৫৬৪টির মধ্যে উদ্বোধন হয়েছে ৫০টি মসজিদের, অপেক্ষায় আরও ২০০টি

দেশব্যাপী মডেল মসজিদ প্রকল্পে ৩১টির অগ্রগতি শূন্য

দেশব্যাপী মডেল মসজিদ প্রকল্পে ৩১টির অগ্রগতি শূন্য

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
দেশব্যাপী মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (মডেল মসজিদ) নির্মাণ প্রকল্পে ৩১টির কাজের অগ্রগতি প্রায় শূন্যের কোঠায়। এখন পর্যন্ত জমি নির্বাচনই সম্ভব হয়নি। অধিগ্রহণ জটিলতায় প্রথম ধাপে আটকে গেছে আরও ৭০টি। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া সরকারের পাঁচশতাধিক মডেল মসজিদ প্রকল্পটি ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৩৯.৫০ শতাংশ। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, নানা জটিলতা থাকলেও কাজ থেমে নেই।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মুশফিকুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেকটি প্রকল্পের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেন তার মধ্যে মডেল মসজিদ প্রকল্প অন্যতম। তাই মডেল মসজিদগুলোর কাজ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদারকি করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী ছড়ানো এত বড় প্রকল্পে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হলেও দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।’
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জমি অধিগ্রহণ এবং দখলসংক্রান্ত জটিলতায় আটকে আছে ৭০টি মডেল মসজিদ, জমি নির্বাচন হয়নি ৩১টির, মামলা চলছে ৩টির। এছাড়া ৩৪টি মডেল মসজিদের জায়গার সমস্যা না থাকলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি। প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ তৈরি হচ্ছে। এরই মধ্যে মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ৫০টি মসজিদ উদ্বোধন হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আরও ২০০টি মসজিদ উদ্বোধনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। মডেল মসজিদ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নজিবর রহমান বলেন, ‘এটি অনেক বড় প্রকল্প। কম-বেশি একশটির মতো জায়গায় বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। কোনো জায়গায় রিট হয়, আমরা সেটি ভ্যাকেট করি। আবার নতুন জায়গা চিহ্নিত করা হয়। এভাবে কিছু সমস্যা ঘুরপাক খাচ্ছে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে প্রকল্প পরিচালক জানান, ‘জমি নির্বাচন হয়নি ৩০টির বেশি মসজিদের, এছাড়া মামলা, অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন কারণে সমস্যা আছে একশটির মতো জায়গায়। যেসব স্থানে জমি নিয়ে সমম্যা হচ্ছে সেখানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে সমাধানের চেষ্টা চলমান আছে। তাই এক অর্থে আমরা কাজের মধ্যেই আছি।’

প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পটি প্রথমদিকে বিদেশি অর্থায়নের সম্ভাবনা থাকলেও সেটি হয়নি। পরে সরকার সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে কাজ শুরু করে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া প্রকল্পটি দেখভালের দায়িত্বে আছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। নির্মাণকারী সংস্থা হিসাবে কাজ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। প্রকল্পের অধীনে ৬৪টি জেলা সদর, পাঁচটি সিটি করপোরেশনে চারতলা মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি হবে।

তিনতলা মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হবে ৪৭৫টি উপজেলা সদরে। এর বাইরে ১৬টি উপকূলীয় এলাকায় চারতলা বিশিষ্ট ভবন হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোর নিচতলা ফাঁকা থাকবে। প্রকল্পের শিরোনামে ৫৬০টি মসজিদের কথা উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে এখন মসজিদ হবে ৫৬৪টি। প্রকল্প গ্রহণের পর আরও চারটি উপজেলা নতুন হওয়ায় মসজিদের সংখ্যাও বেড়ে যায়।
 
জায়গা নির্বাচন হয়নি ৩১ মডেল মসজিদের : প্রকল্পের প্রায় ছয় বছর পার হতে চললেও ৩১টি মডেল মসজিদের জায়গা এখনো পর্যন্ত নির্বাচন হয়নি। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনও রয়েছে। এছাড়া নয়টি জেলা সদরে মডেল মসজিদের জায়গা নির্বাচন চূড়ান্ত হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, ঝালকাটি, বান্দরবান, চাঁদপুর, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা। উপজেলা পর্যায়ে বাকি থাকা মডেল মসজিদের জায়গা নির্বাচনের মধ্যে রয়েছে- ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলা, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর, মুন্সীগঞ্জের সদর ও লৌহজং, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও ঈদগাঁও, খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি, মহালছড়ি ও রামগড়, রাঙামাটির সদর ও বিলাইছড়ি এবং নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলা। জায়গা নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি জটিলতা রয়েছে টাঙ্গাইল জেলায়। এ জেলার ভূঞাপুর, ঘাটাইল, মির্জাপুর ও নাগরপুরসহ চারটি মসজিদের জায়গা নির্বাচন এখনো সম্পন্ন হয়নি। মাদারীপুরের নতুন হওয়া ডাসার উপজেলা, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, বরিশালের মুলাদী, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং সুনামঞ্জের মধ্যনগর (নতুন) উপজেলাতেও একই সমস্যা বিরাজ করছে।

প্রকল্পের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এ প্রকল্পের অধীনে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫১৯টি মসজিদের দরপত্র আহ্বান করা হয়। কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে ৫১৬টির। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে পঞ্চাশটি মসজিদ উদ্বোধন হয়েছে। প্রায় পৌনে চারশ মসজিদের কাজ বিভিন্ন পর্যায় পর্যন্ত এগিয়েছে। এর মধ্যে ভিতের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ১১০টির, নিচতলার কলাম ঢালাই হয়েছে ৭০টির, প্রথম তলার ছাদ ঢালাই হয়েছে ২৬টি, ১২৪টির তৃতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া চতুর্থ তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই হয়েছে ১৯টি মসজিদ কমপ্লেক্সের।

মডেল মসজিদ প্রকল্পে মোট বরাদ্দ নয় হাজার কোটি টাকার বেশি। জুন পর্যন্ত সর্বমোট তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। তাই ২০২৪ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের সমুদয় অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা কম হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মডেল মসজিদ প্রকল্প সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রথমবার প্রকল্প থেকে দেড় হাজার কোটি পাওয়া যায়। চলতি অর্থবছরে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরকার বিভিন্ন খাতে আর্থিক চাপে থাকায় দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি জোগান দিতে পারবে না। এ গতিতে চললে প্রকল্পটি শেষ হতে ২০২৬ পর্যন্ত লাগতে পারে।

আর এম/তানভীর

সর্বশেষ সংবাদটি পেতে চোখ রাখুন রানার পেইজে...