দিরাইয়ে শাহ আবদুল করিম লোক উৎসবের উদ্বোধন 

দিরাইয়ে শাহ আবদুল করিম লোক উৎসবের উদ্বোধন 

সুনামগঞ্জ সংবাদদাতাঃ 
বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের ১০৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামের মাঠে দুই দিনব্যাপী লোক উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আবদুল করিম পরিষদের আয়োজনে বেসরকারি সংস্থা বিকাশের সহযোগিতায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টায় সমবেত গানের মধ্যদিয়ে শুরু হয় দুইদিনব্যাপী লোক উৎসব। এ উপলক্ষ্যে আব্দুল করিম স্মৃতি সংগ্রহশালার সামনে ও গ্রামের মাঠে বসেছে মেলা। তিনি বেঁচে থাকা অবস্থায় ২০০৬ সাল থেকে ধল গ্রামবাসীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শাহ আব্দুল করিম লোক উৎসব। তাঁর একমাত্র ছেলে উৎসব আয়োজন কমিটির আহবায়ক শাহ নূর জালাল'র সভাপতিত্বে ও উপজেলা তথ্য কর্মকর্তা পারমিতা দাসের সঞ্চালনায় বাউল সম্রাটের জীবন নিয়ে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মামুন, দিরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)  কাজী মোক্তাদির হোসেন, বিকাশের ইভিজি প্রধান হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ বেতারের উপ-পরিচালক জাহিদ হাসান, লেখক সামারিন দেওয়ান, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি পংকজ কান্তি দে, দিরাই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান লিটন, ইউপি চেয়ারম্যান আলী আহমদ,  যুক্তরাজ্য প্রবাসী রুবেল মিয়া। পরে শাহ আব্দুল করিমের ভক্তদের অংশগ্রহণে শুরু হয় লোকগান ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। উৎসবের দুইদিনই রাতভর শাহ আব্দুল করিম রচিত আধ্যাত্মিক, মরমী ও সারি গান পরিবেশন করবেন দেশের বিখ্যাত ও স্থানীয় বাউলশিল্পীরা। আব্দুল করিমের ছেলে শাহ নূর জালাল বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এসেছেন এ উৎসবে। আমাদের পৃষ্ঠপোষকতার অভাব রয়েছে আমি আশা করি সরকারি সহযোগিতা পেলে আরো বৃহত্তর আকারে আমরা লোক উৎসবের আয়োজন করতে পারবো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার শক্তিতে বলীয়ান বিদ্রোহী বাউল শিল্পী একুশে পদকপ্রাপ্ত শাহ আব্দুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী ধল গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।অভাবের তাড়নায় তিনি স্কুল ছেড়ে হয়ে যান গৃহস্থের বাড়ির রাখাল। পড়াশোনা না করতে পারলেও মুখে মুখে গান রচনা করে গাইতে শুরু করেন। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, সাতান্নর কাগমারী সম্মেলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণ আন্দোলনসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামেই তিনি গানকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়ে ছিলেন। আব্দুল করিমের গানে ফুটে উঠেছে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা, আছে শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত মানুষের অধিকারের কথা। স্বাধীনতা সংগ্রামের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিরাইয়ের জনসভায় এসে গান শুনে তাকে পুরস্কৃত করেন।এছাড়াও মাওলানা ভাসানীসহ দেশের অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্বের মঞ্চে তিনি গান পরিবেশন করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন।