কে যাচ্ছেন বঙ্গভবনে

কে যাচ্ছেন বঙ্গভবনে

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
কে হচ্ছেন বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি! এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোর আলোচনা চলছে। পাশপাশি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রপতি পদে থাকা মোঃ আব্দুল হামিদ বিদায় নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই পদের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক বোদ্ধামহল ও দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। কে যাচ্ছেন বঙ্গভবনে! টক অব দ্য কান্ট্রি! অনেকে বলছেন, বিরোধী দলগুলোর রণকৌশল অনেকাংশে নির্ধারিত হবে বিষয়টিকে লক্ষ রেখে। আসন্ন নির্বাচনি সংকট মোকাবিলায় কিছুটা হলেও ভরসা করার মতো জায়গা বঙ্গভবনের দায়িত্ব কে পাচ্ছেন, আজকালের মধ্যে তা ‘ফায়সালা’ হচ্ছে হয়তো।

রাজনৈতিক সচেতন মহল মনে করছে, আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য রাজনৈতিক সংকট সমাধান, রাজনৈতিক দলগুলোকে চূড়ান্ত সমন্বয় করা ও নির্বাচনকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রে একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে— ১. রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে এ পদ শূন্য হলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে অনুযায়ী আগামী ২৪ জানুয়ারি থেকে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে এই নির্বাচন করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি পদে দুবারের বেশি থাকার সুযোগ নেই। তাহলে আইন সংশোধন করতে হবে।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি গণমাধ্যমে বলেছেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়ে আইন সংশোধনের ইচ্ছা সরকারের নেই। এ কারণে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ পরবর্তী মেয়াদে আর থাকছেন না- বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত। তাই সর্বোচ্চ এই গুরুত্বপূর্ণ এই পদের জন্য নতুন কাউকে নির্বাচন করতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। যেহেতু জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা রয়েছে, এ কারণে বিষয়টি তাদের ওপর নির্ভর করছে। রাষ্ট্রপতি পদের জন্য সব থেকে বেশি আলোচনায় আছেন অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমান। বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনা— এই দুজনের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার। সেই দিক থেকে তার নাম এগিয়ে রাখছেন অনেকেই। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত ছিল, তখন একাধিক প্রণোদনা ও আর্থিক সহযোগিতার ঘোষণা এবং প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই কঠিন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সঠিক পরামর্শ ও পরিকল্পনা দিয়ে তাকে সহযোগিতা করছেন উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে তার উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। ড. মশিউর রহমান ২০০৯ সাল থেকে তিন মেয়াদে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী, বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে ইআরডি সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ড. মশিউর রহমান ১৯৭২-৭৫ সাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব ছিলেন। জোট সরকারের সময় ২০০১ সালে ড. মশিউর রহমানকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত হন। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদেরও সদস্য।

খ্যাতিমান অধ্যাপক নাইয়ারা সুলতানার কন্যা উচ্চ আদালতের আইনজীবী শিরীন শারমিন চৌধুরী রাষ্ট্রপতির পদের জন্য আলোচনায় বেশ এগিয়ে আছেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংরক্ষিত সংসদ সদস্য হন এবং একই সাথে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শিরীন শারমিন চৌধুরী। ২০১৩ সালে স্পিকার আব্দুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে ৩০ এপ্রিল তিনি জাতীয় সংসদের প্রথম নারী স্পিকারের দায়িত্ব পান। সুপ্রিম কোর্টের অভিজ্ঞ আইনজীবী ও অত্যন্ত মেধাবী শিরীন শারমিন যুক্তরাজ্যের এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পিএইচডি করেন। একজন কমনওয়েলথ স্কলার তিনি। বয়সে অত্যন্ত তরুণ সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এই গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য এগিয়ে আছেন। তবে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এত তরুণ কাউকে রাষ্ট্রপতি পদে এখনো মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ।

প্রবীন রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু ১৪ দলীয় মহাজোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং মন্ত্রিপরিষদের একাধিকবারের মন্ত্রী আমির হোসেন আমু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আলোচনায় সব থেকে এগিয়ে আছেন বলা যায়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের বিষয়ে ধীরলয়ে মুখ খুলছেন। তিনি ইতিহাসের সব রাজনৈতিক সংকটের সাথে পরিচিত ও আন্দোলন সংগ্রামে সম্পৃক্ত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। ১৯৭৩ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া আমির হোসেন আমু দেশের সব রাজনৈতিক সংকটে প্রাজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন পুনঃ পুনঃ। তিনি বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংঠনের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক ৮২ বছর বয়সি বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা আমু সব দিক দিয়ে রাজনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি। আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য তাকে পিছিয়ে রাখার ন্যূনতম কারণ নেই, আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা এমনটিই মনে করেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বেশ জোরেশোরে নাম শোনা যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাবেক শিক্ষক নেতা অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের। তিনি দুই মেয়াদে ভিসির দায়িত্ব পালন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং সুধিমহলে আস্থাভাজন এক বুদ্ধিজীবী হিসেবে সমাদৃত। দুই নেত্রী কারাগারে থাকা অবস্থায় আরেফিন সিদ্দিক একজন ‍‍`ক্রাইসিস ম্যানেজার‍‍` হিসেবে গত ওয়ান-ইলেভেনের সময় রাজনৈতিক সংকটে জোড়ালো ভূমিকা রাখেন। তার নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের প্রায় সবাই সোচ্চার হয়েছিলেন। সারা দেশের শিক্ষকদের মধ্যে এর ঢেউ পড়েছিল। তার ভিসির মেয়াদকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতির সংকট অনেকাংশে কমে গিয়েছিল।

আওয়ামী লীগের টানা তিনবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাষ্ট্রপতি হওয়ার আলোচনায় বেশ এগিয়ে আছেন। নানা মহলে তার নাম শোনা যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ এই পদের জন্য । তবে রাজনৈতিক আরেকটি মহল মনে করছে, সাধারণ সম্পাদকের মতো এত বড় দায়িত্বশীল পদে বসার পর, হঠাৎ করে পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। যদিও ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমে বলছেন- তিনি ওই পদের যোগ্য নন। তবে রাষ্ট্রপতি পদে ওবায়দুল কাদের চমক হতে পারে। মুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে আলোচনায় আছেন। বর্ষীয়ান এই মন্ত্রী আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত একজন আঞ্চলিক নেতা থেকে রাজনীতির নানা ধাপ পেরিয়ে এসেছেন এই পর্যায়ে এসেছেন। তবে গাজীপুরের নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে নির্বাচন করা, বিতর্কিত ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর কে ‍‍`প্রমোট‍‍` করাসহ বেশ কিছু ব্যাপারে তাকে নিয়ে বিতর্ক আছে।

উল্লেখ্য, গত ২০১৩ সালে ১৪ মার্চ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান আব্দুল হামিদ। এরপর ২? এপ্রিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। আব্দুল হামিদ। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনর্নির্বাচিত হন তিনি।