ঝুঁকির মুখে খন্দকার মোশাররফের এমপি পদ

ঝুঁকির মুখে খন্দকার মোশাররফের এমপি পদ
ফাইল ছবি

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। প্রথমে তিনি বাদ পড়েন মন্ত্রিসভা থেকে। এরপর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে সরানো হয় তাকে। সর্বশেষ গত ১৫ জানুয়ারি সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদও হারিয়েছেন সাবেক এ মন্ত্রী। এখন তার এমপি পদও ঝুঁকির মুখে।

সংবিধান ও কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী, একজন সংসদ সদস্য টানা ৯০ কার্যদিবস সংসদ অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যায়। সেই হিসাবে শনিবার (২১ জানুয়ারি) পর্যন্ত তার টানা অনুপস্থিতির সংখ্যা ৮২ কার্যদিবস।

সংসদ সূত্র জানায়, ২০২১ সালের এপ্রিলে তিনি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় যান এবং সেখানে অবস্থান করছেন। বর্তমানে চলছে একাদশ জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশন। গত ৫ জানুয়ারি এই অধিবেশন শুরু হয়েছে যা আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এ হিসাবে চলতি সংসদ অধিবেশনের আরও ১৫ কার্যদিবস  রয়েছে।

এবিষয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, আপাতত তিনি দেশে ফিরছেন না। সংসদের চলতি অধিবেশনের আরও ১০ কার্যদিবসে তিনি অনুপস্থিত থাকলে নিয়ম অনুযায়ী তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে।

এমপি পদ বাতিলের বিষয়ে সংবিধানের ৬৭ ধারায় বলা হয়েছে-  সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হইবে, যদি (ক) তাঁহার নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে নব্বই দিনের মধ্যে তিনি তৃতীয় তফসিলে নির্ধারিত শপথ গ্রহণ বা ঘোষণা করিতে ও শপথপত্রে বা ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষরদান করিতে অসমর্থ হন, তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ মেয়াদ অতিবাহিত হইবার পূর্বে স্পিকার যথার্থ কারণে তাহা বর্ধিত করিতে পারিবেন। (খ) সংসদের অনুমতি না লইয়া তিনি একাধিক্রমে নব্বই বৈঠক-দিবস অনুপস্থিত থাকেন।

সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংসদে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত। বর্তমান সংসদে আর কোনো এমপির টানা ৮২ দিন অনুপস্থিতের রেকর্ড নেই।

তিনি বলেন, কোনো এমপি দেশের বাইরে গেলে স্পিকারকে নোটিশের মাধ্যমে অবহিত করে যেতে হয়। খন্দকার মোশাররফ সুইজারল্যান্ড যাওয়ার আগে কোনো নোটিশ করে যাননি। তিনি কোথায় যাচ্ছেন সে বিষয়ে স্পিকারকে কিছু জানাননি। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল ১২তম সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন,  দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় ফরিদপুর-৩ আসনের এমপি খন্দকার মোশাররফকে  সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সংসদে তার অনুপস্থিতির সংখ্যা প্রায় ৯০ দিনের কাছাকাছি। একজন এসপি ৯০ দিনের অনুপস্থিতির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, ফরিদপুর-৩ আসনের এমপি (খন্দকার মোশাররফ হোসেন) যখন সুইজারল্যান্ড যান তখন সংসদ অধিবেশন চলছিল না। এক্ষেত্রে   অবহিত করা বাধ্যতামূলক নয়। তবে কোনো এমপি সংসদ অধিবেশনের টানা ৯০ কার্যদিবস অনুপস্থিত থাকলে সংবিধানের ৬৭ ধারার বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ফরিদপুর-৩ আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ২০০৯ সালে তাকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী করা হয়। পরে খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার পর থেকে ফরিদপুরে দলীয় রাজনীতিতে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বলয়ের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন।

২০২১ সালের ২৫ মার্চ তিনি সংসদ সচিবালয়ে সংসদীয় কমিটির ৮ম বৈঠক করেন। এরপর ১০ মাস অতিবাহিত হলেও তিনি  আর কোনো বৈঠক করেননি। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী প্রতি মাসে কমিটির অন্তত একটি বৈঠক করার বিধান রয়েছে।

গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বাদ পড়েন তিনি।

খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে গত ১৫ জানুযারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ দেওয়া হয় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে।