এবার মুখ খুললেন রেলমন্ত্রী!

এবার মুখ খুললেন রেলমন্ত্রী!

রয়েল ভিউ ডেস্ক:

রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ করার অপরাধে ৩ যাত্রীকে জরিমানা করার জন্য টিটিইকে বরখাস্তের ঘটনা এখন আলোচিত। দেশজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এ বিষয়ে এবার মুখ খুললেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন নিজেই।

শনিবার (৭ মে) গণমাধ্যমকে তিনি জানান, বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীরা আমার আত্মীয় নন। ওদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে কেউ হয়তো সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেছে। ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।

এ ঘটনার কিছুই তিনি জানতেন না দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন শনিবার সকালেই। তিনি রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে শুনেছেন ওই টিটিই বিনা টিকেটের যাত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছেন। ফলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, রেলের অফিশিয়াল কার্যক্রমের সঙ্গে মন্ত্রীর কোনো সংযোগ নেই। ঘটনার সঙ্গে মন্ত্রীর কোনো আত্মীয় জড়িত নন। রেল কর্মকর্তারা ওই টিটিইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে মন্ত্রী কিছুই জানতেন না।

মন্ত্রী বলেন, আমরা রেলসেবা বাড়াতে কাজ করছি। বিনা টিকেটের যাত্রী যদি মন্ত্রীর আত্মীয়ও হয়, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। একইভাবে কোনো রেল কর্মকর্তাও যদি যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে তাকেও শাস্তি পেতে হবে। যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার কারণে টিটিইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মন্ত্রীর আত্মীয়ের নাম জড়িয়ে যা প্রচার করা হচ্ছে তা মিথ্যা বলেও দাবি করেন নুরুল ইসলাম সুজন।

রেলমন্ত্রী বলেন, মাঝেমধ্যেই টিটিইরা বিভিন্নভাবে যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন এমন অভিযোগ আমরা প্রায়ই পাচ্ছি। তবে লোকবল সংকটের কারণে আমরা এ সবের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে একেবারেই ছাড় দিলে রেলের দুর্নাম হয়ে যায়। তাই টিটিইদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়।

এর আগে, রেলওয়ে পাকশী বিভাগের একজন ভ্রাম্যমাণ টিকেট পরিদর্শককে (টিটিই) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। অভিযোগ পাওয়া গেছে, রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকেটে ট্রেনে ভ্রমণকারী ৩ যাত্রীর কাছ থেকে জরিমানাসহ টিকেটের টাকা আদায় করায় তাকে বরখাস্ত করা হয়।

তবে রেলওয়ে জানিয়েছে, যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করায় তাকে বরখাস্ত করা হয়।

বরখাস্ত টিটিই মো. শফিকুল ইসলাম রেলওয়ে পাকশী বিভাগের ঈশ্বরদী সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। বরখাস্ত হওয়ায় গতকাল শুক্রবার তিনি কাজে যোগ না দিলে ঘটনাটি জানাজানি হয়।

ঘটনার বিষয়ে শফিকুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসে ঈশ্বরদী থেকে ৩ জন যাত্রী বিনা টিকেটে এসি কেবিনে উঠে বসেন। তারা নিজেদের রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। শফিকুল ওই ৩ যাত্রীকে নন-এসি টিকেটের ভাড়া হিসেবে ৩৫০ টাকা করে ১ হাজার ৫০ টাকা নিয়ে নন-এসির টিকেট দেন।

শফিকুল ইসলাম বলেন, তাদের কাছ থেকে মোট ১ হাজার ৫০ টাকা ভাড়া আদায় করেছি এবং তার রিসিটও দিয়েছি। এ সময় তাদের সঙ্গে আমি কোনো খারাপ আচরণ করিনি এবং তারাও কিছু বলেননি। খারাপ আচরণ করার তো প্রশ্নই ওঠে না।

এ সময় রেলের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন জানিয়ে শফিকুল বলেন, তারা এসি কামরাতে বসেই ঢাকা এসেছেন। বিষয়টি নিয়ে ট্রেনের মধ্যে কোনো সমস্যা না হলেও পরবর্তীতে ঢাকা পৌঁছানোর পর ওই যাত্রীরা আমার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অসদাচরণের অভিযোগ করেছেন বলে শুনেছি এবং এরপর আমাকে বরখাস্ত করা হয়।

টিটিই শফিকুল ইসলামকে বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

তিনি জানান, এ ঘটনায় মো. ইমরুল কায়েস প্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষের কাছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ৫ মে দিবাগত রাত সোয়া ২টায় ঈশ্বরদী স্টেশনে গিয়ে টিকেট পাননি অভিযোগকারী। তখন ট্রেন চলে আসায় তিনি ও তার সঙ্গে থাকা অপর ২ জন ট্রেনে উঠে পরেন।

অভিযোগে তিনি লিখেছেন, আমিসহ আমার ছোট ২ মামা তারাহুরা করে ট্রেনের যেখানে জায়গা পাব সেখানেই বসে পরব এমন অবস্থায় ট্রেন ছাড়ার অবস্থায় আমরা কোনোমতে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে দরজার সামনে উঠে পড়ি। ট্রেন চলার মিনিট ৩০ এর মধ্যে টিটিই আমাদের সামনে টিকেট চাইলো। আমি বলি ট্রেনে উঠতে তাড়াহুড়াতে টিকেট কাটতে পারি নাই।

‘বললেন কয়জন? আমি বলি, ৩ জন। তখন বলেন, ৫০০ করে ১৫০০ টাকা দেন। আমি তাকে টাকা দেই এবং বলি সাধারণত ৩০০ টাকা ভাড়া আপনি ৫০০ করে নিলেন। এবার টিকেট দেন ১৫০০ টাকার। উনি বলেন টিকেট চাইলে ৩৬০০ করে ৩ জন দেন তাহলে টিকেট দিচ্ছি।

‘আমি বললাম, টেক্সটাইলে চাকরি করি আমার পক্ষে এত টাকা দেয়া সম্ভব না। আপনি ১৫০০ টাকার টিকেট দেন, এ কথা বিনয়ের সাথে বলেছি। হঠাৎ করে উনি অনেক উচ্চ স্বরে বলেন যে, ট্রেন কি তোর বাপের। লাথি দিয়ে দরজা দিয়ে বাহিরে ফেলে দেবো। তারপর, বাবা-মা তুলে মুখে যা আসে তাই বলে আমাকে গালি দেন।

এ ঘটনায় তিনি মর্মাহত উল্লেখ করে লিখেছেন, আমি বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতম কর্মকর্তাদের জানাচ্ছি টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

আবেদনে মো. ইমরুল কায়েস প্রান্তর সই রয়েছে। তবে, তার এবং তার সঙ্গে থাকা অপর ২ জনের সুনির্দিষ্ট পরিচয় জানা যায়নি।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণের জন্য গত ৩ মাস আগে টিটিই শফিককে পাকশী দপ্তরে বুক অফ করা হয়। তারপর তিনি যাত্রীদের সঙ্গে এমন আচরণ করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর তাকে কর্মস্থলে ফেরত পাঠানো হয়।

গতকালের ঘটনায় ব্যাখ্যার জন্য টিটিই শফিককে আগামী রোববার ডিসিও পাকশী দপ্তরে তলব করা হয়েছে জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, সরকারি পরিবহণ কর্মকর্তা পাকশীকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এই ঘটনা তদন্তে।