এক স্কুলে ৭ শিক্ষার্থী, ৫ শিক্ষক

এক স্কুলে ৭ শিক্ষার্থী, ৫ শিক্ষক

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের খয়ের বাগান এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় খয়ের বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু দীর্ঘ ৩২ বছরেও তেমন আলো ছড়াতে পারেনি বিদ্যালয়টি। মাত্র ৫-৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে সেখানকার শিক্ষা কার্যক্রম। ৫-৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে বিদ্যালয়টিতে ৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা দায়িত্ব পালন করছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোতাহার হোসেন ও স্কুল কমিটির সভাপতি নজরুল খান সম্পর্কে আপন মামা-ভাগ্নে। তাদের অবহেলা ও দুর্নীতিতে স্কুলটির এই দুর্দশা। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের টাকা ও খাতায় ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করেন তারা। স্কুলে শিক্ষার্থী বৃদ্ধিতে তাদের কোনো উদ্যোগই নেই। বিদ্যালয়ে একটি টয়লেট পর্যন্ত নেই, শ্রেণিকক্ষের ভেতর অত্যন্ত নোংরা ও জরাজীর্ণ অবস্থা।

শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে আসেন না, ক্লাস হয় না বললেই চলে। মাঝে মধ্যে এসে ঘুমিয়েই দিন পার করে চলে যান শিক্ষকরা। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান তলানিতে। এজন্য অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পাশের কিন্ডার গার্ডেনে ভর্তি করান। অথচ সরকারি বিদ্যালয়টিতে বসে বসে শিক্ষকরা বেতন নিচ্ছেন।

স্থানীয় সবুজ হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক ও স্কুল কমিটির সভাপতি সম্পর্কে আপন মামা-ভাগ্নে হওয়ায় নিজেদের ক্ষমতা বলে যা ইচ্ছে তাই করে। কেউ কিছু বললেই হুমকি-ধমকি দেন। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের টাকা তারাই ভাগবাটোয়ারা করে নেন। যদি জিজ্ঞাসা করা যায়- তারা নিজেরাই কবে স্কুলে গেছেন হয়তো ঠিক মতো বলতে পারবেন না। তাদের দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে আমাদের স্কুলটির এই দুর্দশা।

এ ব্যাপারে খয়ের বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, ৫-৭ জন শিক্ষার্থীর বিষয়টি সঠিক নয়, আমাদের এখানে ১১০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। করোনাকালে দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলে-মেয়েরা স্কুলবিমুখ হয়েছে। মাত্র কয়েকজন ছাড়া কেউ স্কুলে আসছে না। আমরা তাদের খোঁজখবর নিয়ে আবারও স্কুলে নিয়ে আসার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আশা করছি খুব শিগগিরই স্কুলে তাদের ফিরে আনতে পারব।

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক বলেন, কোনো টাকা আত্মসাৎ করা হয়নি। এটা সরকারি স্কুল। এখানে ডকুমেন্ট হিসেবে কাজ হয়। এখানে অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগই নেই। আর বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও নিয়মিত স্কুল করেন। শিক্ষার্থী কম থাকায় কেউ কেউ হয়তো এক-দুইদিন অনুপস্থিত থাকেন।

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন স্কুল কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম খানও। তিনি আক্ষেপ নিয়ে বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই থেকেই বিদ্যালয়টি অবহেলিত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই স্কুলে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন মোকছেদ প্রামাণিক। দীর্ঘকাল দায়িত্ব পালন করলেও স্কুলের উন্নয়নে তিনি কিছুই করেননি। আর শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারাও কোনো দিন খোঁজখবর নেননি। আমাদের চেয়ে তাদের দায়িত্বই তো বেশি, তারা যদি স্কুলের খোঁজখবর না নেন, স্কুলের উন্নয়নে কাজ না করেন, তাহলে স্কুলের এই অবস্থা তো হবেই।

এ ব্যাপারে পাবনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার মনছুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে ওই বিদ্যালয়ের খোঁজখবর নিতে দুই দফায় প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। তারা প্রতিবেদন দিলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।