দানবীর ড. রাগীব আলীর কারণেই পুরো  অঞ্চল আজ আলোকিত : এমপি হাবিব

দানবীর ড. রাগীব আলীর কারণেই পুরো  অঞ্চল আজ আলোকিত : এমপি হাবিব

একদিন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরো বেশি আলো ছড়াবে ॥ দানবীর ড. রাগীব আলী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির ফল-২০২৩ সেমিস্টারের নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয়া হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মনোরম পরিবেশে পড়াশোনার সুযোগ পেয়ে নবীন শিক্ষার্থীরা ছিল যেন আনন্দে আত্মহারা। অভিভাবকরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। নবীনবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবও যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন শৈশবের দিনগুলোতে। আর কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেছেন বৃহত্তর কামালবাজার তথা রাগীবনগরের কৃতিসন্তান উপমহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর ড. রাগীব আলীর অবদানের কথা। তিনি বলেন, একজন রাগীব আলী ছিলেন বলেই শুধু একটি এলাকা নয়; পুরো অঞ্চল শিক্ষার আলোয় আলোকিত। আজ কি নেই সেখানে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ-মাদ্রাসা সব আছে সেখানে। আছে বিশ্বমানের লিডিং ইউনিভার্সিটি। এমপি হাবিব বলেন, মানুষের মনের মুকুরে অমর হয়ে থাকবেন দানবীর ড. রাগীব আলী। 

গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ বর্ণিল নবীন বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটি, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ অসংখ্য শিক্ষা ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, লিডিং ইউনিভার্সিটিতে উন্নত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে দক্ষ শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে অবকাঠামো উন্নয়নের কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, যেসব শিক্ষার্থীর পিছনে বাবা-মা, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকার লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে, সেই শিক্ষার্থীরা যখন বিদেশে চলে যায় ; তখন খারাপ লাগে। আমাদের মেধাবীদের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, এদেশে এখন অনেক কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়েছে । তাই উচ্চশিক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিদেশ নয়, দেশে থেকে নিজের দেশের  উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানান তিনি।

নিজ জন্মভূমি রাগীবনগরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, রাগীব নগর আজ একটি স্যাটেলাইট সিটিতে রূপ নিয়েছে। শুধু নিজের কথা ভেবে নয়, আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা গড়ে তোলা হয়েছে। আমার মৃত্যুর পরও যেন এই প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনায় কোন সমস্যায় পড়তে না হয়, তার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। একদিন আরো বেশি আলো ছড়াবে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করতে চায়, তারা আগামী প্রজন্মের শত্রু। 

নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে দানবীর ড. রাগীব আলী আরো বলেন, আমি কেবল তোমাদের শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছি। তোমাদের সেখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে নিতে হবে। বাবা-মায়ের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে। সমাজের কল্যাণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। তবেই আমার সকল পরিশ্রম সার্থক হবে। 
ইউনিভার্সিটির ৪টি অনুষদের ১১টি বিভাগের ১৭টি প্রোগ্রামের সহস্রাধিক নতুন শিক্ষার্থীর বরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন-লিডিং ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী আজিজুল মাওলা, লিডিং ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য ও দৈনিক সিলেটের ডাক-এর সম্পাদক আব্দুল হাই, লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মফিজুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা ও আয়োজক কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ড. মো. মাইমুল আহসান খান, বিভিন্ন অনুষদের ডিনদের পক্ষে কলা ও আধুনিক ভাষা অনুষদের ডিন  ড. মো. রেজাউল করিম, বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানগণের পক্ষে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রুমেল এম. এস. রহমান পীর এবং নবীনদের পক্ষে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী লুবাবা বিনতে ফারুক। পরবর্তীতে  কালচারাল ক্লাবের আয়োজনে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কালচারাল প্রোগ্রামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন কালচারাল ক্লাবের উপদেষ্টা শাম্মী আক্তার।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আশরাফুন নাহার মেমরি এবং ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সাদাব আশরাফ খানের সঞ্চালনায় নবীনবরণ অনুষ্ঠানে লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. লুৎফর রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি আরো বলেন, জ্ঞান অর্জনের জায়গা হলো বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে রয়েছে বিশ্ব সম্পর্কে জানার এবং নিজের দেশকে উন্নয়নের লক্ষ্যে নেতৃত্বদানে নিজেকে তৈরি করার সুযোগ। লিডিং ইউনিভার্সিটি বিশ্বমানের একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি তার বক্তব্যে আরো বলেন, এ ধরনের নবীনবরণের সুযোগ আমরা পাইনি। তাই এ অঞ্চলে আজ নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করার সুযোগ পেয়ে গর্ববোধ করছি। তিনি লিডিং ইউনিভার্সিটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, শৈশবের শিক্ষাজীবনে তাঁর কাছে অনেক উৎসাহ এবং সহযোগিতা পেয়েছি। শিক্ষায় এ অঞ্চলের সুযোগ সুবিধা ছিল খুবই সীমিত, এখন আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সব সুযোগ এ অঞ্চলে রয়েছে এবং তাতে রাগীব আলীর অবদান উল্লেখযোগ্য। দানবীর ড. রাগীব আলী প্রতিষ্ঠিত হাজী রাশিদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে এসএসসি পাশ করেন জানিয়ে হাবিবুর রহমান হাবিব এমপি আরো বলেন, ওই সময় বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী হিসেবে তাকে ১ হাজার টাকা স্কলারশিপ দিয়েছিলেন। সেই উৎসাহ তাকে আজ এ পর্যন্ত নিয়ে যেতে প্রেরণা যুগিয়েছে। 
এলাকার উন্নয়ন প্রসঙ্গে এমপি বলেন, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের অসুবিধা শিগগিরই দূর করা হবে। দুটি ব্রিজ নির্মাণ এবং রাস্তার উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। আগামী ডিসেম্বরে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনগুলো চলাচল করতে পারবে। 
নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশি বেশি বই পড়ার প্রবণতা সৃষ্টি করতে হবে। এ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্বাধীনতার চেতনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই এদেশে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হবে।
লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী আজিজুল মাওলা বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও স্বীকৃতি উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা প্রদান করেছে। ইতোমধ্যে উন্নত বিশ্বের বেশ কয়েকটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে লিডিং ইউনিভার্সিটির একাডেমিক সমঝোতা স্মারক সম্পন্ন হয়েছে । যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণা কার্যক্রম বিনিময় করতে পারবেন। তিনি লিডিং ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ড. রাগীব আলীর সহযোগিতায় এ বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশ এবং দেশের বাইরে একটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।    
লিডিং ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য আব্দুল হাই বলেন, পড়াশোনার জন্য লিডিং ইউনিভার্সিটি হলো উপযুক্ত জায়গা, যেখানে রয়েছে পড়াশোনার সুন্দর পরিবেশ। নবীন শিক্ষার্থীদের এই নবযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাশে থাকবে। শিক্ষার্থীদেরও ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার গঠনে ভালো করে পড়াশোনা করতে হবে। 
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ বনমালী ভৌমিক বলেন, লিডিং ইউনিভার্সিটির অবকাঠামো উন্নয়ন এবং এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়নে দানবীর ড. রাগীব আলী একটি অবিস্মরণীয় নাম। আর এমপি হাবিবুর রহমান হলেন বর্তমান সারথি। যার সুফল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পেতে যাচ্ছে। দ্রুততম সময়ে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।