামে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পদ্মা সেতু

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো হলো পদ্মা সেতু। নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এটি দেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হয়েছে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ বাড়বে।

একই সঙ্গে রেল ও গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে এ সেতুতে। নির্মাণে মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু তৈরিতে মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে কংক্রিট, স্টিল। সেতুটি রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকতে সক্ষম।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। খরস্রোতা পদ্মা নদীতে নির্মিত হয় স্বপ্নের এ সেতু। ২০১৭ সালে পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হতে শুরু করে পদ্মা সেতুর কাঠামো। এরপর একে একে ৪২টি পিলারে বসানো হয় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান। সেতুটি পুরোপুরি দৃশ্যমান হয় ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর।

বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু আগামী ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচলের দিন থেকে টোল আদায় করা হবে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে, পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে বড় বাসে ২ হাজার ৪০০ টাকা এবং মাঝারি ট্রাকে লাগবে ২ হাজার ৮০০ টাকা।