ধান শুকানোরও জায়গা নেই এখন

ধান শুকানোরও জায়গা নেই এখন

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
সপ্তাহ দুয়েকেরও বেশি সময় ধরে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে হাওর ও নদ—নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হাওর বহিভূর্ত উঁচু জমির বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের কৃষকেরা। একদিকে চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে পাকা ধান আর অন্যদিকে শ্রমিক সংকট আর শ্রমিকের বাড়তি মজুরি কৃষকের দুর্ভোগের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন। শুধুমাত্র ধান কেটে দিয়েই একজন শ্রমিক মজুরি হাকাচ্ছেন হাজার টাকারও বেশি। ধান কেটে দিয়েই যেন শ্রমিকের দায় শেষ। ধান কাটা শেষ হলে জমির মালিককেই সেই ধান নৌকা অথবা মাথায় করে নিরাপদ উচু স্থানে নিতে হচ্ছে।
পানি বাড়ার কারণে এদিকে যেমন জমি তলিয়ে গেছে অন্যদিকে ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজে ব্যবহৃত খলা (উচু কান্দা) পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ফলে ধান মাড়াই ও শুকানোর জন্য স্থানীয় সড়কগুলো একমাত্র ভরসা। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার কারণে রোদের দেখা না পাওয়ায় ধান শুকাতে পারছেন না কৃষকেরা। ধান মাড়াইয়ের পর খড় শুকাতে না পারার কারণে গোখাদ্য তৈরির প্রক্রিয়াও মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ধান স্তুপাকারারে রাখার কারণে অঙ্কুরিত হয়ে চারা গজাচ্ছে। স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন গত দুয়েক যুগেও উচু জমির ধান তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

এ বছর ধর্মপাশা সদর, সেলবরষ, পাইকুরাটি, বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ও বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নে হাওর বহির্ভূত উঁচু অংশে ৬ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। এর মধ্যে ৫ হাজার ৮৭৮ হেক্টর ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে সপ্তাহদুয়েক সময় ধরে লাগাতার বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে হাওর ২৩০ হেক্টর বোরো জমির ধান তলিয়ে গেছে। কিন্তু বৈরি আবহাওয়ার কারণে কর্তন করা ধান শুকানো থেকে শুরু করে গোলাজাতকরণ প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

পাইকুরাটি ইউপির কৃষক নুরুজ্জামান জানান, তিনি ভাবেতই পারেননি উচু জমিতে পানি উঠে যাবে। গত ২০ বছরেও এমন পানি দেখিনি। মজুরি বেশি দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
পাইকুরাটি ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক ইকবাল বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ কান্দা পানিতে তলিয়ে গেছে। একদিকে শ্রমিক সংকট অন্যদিকে শ্রমিকের বাড়তি মজুরির কারণে কৃষকেরা দিশেহারা।’
বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ বলেন, ‘২৫ ভাগ জমির পানিতে তলিয়ে গেছে। বাকি ধান কাটতে পারলেও বৈরি আবহাওয়া ও ধান শুকানোর জায়গা পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় ধান শুকানো যাচ্ছে না।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘যাদের জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।’