তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প: ধংসস্তুপে মেয়ের মরদেহ, হাত ধরে বসে আছেন বাবা

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প: ধংসস্তুপে মেয়ের মরদেহ, হাত ধরে বসে আছেন বাবা

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
ভূমিকম্প কেড়ে নিয়েছে মেসুত হ্যান্সারের ১৫ বছর বয়সী মেয়ের প্রাণ। কিন্তু ধংসস্তুপে চাপা পড়া মেয়ের মরদেহ এখনও উদ্ধার কর‌তে পারেননি মেসুত। শোকে নির্বাক বাবা বসে আছেন মেয়ের মরদেহের পাশে। আলতো করে ধরে আছেন মেয়ে ইরমাকের হাত।

মেসুত হ্যান্সারের অসহায়ত্বের কাছে শোকও যেন হার মেনেছে। তার চোখে পানি নেই। রাজ্যের হতাশা আর অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে তার চোখেমুখে। বার্তা সংস্থা এএফপির এক আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় ধরা পড়েছে তার এই অসহায়ত্বের মুহূর্ত।

মেসুত হ্যান্সার তুরস্কের কাহরামানমারাস শহরের বাসিন্দা। স্থানীয় সময় সোমবার ভোরে তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে হওয়া ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে মেসুত হ্যান্সারের ১৫ বছর বয়সী মেয়ে ইরমাকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু উদ্ধারকর্মীরা এখনও তার মরদেহ উদ্ধার করতে পারেননি। তাই ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও মেসুত হ্যান্সার ওই ধংসস্তুপ ছেড়ে যাননি। বরং মেয়ের হাত ধরেই তার মরদেহের পাশে বসে রয়েছেন হ্যান্সার।

৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে রীতিমতো মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চল। শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও কয়েক হাজার মানুষ।

বিবিসি বলছে, তুরস্কে ৩ হাজার ৪১৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বহু মানুষ। ভূমিকম্পের পর থেকে এখন পর্যন্ত ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে সাত হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু তুষারপাত ও আফটার শকের ( শক্তিশালী কম্পন) কারণে উদ্ধার কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।

এদিকে ভূমিকম্পে সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা এক হাজার ৬০০ ছাড়িয়েছে। দেশজুড়ে তিন হাজার ৪১১ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

ভূমিকম্পে উভয় দেশে পাঁচ হাজার ৭৭৫টি ভবন ধসে পড়েছে। এতে অনেকেই আটকা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এখনও অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চলছে।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্কের নুরদাগি এলাকা থেকে ২৩ কিলোমিটার পূর্বে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ভূম্পিকম্পটি রাজধানী আঙ্কারা ও তুরস্কের অন্যান্য শহরেও অনুভূত হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট পুরো অঞ্চল জুড়েই কম্পন অনুভূত হয়েছে। গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে এর গভীরতা ছিল মাত্র ১৭  দশমিক ৯ কিলোমিটার।

সংস্থাটি আরও জানায়, প্রথম ভূমিকম্পের পর আরও কয়েকবার শক্তিশালী কম্পন (আফটার শক) অনুভূত হয়। সবশেষ কম্পনটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭ মাত্রার।