তিন দশক পর আমেরিকার বন্দরে বাংলাদেশি জাহাজ!

তিন দশক পর আমেরিকার বন্দরে বাংলাদেশি জাহাজ!

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ এমভি বাংলার মমতা ১৯৯১ সালে আমেরিকার বন্দরে যাওয়ার পর ওই জাহাজের ১৪ নাবিক একযোগে গা ঢাকা দেয়। আমেরিকা থেকে ওই জাহাজ ফেরত আনতে একজন চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে পাঠানো হলে তিনিও আমেরিকায় পৌঁছে সটকে পড়েন।

ওই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক মেরিটাইম সেক্টরে বিএসসিসহ দেশের ভাবমূর্তি সংকটে ফেলে দিয়েছিল। পরবর্তীতে বাংলার মমতাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলেও দেশীয় পতাকাবাহী বিশেষ করে বিএসসির জাহাজ আর আমেরিকার কোনো বন্দরে যায়নি। ওই সময়গুলোয় আমেরিকার বন্দর থেকে বাংলাদেশি জাহাজের শতাধিক যাত্রী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এমন ঘটনায় আমেরিকায় প্রবেশে এক ধরনের অঘোষিত নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে বিএসসির জাহাজ।
 
তবে ৩১ বছর পর আবারও বাংলাদেশি পাতাকাবাহী জাহাজ নোঙ্গর করেছে আমেরিকার বন্দরে। জাহাজটি উত্তর আমেরিকার দেশ এল সালভাদর থেকে যাত্রা করে ৫ মার্চ আমেরিকার হিউস্টন বন্দরে পৌঁছায়। সেখানে আখের রসের বিশেষ লিকুইড পণ্য খালাস করা হচ্ছে। আগামী ১৬ মার্চ জাহাজটিতে পণ্য খালাস শেষ হবে। পণ্য খালাস শেষে প্রায় ৩৩ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন তেল বোঝাইয়ের জন্য আমেরিকার নিউ অরলিয়ানস বন্দরের উদ্দেশ্যে জাহাজ যাত্রা করবে। ওই বন্দরে ২১ মার্চ পৌঁছানোর কথা রয়েছে। সয়াবিন তেল বোঝাইয়ের পর জাহাজটি ভারতের কান্ডলা বা হলদিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।

দীর্ঘ ৩১ বছর পর আমেরিকার বন্দরে বাংলাদেশি পাতাকাবাহী জাহাজের চলাচল শুরু হওয়ার ঘটনাটিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে বিএসসি এবং শিপিং খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে মেরিটাইম বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তুলে ধরা সম্ভব হবে। অতীতের দুর্নাম ঘুচিয়ে লাল সবুজের পতাকাবাহী জাহাজ আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে পণ্য পরিবহন করবে।

বিএসসির নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) ড. পিযুষ দত্ত টিবিএসকে বলেন, "ক্লাস শিপ না হলে আমেরিকার বন্দরে প্রবেশ করা যায় না। অনেকগুলো ইনসপেকশান থাকে। বর্তমানে বিএসসির বহরে থাকা জাহাজগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা এবং মান ভালো। বিশ্বের যেকোনো উন্নত বন্দরে যাওয়ার উপযোগী সব ধরনের সুবিধা রয়েছে।"

তিনি আরও বলেন, "১৯৯১ সাল বা তার আগের সিকিউরিটি সিস্টেম আর এখনকার সিকিউরিটি সিস্টেম ভিন্ন। আগে জাহাজ থেকে আমেরিকায় পালিয়ে সেখানে থেকে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও সেই পরিস্থিতি নেই। জাহাজ থেকে নাবিক পালিয়ে যাওয়ার সেই ভীতিও নেই এখন। সম্প্রতি বিএসসির আরেকটি অয়েল ট্যাংকার এমটি বাংলার অগ্রদূত অস্ট্রেলিয়ার বন্দরে পণ্য পরিবহন করেছে। এটিও আমাদের জন্য গৌরবের।"

আমেরিকার বন্দরে থাকা বাংলার অগ্রগতি জাহাজটি ৩ বছর আগের তৈরি। এর ধারণ ক্ষমতা ৩৮ হাজার ৯২৭ টন। এর ড্রাফট ৭ দশমিক ৭ মিটার। দৈর্ঘ্য ১৮৫ মিটার লম্বা এবং প্রস্থ ২৮ মিটার। জাহাজটিতে ২৭ জন বাংলাদেশি নাবিক নিয়োজিত রয়েছে।

১৯৭৭ সালে বিএসসির জাহাজ বাংলার মান-এর মাধ্যমে সমুদ্র পথে আমেরিকায় পণ্য পরিবহন শুরু হয়। উদ্বোধনী যাত্রায় বাংলার মান জাহাজে ক্যাডেট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন আনাম চৌধুরী। যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "ওই সময়ে বাংলাদেশি জাহাজ আমেরিকার বন্দরে পৌঁছার পরই প্রতিটি জাহাজ থেকে একাধিক নাবিক পলিয়ে যেত। এটি স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছিল। দীর্ঘ ৩১ বছর পর আমেরিকায় নতুন রুট চালু হয়েছে এটি নিঃসন্দেহে ভালো খবর। এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এই রুটে অন্তত ৩ টি জাহাজ চালু রাখতে হবে।"

বিএসসি সুত্র জানায়, দীর্ঘদিন বিএসসির বহরে নতুন জাহাজ না থাকায় উন্নত বিশ্বের বন্দরগুলোতে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ২০১৮ সালের আগে একপর্যায়ে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা মাত্র দুটিতে নেমে আসে। সেগুলোও শুধুমাত্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমুদ্র বন্দরগুলোতে চলত।

তবে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে এক হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়টি নতুন জাহাজ যুক্ত হয়। এর মধ্যে তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার এবং তিনটি অয়েল ট্যাংকার। যদিও নতুন কেনা ছয়টি জাহাজের মধ্যে বাল্ক ক্যারিয়ার বাংলার সমৃদ্ধি গত ২ মার্চ ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রাশিয়ার রকেট হামলার ঘটনায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বিএসসি।

আর এম/তানভীর