জিন্দাবাজারে বিএনপির মশাল মিছিল, পুলিশের ফাঁকা গুলি

জিন্দাবাজারে বিএনপির মশাল মিছিল, পুলিশের ফাঁকা গুলি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণার পর সিলেটে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মশাল মিছিল করেছে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণার পর সিলেটে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মশাল মিছিল করেছে। এ সময় পুলিশ মুহুর্মুহু ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে সন্ধ্যায় আম্বরখানা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। পৃথক বিক্ষোভের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে আটক করে। 

তবে রাতে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ জানিয়েছেন, আটকৃতদের মধ্যে একজনের নাশকতার সাথে জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া গেছে। বাকী দু’জনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। অপরদিকে পঞ্চম দফা অবরোধের প্রথম দিনে দিনের বেলা কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। 


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মিফতা সিদ্দিকীর নেতৃত্বে অবরোধের সমর্থনে মশাল মিছিল বের হয়। নগরীর বারুতখানা এলাকা থেকে মিছিলটি জিন্দাবাজার মোড়ে গিয়ে শেষ করেন নেতা-কর্মীরা। এ সময় তাঁরা জিন্দাবাজার মোড়ের পূর্ব পাশের সড়কে অবস্থান করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে জিন্দাবাজার এলাকায় অবস্থানকারী পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে মুহুর্মুহু ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যান। পথচারীরা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা ভয়ে দোকানপাট বন্ধ করে দেন। এসময় মোটরসাইকেল পড়ে থাকতে দেখা যায়। 


জিন্দাবাজার এলাকায় পথচারী আরিফ আহমদ বলেন, তিনি মোটরসাইকেলে করে আম্বরখানা থেকে জিন্দাবাজারে এসেছিলেন। এ সময় পথচারীদের দৌড়াদৌড়ি দেখে নিজেই নিরাপদে চলে যান।
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণার পর সিলেট নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়েছে জামায়াতে ইসলামী সিলেট মহানগর। সাড়ে ৭টার দিকে  সিলেট নগরীর আম্বরখানা এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। 

এসময় তারা ‘তফসিল ঘোষণা মানি না’-সহ নানা স্লোগান দিতে থাকে।
মিছিলে সিলেট মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী মোহাম্মদ শাহজাহান আলী, সহকারী সেক্রেটারী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব ও ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি সিদ্দিক আহমদসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মিছিলটি নগরীর বড় বাজার এলাকা থেকে বের হয়ে আম্বরখানা পয়েন্টের কাছে এসে ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটায়। এসময় এলাকা জুড়ে আতঙ্ক দেখা দেয়। পরে দ্রুত ঝটিকা মিছিল শেষ করে তারা স্থান ত্যাগ করে।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ সন্ধ্যা সাতটার দিকে বলেন, সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার এলাকায় মশাল জ্বালিয়ে নাশকতা চালানোর ঘটনায় দুইজনকে আটক করেছিলো পুলিশ। তবে তাদের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে এখনো তদন্ত চলছে। তবে এয়ারপোর্ট থানায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ কয়টি গুলি ছুড়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি এ তথ্য এখন পর্যন্ত পাননি। অন্যদিকে ঘটনার পর ছাত্রলীগের কর্মীরা জিন্দাবাজারে এসে অবস্থান নেন। তারা তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেন।

অপরদিকে পঞ্চম দফা অবরোধের প্রথম দিনে সিলেটের কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অবশ্য বিচ্ছিন্ন দু-একটি জায়গায় বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের পিকেটিং করতে দেখা গেছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ স্বাভাবিক ছিল যানবাহন চলাচল। 

তবে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি। বিচ্ছিন্ন ভাবে চলেছে আন্তঃ উপজেলার কিছু গণপরিবহন। তবে যাত্রী সংখ্যা ছিল কম।

অন্যদিকে, গণপরিবহন কম থাকায় অনেক জায়গায় ভোগান্তিতে পড়তে দেখা গেছে জরুরি কাজে চলাচলকারী সাধারণ মানুষদের। অবরোধের কারণে সকাল থেকে সড়ক মহাসড়কে জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করছে। এদিকে, সকাল থেকে নগরীতে ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি। এ কারণে বিভিন্ন পয়েন্টে কিছুটা যানজট দেখা গেছে। এছাড়া স্বাভাবিক দিনের মতো খুলেছ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও। 

এছাড়া অবরোধের সমর্থনে ভোরে সুনামগঞ্জ সড়ক ও বিমানবন্দর সড়ক সহ দুয়েক জায়গায় ঝটিকা মিছিল করেছে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।

সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, তফসিলকে প্রত্যাখ্যান করে নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন। তিনি বলেন,
পুলিশ বিএনপি’র কর্মীদের দেখা মাত্রই গুলি করছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান তিনি।