ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: নতুন বাড়িতে থাকার কেউ রইল না

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: নতুন বাড়িতে থাকার কেউ রইল না

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
স্ত্রী শারমিন আক্তার সাথী ও চার বছরের মেয়ে নুসরাত আক্তার লিজা এবং বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে নতুন বাড়িতে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নিজাম উদ্দিন। বাড়ির কাজও শেষ করেছেন। শুক্রবার নতুন বাড়িতে ওঠার কথা ছিল।  তার আগেই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সব শেষ করে দিয়ে গেছে।

আহাজারি করে এসব বলছিলেন নিজামের ৭০ বছরের বৃদ্ধ বাবা আবদুল রশিদ ও মা খুরশিদা বেগম (৫২)।

সোমবার রাতে সাড়ে ১০টার দিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গাছ উপড়ে শিশু সন্তানসহ মৃত্যু হয় নিজাম উদ্দিন ও তার স্ত্রীর। নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখালে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতিকে হারিয়ে ভাবলেশহীন নিজাম উদ্দিনের বাবা-মা। কিছুতেই মানতে পারছেন না এভাবে সত্যিকারের ঝড় এসে সব লন্ডভন্ড করে দেবে তার গোছানো পরিবারটিকে।

চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট নিজাম গত পাঁচ বছর ধরে বিদেশে থাকেন। মাঝে একবার এসে বাড়ির কাজ শুরু করিয়ে আবার চলে যান। তিনি মালয়েশিয়া থেকে তিন বছর পর দেশে আসেন দু মাস আগে। বিদেশে থেকেই বাড়ির কাজ প্রায় শেষ করেছিলেন। দুই হাজার স্কয়ার ফিটের একতলা বাড়ি এখন শুধুই স্মৃতি। মেয়ে নুসরাতের ঘর সাজানোর জন্য মালয়েশিয়া থেকে এনেছিলেন শোপিস। এনেছিলেন খেলনাও। এখন পাশাপাশি তিন কবরে শুয়ে আছে নিজাম উদ্দিন ও তার স্ত্রী-কন্যা।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং নিজামের বাড়ির সব আনন্দ উড়িয়ে নিয়ে গেছে। নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল ২ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী বাড়িতে এখন নিস্তব্ধতা।

তাদের মৃত্যুর খবরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই আশপাশের গ্রাম ও দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ছুটে আসেন শেষবারের মতো এক নজর দেখতে। 

পরিবার জানায়, সোমবার রাতে খাবার খেয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলেন নিজাম, তার স্ত্রী সাথী ও মেয়ে নুসরাত। রাতে হঠাৎ ঝড়ে কড়ই গাছ উপড়ে তাদের ঘরের ওপর পড়ে। এতে চাপা পড়ে তারা গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে স্থানীয়রা গিয়ে করাত দিয়ে গাছটি কেটে তাদের উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাতেই তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন হেসাখাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার মজুমদার।

নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান মেহবুব জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে খবর পেয়েছি গাছ পড়ে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে তিনজনকে সমাহিত করার কথা জানান হেসাখাল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইকবাল বাহার।

তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, পুরো গ্রামই শোকস্তব্ধ হয়ে গেছে। মঙ্গলবার সকালে হেসাখাল হাই স্কুলে নিজাম উদ্দিন ও তার স্ত্রী-কন্যার জানাজা হয়। বাড়ির পাশের কবরস্থানে তিনজনকে পাশাপাশি সমাহিত করা হয়।