২৯তম ব্যাচের রিসিপশন এন্ড হুয়াইট কোট ছিরিমনি   

দক্ষ চিকিৎসক গড়ার অনন্য প্রতিষ্ঠান  জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ 

দক্ষ চিকিৎসক গড়ার অনন্য প্রতিষ্ঠান  জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ 


দানবীর ড. রাগীব আলী সমাজের আইকন: অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন   
অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে এই মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করিনি: দানবীর ড. রাগীব আলী 

রয়েল ভিউ ডেস্ক:  দক্ষ চিকিৎসক গড়ার অনন্য প্রতিষ্ঠান জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। দেশের গন্ডি পেরিয়ে এই কলেজের সুনাম এখন বিশ্বময়। শিক্ষকদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও শিক্ষার্থীদের একাগ্রতা প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে এই মেডিকেল  কলেজ একটি স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। চা বাগানের মনোরম পরিবেশে অবস্থিত জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ থাকে শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে। 
 
মঙ্গলবার জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ২৯তম ব্যাচের রিসিপশন এন্ড হুয়াইট কোট ছিরিমনি  অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। 

মেডিকেল কলেজের লেকচার গ্যালারিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন। সম্মানিত অতিথি ছিলেন-জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান,  অসংখ্য শিক্ষা ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর ড. রাগীব আলী। সভাপতিত্ব করেন জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: আবেদ হোসেন। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দেশের প্রথম সারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে ভর্তির সুযোগ পেয়ে নিশ্চয়ই নবীন শিক্ষার্থীরা নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছে। তিনি আরো বলেন, নবীন শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে শিক্ষকরা কেবল পথ দেখিয়ে দেবেন, এরপর নিজেই নিজের পথ তৈরি করে নিতে হবে। অনেক দূর যেতে হবে। নিজেকে একজন মানবিক ও দক্ষ চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে সাধারণ মানুষ থেকে নিজেকে আলাদা করে নয়। সমাজের মানুষের সেবাকেই প্রাধান্য দিতে হবে। শিক্ষকদেরও শিক্ষার্থীদের চাপে নয়, আনন্দের সাথে শিক্ষা দিতে হবে। 

জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, একজন দানবীর রাগীব আলী ছিলেন বলেই এই মেডিকেল কলেজ দেশের প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ কলেজ হতে পেরেছে। তিনি বলেন, দানবীর ড. রাগীব আলী সমাজের আইকন। তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করছি। 
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, আমি অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে এই মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করিনি। এর পিছনে রয়েছে এক মহৎ উদ্দেশ্য। দেশের নতুন প্রজন্মকে মানবসম্পদে রূপান্তরিত করে সমাজের গরিব অসহায় মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, দেশ সেরা শিক্ষকরা এখন এই মেডিকেল কলেজে। যারা নিজেদের সঁপে দিয়ে দক্ষ চিকিৎসক তৈরি করছেন। 
রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনসহ অসংখ্য মানবতাবাদী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর ড. রাগীব আলী আরো বলেন, আজ যখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে পড়তে আসে; তখন গর্বে বুক ভরে যায়। তখনই ভাবি আমার চেষ্টা সফল হয়েছে। বিশেষ করে নেপাল ও ভারত থেকে যেসব শিক্ষার্থী এসেছেন, তাদের এবং তাদের অভিভাবকদের জানাই অভিনন্দন। 
তিনি বলেন, হাসপাতালের ধূলিকণার সাথে জড়িয়ে আছে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কো-ফাউন্ডার মরহুমা বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর স্মৃতি। মেডিকেল কলেজ নিয়ে তাঁর অনেক স্বপ্ন ছিল। আজ যদি সে থাকতো খুবই খুশি হতো। তিনি সকলের কাছে বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর জন্য দোয়া কামনা করেন। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন-সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক সায়েন্স এন্ড প্যারাক্লিনিক্যাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ডীন ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী। আরো বক্তব্য রাখেন- রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার আব্দুল হাই, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: একে এম দাউদ, হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তারেক আজাদ, একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর ও  অর্থপেডিক্স বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ সাইরাস সাকিবা, অধ্যাপক ডা: শামীমা আকতার, ফিজিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: রেজিনা মোস্তারিন, অভিভাবকদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ এর ২য় ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা: মো: খলিলুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন-সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ নুরুল কাইয়ুম মুসাল্লিন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন মেডিকেল কলেজের লেকচারার রাজিব আহসান সুমন ও ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নিশাত আনজুম। নবীন বিদেশি শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন নেপালী শিক্ষার্থী নেহাতা রায় ও ভারতীয় শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার এবং বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পক্ষে নীলিমা নৌরিন নীলা। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ২৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহবুব এলাহী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক সায়েন্স এন্ড প্যারাক্লিনিক্যাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ডীন অধ্যাপক ডা: শিশির রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও সরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে কোন অংশে কম নয়। যারা এই কলেজে শিক্ষার সুযোগ পেয়েছেন ; তারা ভাগ্যবান। প্রাকৃতিকসহ শিক্ষার পরিবেশ এই কলেজকে করেছে অনন্য। দক্ষ শিক্ষকমন্ডলী এই কলেজের জন্য নিয়ামক। তিনি নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি বিশ্বাস করি তোমরা অনেক মেধাবী, নিয়মিত অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। 
রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার আব্দুল হাই বলেন, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আমার মা-বাবার একটি স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান। এখানে জড়িয়ে রয়েছে আমার মায়ের পবিত্র স্মৃতি। তিনি বলেন, মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তার হয়ে বের হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করলেই আমাদের সফলতা। 
উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: একে এম দাউদ নবীন শিক্ষার্থীদের কলেজের একাডেমিক নানা বিষয়ে ধারণা দেন। তিনি বলেন, এই কলেজে রয়েছে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি সহ-শিক্ষার এক মনোরম পরিবেশ। তোমাদের সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে একজন মানবিক চিকিৎসক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।  
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তারেক আজাদ বলেন, এই মেডিকেল কলেজের সাথে ৮ শতাধিক বেডের হাসপাতাল রয়েছে। যেটি অনেক প্রাইভেট মেডিকেলে নেই। বিশেষ করে রয়েছেন সুদক্ষ শিক্ষকমন্ডলী। যারা নবীন শিক্ষার্থীদের চিকিৎসক হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করবেন। 
অভিভাবকদের পক্ষে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ২য় ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা: মো: খলিলুর রহমান বলেন, আজ আমি একজন পিতা হিসেবে গর্বিত। যে কলেজ থেকে নিজেই এমবিবিএস পাশ করেছিলাম, আমার মেয়ে সেই কলেজেরই শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, একজন দানবীর ড. রাগীব আলী ও রাবেয়া খাতুন চৌধুরী সিলেটে প্রথম প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ গড়ে তুলেছিলেন। যার জন্য বহু চিকিৎসক তৈরির সুযোগ হয়েছে। ডা: মো: খলিলুর রহমান তার শিক্ষকমন্ডলী ও দানবীর ড. রাগীব আলীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। 
সভাপতির বক্তব্যে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: আবেদ হোসেন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিয়মিত অধ্যবসায় ও শৃঙ্খলা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নবীণ শিক্ষার্থীদের সেই বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ এ প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলার প্রশ্নে কোন ছাড় নেই। তিনি আরো বলেন, দানবীর ড. রাগীব আলী ও বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী প্রাকৃতিক পরিবেশে পাঠদানের পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের তা গ্রহণ করতে হবে।