নাগরীলিপি বিশেষজ্ঞ ও ফোকলোর গবেষক  মোস্তফা সেলিমকে নিয়ে আড্ডা

নাগরীলিপি বিশেষজ্ঞ ও ফোকলোর গবেষক  মোস্তফা সেলিমকে নিয়ে আড্ডা

রয়েল ভিউ ডেস্ক:

এক ভিন্নধারার সাহিত্য আড্ডায় গতকাল বুধবার মেতে ওঠেছিলেন শাহবাজপুর ও তার আশপাশের সাহিত্য-সংস্কৃতিজনেরা। এ আড্ডা ছিল নাগরীলিপি বিশেষজ্ঞ, মুক্তিযুদ্ধ ও ফোকলোর গবেষক মোস্তফা সেলিমের সঙ্গে।  আড্ডা, বক্তৃতা ও গানে গানে প্রাণবন্ত এই সন্ধ্যা পেরিয়ে গড়ায় রাত অবধি। প্রাণময় মধুর আড্ডা যখন শেষ টানলেন এই অঞ্চলের এক বাউল আয়াজ বাঙালি তার শেষ গানে, তখন বাজে রাত ৯টা।

প্রভাত সাহিত্য পরিষদ আয়োজিত আড্ডায় যোগ দিয়েছিলেন নানা পেশার মানুষ। শাহবাজপুর হাইস্কুল ও কলেজের শহীদ মিনার চত্বরে আড্ডায় মোস্তফা সেলিমের তিনটি গ্রন্থ ‘শাহবাজপুর হাইস্কুলের সুবর্ণস্মৃতি’, ‘মুক্তিযুদ্ধে বড়লেখা’ এবং ‘গোলাম হুসনের গান’ ঘিরেই ছিল তার আবর্তন। এই বৈঠকপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বড়লেখা’ গ্রন্থটি এই অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস ধারণ করেছে। গ্রন্থটির নতুন সংষ্করণটিতে মোস্তফা সেলিম যুক্ত করেছেন নতুন নতুন তত্ত্ব ও ছবি। যা গ্রন্থটিকে প্রামাণ্যতা দিয়েছে। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত এ গ্রন্থটি ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কোনো উপজেলার প্রথম ইতিহাসগ্রন্থ।’

অধ্যাপক আব্দুস সহিদ খান বলেন,  ‘সিলেটি নাগরীলিপি নবজাগরণের মাধ্যমে মোস্তফা সেলিম যে অসাধারণ এক অধ্যায় রচনা করলেন, তার জন্য তিনি দেশে বিদেশে নন্দিত হচ্ছেন। তাঁর সহপাঠী এবং বন্ধু হিসেবে আমি গর্ববোধ করি।’ সাবেক অধ্যক্ষ এবং কবি অরুণ চন্দ্র দাস মোস্তফা সেলিমের কাজের প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করে বলেন, ‘তিনি একে একে গবেষণার নানা শাখায় নতুন নতুন ফসল ফলাচ্ছেন। আমাদের কাছে আজ তিনি হাজির করলেন, বাংলা মরমি গানের সাধক গোলাম হুসনকে। গোলাম হুসনের গান সংগ্রহ, সম্পাদনা করে তিনি ‘গোলাম হুসনের.গান’ নামে গ্রন্থটি উপস্থাপন করলেন। গোলাম হুসনের গান বাংলা মরমি সাহিত্যের আদি নিদর্শন। গোলাম হুসনের বাড়ি কুলাউড়া উপজেলার লংলা পরগণার লশকরপুর গ্রামে। তিনি ১৬৯৪ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পাণ্ডুলিপির রচনাকাল ১৭৭৪ সাল।’

‘নির্যাস’-এর সম্পাদক ইসলাম জাভেদ বলেন, ‘মোস্তফা সেলিম বড়লেখার ইতিহাস-ঐতিহ্য, গৌরবগাথা নিয়ে  গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ করেছেন, এ জন্য  এই অঞ্চলের মানুষ হিসেবে তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। চাইব, তিনি যেন এই কাজে আজীবন ব্রতী হোন।’ ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার মাছুম আহমদ বলেন, ‘বিশ বছর থেকে সেলিম ভাইকে অনুসরণ করি। তাঁর থেকে শিখি এবং নিজেকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করি।’ অনুষ্ঠানে আরও অনেকেই মোস্তফা সেলিমের লেখালেখি এবং তাঁর বহুমাত্রিক কর্ম নিয়ে মত ও মন্তব্য জানান। এদের মধ্যে নাট্যজনের সভাপতি তপন চৌধুরী, ডা.আ হ ম জুনায়েদ সিদ্দিকী, প্রভাত সাহিত্য পরিষদের সভাপতি শিবু নাথ, রেদওয়ান আহমেদ, গীতিকার বিদ্যুত রঞ্জন দেবনাথ, কবি মৃণাল কান্তি দাশ, বড়লেখা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সভাপতি এম এ শহিদ, নাট্যজন শহিদুল ইসলাম প্রিন্স, মাহি আবিদ প্রমুখ।

মোস্তফা সেলিম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য তাঁর কাছে মুখ্য নয়, তিনি লেখালেখির  মাধ্যমে দেশ, সমাজ এবং জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা শোধের চেষ্টা করে চলেছেন মাত্র। তাঁর মাধ্যমে নাগরীলিপি নবজীবন পেয়েছে, ইতিহাসের নানা অধ্যায় নতুনভাবে উপস্থাপিত হয়েছে, কিছু বইপত্র রচনার মাধ্যমে তিনি তাঁর চিন্তাকে অন্যদের সঙ্গে যুক্ত করার প্রয়াস পেয়েছেন, এটি তাঁর জীবনে পরমানন্দ। এই আড্ডায় তাঁর কাজের স্বীকৃতি দেখে তিনি মুগ্ধ। 
গল্প কথার ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে চা পর্ব। সঙ্গে গানও। সুর তুলেন শিল্পী তপন চৌধুরী, বাউল শিল্পী আয়াজ বাঙালি, ডা. আ হ ম জুনায়েদ সিদ্দিকী, বাউল শিল্পী তপু। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শাহবাজপুর মডেল কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক রুহেল আহমদ, বড়লেখা আর কে লাইসিয়াম স্কুুলের শিক্ষিকা হালিমাতুস সাদিয়া, শাহবাজপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক জাকির হোসেন, আব্দুর রব সুহেল, সাংবাদিক এবাদুর রহমান জাকির, কবি জুবেদা ইসলাম, নিসচা বড়লেখার সভাপতি রিপন আহমদ, ছড়াকার মারুফ আহমদ, নাট্যজনের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সাংবাদিক আশফাক জুনেদ, ছড়াকার মারুফ আহমদ, অপু দাস, শোভন রুদ্র পাল, আবু তাহের, রিফাত বিন শাওন, সাংবাদিক এবাদুর রহমান জাকির, নাট্যজনের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।  পুরো অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার কাজ করেছেন মোহাম্মদ জাফর আহমেদ।
গান পরিবেশন করেন বাউল শিল্পী আয়াজ বাঙালি, ডা. আ হ ম জুনায়েদ সিদ্দিকী, নাট্যজনের সভাপতি তপন চৌধুরী ও বাউল শিল্পী তপু। অনুষ্ঠানে বক্তারা মোস্তফা সেলিমের গবেষণাধর্মী বইগুলো নিয়ে আলোচনা করেন এবং এসব কাজের জন্য মোস্তফা সেলিমের ভূয়সী প্রশংসা করেন।