বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ইউজিসির চিঠি

কারিকুলাম হালনাগাদ না করলে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ

কারিকুলাম হালনাগাদ না করলে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামগুলোর কারিকুলাম চার বছর পরপর হালনাগাদ করার নিয়ম রয়েছে। যদিও এ বিষয়ে বেশ অনীহা ও নিষ্ক্রিয়তা রয়েছে অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। তবে কারিকুলাম নিয়মিত হালনাগাদকরণে কঠোর হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। আগামী জুনের মধ্যে কারিকুলাম হালনাগাদের জন্য কমিশনে পাঠানো না হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

সম্প্রতি দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে ইউজিসি। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কমিশন অনুমোদিত প্রোগ্রামগুলোর কারিকুলাম চার বছর পরপর হালনাগাদ করার নির্দেশনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব প্রোগ্রামের কারিকুলাম এখন পর্যন্ত হালনাগাদ করা হয়নি, আউটকাম বেজড এডুকেশন (ওবিই) টেমপ্লেট অনুযায়ী সেসব প্রোগ্রামের কারিকুলাম প্রণয়ন করে অনুমোদনের জন্য আগামী ৩০ জুনের মধ্যে নির্দিষ্ট নিয়মে কমিশনে পাঠানোর জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।

ইউজিসির চিঠিতে আরো বলা হয়, ৩০ জুনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান প্রোগ্রামগুলোর কারিকুলাম হালনাগাদের জন্য কমিশনে পাঠানো না হলে সেসব প্রোগ্রামে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে।

তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলো বলছে, যেহেতু ওবিই একটি নতুন পদ্ধতি, তাই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আরো কিছুদিন সময় বাড়ানো প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদ আকতার হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ওবিই কারিকুলাম ও সেমিস্টার পদ্ধতি নিশ্চিতকরণের  উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় ও প্রয়োজনীয়। এ বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য সহকর্মী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ওবিই কারিকুলাম প্রণয়নের অগ্রগতি বেশ ভালো। তবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বিবেচনা করলে আমার মনে হয়, এ সময়সীমা ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।

ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, সিলেবাস অনুমোদন ও হালনাগাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সেটি হালনাগাদ বা অনুমোদন দেয় ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ। সিলেবাস অনুমোদন বা হালনাগাদের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কমিশন নির্ধারিত হারে ফি পরিশোধ করতে হয়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের হালনাগাদকৃত সিলেবাস অনুমোদন করতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল অনুষদ বা স্কুলের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা, ব্যবসায় প্রশাসনের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ক্ষেত্রে ২৫ হাজার এবং অন্যান্য প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে ৩০ হাজার টাকা করে ফি পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া ডিপ্লোমা বা পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমার (ছয় মাস থেকে এক বছর) ক্ষেত্রে ২০ হাজার করে ফি জমা দিতে হয়। এছাড়া তিন থেকে ছয় মাসের সার্টিফিকেট কোর্সের সিলেবাস অনুমোদন প্রক্রিয়ায় ১৫ হাজার টাকা করে ফি দিতে হয়। আর হালনাগাদের ক্ষেত্রে ফির পরিমাণ অর্ধেক।

সম্প্রতি বছরগুলোয় ওবিই কারিকুলাম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ইউজিসির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেশ জোর দেয়া হচ্ছে। ওবিই কারিকুলাম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য কয়েক দফা চিঠিও দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা প্রদানের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য ওবিই কারিকুলাম বিষয়ে প্রশিক্ষণেরও আয়োজন করে আসছে কমিশন। এছাড়া বিভিন্ন নিজস্ব উদ্যোগেও এ-বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করছে।

ওবিই কারিকুলাম প্রণয়নের জন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি টেমপ্লেট তৈরি করেছে কমিশন। গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ইউজিসির ১৫৭তম পূর্ণ কমিশন সভায় ওবিই টেমপ্লেট অনুমোদন করা হয়। ওই সময় টেমপ্লেটটি আরো পরিমার্জন এবং এর মূল্যায়ন অংশকে অধিক কার্যকর করার লক্ষ্যে পরামর্শ দেয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি ওবিই টেমপ্লেটের সংশোধিত সংস্করণ ও মূল্যায়ন অংশ চূড়ান্ত করে।

ওবিই কারিকুলাম প্রণয়নের ক্ষেত্রে কেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ বণিক বার্তাকে বলেন, অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই নির্দেশনার আলোকে কারিকুলাম আপডেট করে কমিশনে পাঠিয়েছে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কিছু প্রোগ্রামের কারিকুলাম হালনাগাদ করে পাঠিয়েছে, কিছু এখনো বাকি। অনেকে আবার এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত শিক্ষক সংকটের কথাও জানায়। সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে ভালো রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছে। আশা করছি, যারা এখনো পাঠায়নি, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেটি সম্পন্ন করবে।