জকিগঞ্জে বন্যায় বিশুদ্ধ পানি, শিশু খাদ্য ও শুকনো খাবারের তীব্র সংকটে ভুগছে বানবাসি মানুষ

জকিগঞ্জে বন্যায় বিশুদ্ধ পানি, শিশু খাদ্য ও শুকনো খাবারের তীব্র সংকটে ভুগছে বানবাসি মানুষ

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে বানভাসি জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ এখন বিশুদ্ধ পানি আর খাবারের তীব্র সংকটে ভুগছে। নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ডাইক উপচে পানি লোকালয়ে আসা অব্যাহত থাকায় ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা বাড়ছে। ভারতের বরাক নদী হয়ে উজানের ঢল বাংলাদেশের সুরমা-কুশিয়ারায় ঢুকছে। বরাক নদীর পানিতে জকিগঞ্জ উপজেলায় বন্য পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনের দুর্ভোগ আরো চরম আকার ধারণ করতে পারে। পানিবন্দি লোকজন বিশুদ্ধ খাবার পানি, শিশু খাদ্য ও শুকনো খাবারের সংকটে পড়েছেন। খাবার পানির অভাবে ঝুঁকি নিয়েই অনেকে দূষিত পানি পান করছেন। এতে করে পানিবাহিত নানা রোগের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা রয়েছে।

জকিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, উপজেলার প্রায় নয়টি ইউপিই বন্যা কবলিত এলাকা। পুরো উপজেলায় বন্যার পানিতে প্রায় অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বানভাসি অনেক এলাকার মানুষদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল ও শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। কিন্তু পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে পানিবন্দি লোকজন বন্যার দূষিত পানি পান করছেন।

বানবাসি মানুষের অভিযোগ, পানিবন্দি অবস্থায় থাকলেও কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। শুকনো খাবার আর বিশুদ্ধ পানির বড় সমস্যা। অনেক এলাকার নলকূপ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় খাবারের ব্যবস্থা হলেও বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র হয়েছে। বানের পানিতে বাড়ি-ঘর ডুবে যাওয়ায় অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ এসব বানভাসী মানুষদের। গৃহপালিত গবাদি পশুপাখি নিয়েও বেকায়দায় রয়েছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় শৌচাগার সমস্যায় নারী-পুরুষ চরম বিপাকে আছেন। 

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে. বন্যায় ভেসে গেছে বির্স্তীন এলাকার ফসলি জমি, পুকুর, রাস্তাঘাট ও হাট বাজার। পাশাপাশি অবকাঠামোগত ক্ষতিও বাড়ছে। সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে বানভাসী মানুষ। উপজেলার বিভিন্ন ইউপির প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বানভাসী মানুষদের মাঝে শিশু খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
সদর ইউপির রারাই গ্রামের প্রবীণ মুরব্বি আবুল খায়ের বলেন, পানিতে বাড়ির টিউবওয়েল (নলকূপ) তলিয়ে গেছে পুরো এলাকার মানুষের। নিম্নবিত্ত পরিবারের অনেক মানুষের পানি কিনে খাওয়ার মত সামর্থও নেই। বাধ্য হয়েই অনেকে বন্যার পানি খাচ্ছেন।
মুমিনপুর গ্রামের সালেহা বেগম জানান, ঘরে কোমর পানি, টিউবওয়েল পানির নিচে। খাওয়ার পানির খুব অভাব। শিশু খাদ্য ও শুকনো খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। সরকার থেকে এখনো ত্রাণ ও শিশু খাদ্য পাওয়া যাচ্ছেনা। বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণের সাথে ফিটকিরি দেয়া হলে পানি খাওয়ার সমস্যা কিছুটা কমতে পারে।

সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাওলানা আফতাব আহমদ বলেন, তাঁর ইউপির কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি। প্রথম দিকে সরকারিভাবে মাত্র দুই টন চাল পাওয়া গেছে তা অপ্রতুল। সময় সময় বানভাসি মানুষ চরম কষ্টের মধ্যে পড়ছেন কিন্তু এরপরও কোন ত্রাণ পাওয়া যাচ্ছেনা। ডাইকের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ রক্ষায়ও কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। ত্রাণের তালিকায় বিশুদ্ধ পানি নেই। অনেক এলাকায় চুলা জ্বালিয়ে পানি ফুটানোর মত অবস্থা নেই এখন। বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের জন্য বানভাসি মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। ত্রাণের সাথে পানি বিশুদ্ধকরণের ট্যাবলেট দেবার জন্য বলেছি।

জকিগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউএনও পল্লব হোম দাস জানান, ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকায় ১৮ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আরও ১০০ মেট্রিকটন চাল ও ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারের চাহিদার কথা জেলা প্রশাসনের কাছে জানানো হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রশাসন চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে।