দেশজুড়ে অবৈধ মজুত উদ্ধারে অভিযান, পাঁচ দিনে প্রায় ৭ লাখ লিটার তেল জব্দ

দেশজুড়ে অবৈধ মজুত উদ্ধারে অভিযান, পাঁচ দিনে প্রায় ৭ লাখ লিটার তেল জব্দ

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
বাড়তি মুনাফার আশায় ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা কারসাজি করছে। আগের কম মূল্যে কিনে বর্তমান বাড়তি দরে বিক্রির জন্য দেশজুড়ে তেলের অবৈধ মজুত গড়ে তোলা হয়। এই পরিস্থিতিতে বাজার একেবারে তেলশূন্য হয়ে পড়ে। ক্রেতাদের নাজেহাল অবস্থা তৈরি হয়। সমস্যা সমাধানে মাঠে নামে বাজার তদারকির একাধিক সংস্থা। তারা অবৈধভাবে মজুত করা তেল বের করতে শুরু করে। পরিস্থিতি এমন- গত পাঁচ দিনে ৬ লাখ ৮৬ হাজার ২৬৮ লিটার তেল জব্দ করে অসাধুদের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে বুধ ও বৃহস্পতিবার এই দুদিনে সারা দেশে প্রায় ৫ লাখ ৬৬ হাজার ২৬৮ লিটার তেল উদ্ধার করে সাধারণ ভোক্তার মাঝে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে। বাকি তেল সোম ও মঙ্গলবার জব্দ করা হয়। বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গত দুদিনে ৫ লাখ ৬৬ হাজার ২৬৮ লিটার তেলের মধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ২ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪৮ লিটার তেল উদ্ধার করে সাধারণ ভোক্তার মাঝে আগের দরে বিক্রি করে। পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযানে এক লাখ ৩০ হাজার ৭০০ লিটার তেল উদ্ধার করে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত ৭৫ হাজার ১২০ লিটার তেল ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে এই দুদিনে ২৪ হাজার ৯৫০ লিটার তেল জব্দ করা হয়।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, দেশে তেলের কোনো সংকট নেই। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দেশে তেলের সংকট তৈরি করে রেখেছে। তারা অবৈধ মজুত করে অস্থিরতা তৈরি করে বেশি দরে বিক্রি করতে চেয়েছে। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাঠ প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করছে। দেখা গেছে, এই অভিযানে একদিনেই (বৃহস্পতিবার) সারা দেশে প্রায় পাঁচ লাখ লিটার তেল উদ্ধার করে অসাধুদের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। পাশাপাশি উদ্ধর করা তেল দাম বাড়ার আগে যে মূল্য ছিল সেই দরে বিক্রি করা হয়েছে।

এদিকে যুগান্তরের জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য মতে- বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে ১০১ ড্রাম সয়াবিন ও ১৩০ ড্রাম পাম অয়েল জব্দ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় মজুত করার দায়ে অসাধুদের ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি খাগড়াছড়িতে ৩৭ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাড়ে ৪ হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করে বাজারে বিক্রি করে ভোক্তা অধিদপ্তর। পাবনায় ৫ ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে এক লাখ ২৭ হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ ও ভোক্তা অধিদপ্তরের তদারকি দল। খুলনায় এদিন তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২ লাখ ৪৬ হাজার লিটার তেল উদ্ধার করে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করে র‌্যাব-৬ এর তদারকি দল। এছাড়া বরিশালের বাবুগঞ্জে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদপ্তর। সেখানে ৬১৫ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া কিশোরগঞ্জ থেকে ৪ হাজার লিটার, মাদারীপুর থেকে ৯৭২ লিটার এবং আরও চারটি অঞ্চল থেকে ১০৯, ৫১৫, ৫ হাজার, ৭৫৩, ৩০ হাজার, ১০ হাজার ও ৩ হাজার ৫০ লিটারসহ মোট ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৩৮ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়।

বিভিন্ন সংস্থার তথ্য মতে, বুধবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সারা দেশ থেকে ৭৪ হাজার ৯১০ লিটার তেল উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে ৩৭ হাজার লিটার তেল উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের প্রেক্ষিতে আরও এক হাজার ৪২০ লিটার তেল উদ্ধার করে সাধারণ ভোক্তার মাঝে প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন ১৩৬ টাকা ও বোতল সয়াবিন ১৬০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি অসাধুদের বিভিন্ন ধারায় জরিমানা করা হয়। এ ধরনের অনিয়ম আবারও করলে জেলে পাঠানোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

কনজুমাসর ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, এ ধরনের অভিযান সত্যিই প্রশংসনীয়। কারণ মজুত করা তেল বের করে ন্যায্য দরে বিক্রি করা হচ্ছে। অসাধুদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। তবে যে হারে শাস্তি হওয়ার কথা সে হারে হচ্ছে না। অসাধুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা দরকার। যাতে কোনো পণ্য নিয়ে অসাধুরা কারসাজি না করতে পারে।

সূত্র মতে, সোম ও মঙ্গলবার রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার লিটারের বেশি সয়াবিন তেল জব্দ করেছে কর্তৃপক্ষ। কুষ্টিয়ায় বিভিন্ন গুদাম থেকে ৪০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে ১৮ হাজার লিটার ও গাজীপুরে ৭ হাজার ১৫৮ লিটার তেলসহ মোট ১ লাখ ৮৫ হাজার লিটার উদ্ধার করা হয়।