কথিত চিশতিয়া পীরের সিলেট মিশন

কথিত চিশতিয়া পীরের সিলেট মিশন

কাউসার চৌধুরী : আব্দুল মোতালেব ওরফে রবিউল চৌধুরী। রাজধানীতে নিজেকে চিশতিয়া তরিকার পীর বলে পরিচয় দিয়ে ঠকিয়েছেন অসংখ্য মানুষকে। রাজধানীর পর এবার এই প্রতারক গণপূর্ত অধিদফতরের ঠিকাদার পরিচয়ে সিলেট থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছে। কেবল টাকা নিয়েই ক্ষান্ত হননি মোতালেব। নিয়ে গেছে দু’জনের দুটো পাসপোর্টও। প্রতারণায় সিদ্ধহস্ত এই মোতালেবকে পুলিশ এখন হন্যে হয়ে খুঁজছে। কিন্তু তার কোনো হদিস মিলছে না।

প্রতারণার শিকার আব্দুর রব পাপ্পু জানিয়েছেন, আব্দুল মোতালেব নিজেকে গণপূর্ত অধিদফতরের ঠিকাদার পরিচয় দিয়ে তার বাসায় ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। প্রথম মাসে ভাড়া দিলেও পরবর্তীতে দেই দিচ্ছি বলে ভাড়া দেননি। তাকে ওমরাহ করতে পাঠাবে বলে তার ও তার এক আত্মীয়ের পাসপোর্ট ও নগদ টাকা নিয়েছে। এভাবে আরও কয়েকজনের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা নিয়েছে। মূলত আমরা তার কথায় সরলভাবে বিশ্বাস করেছিলাম। পরে সে কৌশলে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

আর কোতোয়ালি থানার ওসি মঈন উদ্দিন অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ রকম একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। প্রতারণা করে লোকজনের কাছ থেকে টাকা ও পাসপোর্ট নিয়ে পালিয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে আরও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ তাকে গ্রেফতারের জন্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আব্দুল মোতালেব ওরফে রবিউল চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি নিজেকে গণপূর্ত বিভাগের ঠিকাদার পরিচয় দিয়ে নগরের ঝেরঝেরিপাড়াস্থ (এভারগ্রীণ ৩৭/এফ) একটি বহুতল ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। এরপর বাসার মালিকপক্ষের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে। এক পর্যায়ে বাসার মালিকের আত্মীয় আব্দুর রব পাপ্পুর ওমরাহ পালনের বিষয়েও কথা বলে মোতালেব। তার পরিচিত ট্রাভেলসের মাধ্যমে তুলনামূলক কম খরচে ওমরাহ করতে পাঠাবে বলে পাপ্পু ও তার আত্মীয় মাহবুব আলমের কাছ থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা ও উপরোক্ত দু’জনের পাসপোর্ট নিয়ে যায়। তার সন্তানকে এক কুরআনে হাফেজ তার ফ্ল্যাটে গিয়ে পড়াতেন। ওই হাফেজের ভাই ও এক আত্মীয়কে গণপূর্ত অধিদফতরে চাকরি দেয়ার কথা বলে নগদ ৭ লাখ, এক স্যানেটারি মিস্ত্রিকে গণপূর্ত অধিদফতরের লাইসেন্স করে দেবে বলে ৩২ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। এছাড়াও এক মাছ বিক্রেতার ৩৫ হাজার টাকা ও আরেক গাড়ি চালকের গাড়ি ভাড়ার ২২ হাজার টাকা এবং এক মাংস ব্যবসায়ীর গরুর ও তিনটি আস্ত খাসির টাকা পাওনা আছে। প্রতারণা করে এসব টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফ্ল্যাটের চার মাসের ভাড়া না দিয়ে কৌশলে বাসা থেকে পালিয়ে যায়।

প্রতারণার শিকার আব্দুর রব পাপ্পু জানান, বার বার বলার পর মোতালেব তাকে তার জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করেনি। কেবল মোতালেব ও তার স্ত্রীর ছবি দিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে একটি চুক্তিনামা করে।
চুক্তিনামায় তার পরিচয় উল্লেখ করা হয়, নাম : রবিউল চৌধুরী মোত্তালীব, পিতা : মৃত জাবেদ আলম চৌধুরী, গ্রাম : মুক্তিখলা, ইউনিয়ন : মুক্তিখলা, উপজেলা : বিশ্বম্ভরপুর, জেলা : সুনামগঞ্জ। কিন্তু সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় মুক্তিখলা নামে কোনো ইউনিয়ন পরিষদের নাম নেই। মুক্তিখলা নামে একটি গ্রাম থাকলেও সেটি একই উপজেলার পলাশ ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত।

এদিকে, আব্দুল মোতালেবের পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা না গেলেও সে যে, একজন বহুরূপী প্রতারক এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিজেকে চিশতিয়া পীর পরিচয়ে বহু মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে।
অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীতে নিজের ভাড়া বাসায় রাতের আধারে সুন্দরী রমনীদের নিয়ে আসর বসাতো। এসব অপকর্মের ঘটনায় ২০২১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার তাকে গ্রেফতার করেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সে হাতিয়ে নেয় নির্মাণ শ্রমিক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদও। চিশতিয়া পীর ও রাজনৈতিক পরিচয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মাস্টার রোলে চাকরি দেওয়া, রাজউকের বিভিন্ন প্রকল্পে নির্মাণাধীন ফ্ল্যাট স্বল্পমূল্যে বরাদ্দ দেওয়া, দেশের বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভার চেয়ারম্যান, মেম্বার, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, অথবা মেয়র প্রার্থীদেরকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে একেকজনের কাছ থেকে ৬ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে। তার দুই স্ত্রী আর অসংখ্য নারী ভক্ত থাকলেও এই ভ- পীর পরিচালনা করতেন ‘ঢাকা গে কমিউনিটির দু’টি ওয়েব পেজ। এর মাধ্যমে প্রায় একশ’ জন বয় ফ্রেন্ডের সঙ্গে অস্বাভাবিক ও বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হতো।’

এসব অপকর্মের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকার একাধিক থানায় মামলা রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।