ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ঢাবি শিক্ষক বিশ্বজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ঢাবি শিক্ষক বিশ্বজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিভাগীয় একাডেমিক কমিটি। তাকে বিভাগের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে তার নামে বরাদ্দকৃত কক্ষ বাতিলসহ কয়েকটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

গত ২৯ মার্চ বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় ড. বিশ্বজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে এ সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে গণমাধ্যমকে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। একাডেমিক কমিটির ওই সভায় বিভাগের ১৮ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

সভায় গৃহীত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত একটি কপি হাতে রয়েছে।

বাংলা বিভাগ সূত্র জানায়, এর আগে গত মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনেন একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী। পরে ওই ছাত্রী বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হকের কাছেও অভিযোগ দেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ মার্চ বিভাগটির একাডেমিক কমিটির সভা ডাকা হয়। ওই সভায় বিশ্বজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

ওইদিন দুপুর ১২টার দিকে অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত বিবরণী অনুযায়ী, সভায় বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক অভিযুক্ত বিশ্বজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে একজন শিক্ষার্থীর আনা যৌন নিপীড়নের লিখিত অভিযোগটি উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি লিখিত অভিযোগপত্রটি একাডেমিক কমিটির সভায় পাঠ করে শোনান।

বিবরণীতে বলা হয়— ওই সভায় অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ তার ভুল হয়েছে বলে মনে করেন।  তিনি নিজের ভুলের জন্য একাডেমিক কমিটির কাছে ‘ক্ষমা’ ও ‘করুণা’ ভিক্ষা করেন।

এ সময় একাডেমিক কমিটির সদস্যরা তার দ্বারা সংঘটিত অতীতের বিভিন্ন যৌন নির্যাতনের ঘটনার কথা উল্লেখ করে তার এই প্রার্থনা গ্রহণ করেননি।

হাতে থাকা ওই বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়— তার ক্ষমা প্রার্থনা ও করুণা ভিক্ষার ঘটনায় তার অপরাধ স্বীকারের বিষয়টিও প্রমাণিত হয়।

পরে অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে একাডেমিক কমিটি সর্বসম্মতভাবে চারটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করেন।

সেগুলো হলো—

১. সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। (একাডেমিক কার্যক্রমের মধ্যে পড়বে সব ধরনের ক্লাস নেওয়া, পরীক্ষায় প্রত্যবেক্ষণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, এমফিল-পিএইচডি গবেষণা তত্ত্বাবধায়ন, পরীক্ষা কমিটির কাজে অংশগ্রহণ প্রভৃতি)। তাকে ভবিষ্যতে কোনো একাডেমিক কার্যক্রমে যুক্ত করা হবে না এবং সিএন্ডডি ও একাডেমিক কমিটির সভায় তাকে ডাকা হবে না। এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতেও কার্যকর থাকবে।

২. তার নামে বরাদ্দকৃত বিভাগীয় কক্ষ বাতিল করা হোক।

৩. আরও বৃহত্তর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে কি না সেটি অভিযোগকারীর সম্মতি সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।

৪. তদন্তকালীন সময়েও একাডেমিক কমিটির এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।

এদিকে, এ বিষয়ে অভিযুক্ত বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি তো কিছু জানি না। এটি তো একেবারে বিভাগের নিজস্ব বিষয়। গোপন বিষয়। আপনি পারলে এটা (নিউজ) বাতিল করে দিন।’

সার্বিক বিষয়ে বাংলা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হককে ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ ২০১৭ সালের ১১ জুন থেকে টানা চার বছর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি, নিয়োগ বাণিজ্য, কেনাকাটায় অর্থের অপচয়সহ বিভিন্ন অভিযোগে আলোচনায় ছিলেন এই অধ্যাপক।