নীরবে হারিয়ে যাচ্ছে ব্রিটিশ আপেল

নীরবে হারিয়ে যাচ্ছে ব্রিটিশ আপেল

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
মানুষের কর্মকাণ্ডের জন্যই জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হয়ে বাতাসে মিশছে, বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন দিন বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে আর্দ্রতাও। এত করে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আমাদের প্রকৃতি।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ব্রিটেনের অনেক পুরোনো জাতের আপেল হারানোর পথে। বছর বছর ধরে তাপপ্রবাহ ও খরার কারণে ব্রিটেনের দেশীয় আপেলগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। বেঁচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছে, ব্রিটেনে দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শেষ পর্যন্ত মরে যেতে পারে আপেল গাছগুলো। সেজন্য জাপানের ফুজি, নিউজিল্যান্ডের গালা পিপিন ও রাসেট প্রজাতিকে ব্রিটেনে প্রতিস্থাপন করা হতে পারে। খবর বিবিসি।

১৫০০ সাল থেকে ব্রিটেনে জন্মানো পিপিন বা প্রাচীন ননপারেল প্রজাতির আপেলগুলো পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে। কারণ শীতকালে গাছগুলো সুপ্তাবস্থায় থাকা ও ফল বৃদ্ধি করার জন্য যে পর্যাপ্ত ‘ঠান্ডা’ প্রয়োজন তা পাচ্ছে না। জানুয়ারিতে ব্রিটেনের জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা প্রতিষ্ঠান মেট অফিস ঘোষণা করে যে, ২০২২ ছিল ষষ্ঠ উষ্ণতম বছর কিন্তু মনে হচ্ছে এই বছরটি আগের সব রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যাবে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে ব্রিটেনে অন্যান্য ফসলগুলোর সঙ্গে আপেল গাছগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শীতকালে পর্যাপ্ত ঠান্ডার প্রয়োজন পড়ে এমন কিছু প্রজাতির আপেল গাছ। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রয়াল বোটানিক গার্ডেনে বিজ্ঞানীরা ৪০টি পুরোনো জাতের আপেল গাছ লাগানো হয়।

শীতের আগে আপেল গাছ শক্তি সঞ্চয় করে রাখে। গাছগুলো সেই শক্তি ব্যবহার করে বসন্তে আবার নতুন আবহাওয়ার সঙ্গে সমন্বয় করে।

অবশ্য দূরের দ্বীপ দেশ নিউজিল্যান্ডসহ আশপাশের এলাকায় এখন বিভিন্ন ধরনের আপেল হয়, যারা পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে টিকে থাকতে পারে।

গালা আপেল ব্রিটেনের পুরোনো জাতের তুলনায় অনেক কম শীতল পরিবেশে টিকে থাকতে ও ভালো ফলন দিতে পারে। ৬০০ ঘণ্টা শীতল আবহাওয়া পেলেও ব্রিটিশ আপেলের চেয়ে ভালো ফলন দিতে পারে। এছাড়া জাপানের ফুজি আপেলগুলো ৪০০ ঘণ্টা শীতল পরিবেশে ভালো ফলন দিতে পারে। ফলে উষ্ণায়নের বিশ্বে বেশিরভাগ খামারি এ জাতের আপেল চাষে বেশি আগ্রহী।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কয়েকশ বছর আগে ব্রিটিশ আপেল যেমন পরিবেশ পেত, সেই শীতকাল এখন আর নেই। জাতগুলো এখনকার আবহাওয়ার উপযোগী নয়। এমনকি ফলন কম হওয়ায় অনেক চাষীই বাগান ছেড়ে দিচ্ছেন। এর কোনো বিকল্প আছে কিনা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা পরীক্ষা করে দেখছেন বিজ্ঞানীরা।

জাতগুলোর কোনটি কোন আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে সেটাই লক্ষ্য ছিল। মূলত এই গবেষণায় দেখা যায় গাছগুলো বেশির ভাগই উষ্ণ আবহাওয়ায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আপেলের জন্য নিখুঁত ঠান্ডা সময় ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে কিন্তু হিমাঙ্কের উপরে কিছু ঐতিহ্যবাহী গাছের জন্য প্রায় ১০০০ ঘণ্টা ঠান্ডা সময় প্রয়োজন।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ব্রিটেনের আপেল গাছগুলোকে উদ্ধার করা না গেলে হয়তো এক সময় প্রকৃতি থেকে আরো অনেক দূষ্প্রাপ্য আপেল গাছ হারিয়ে যাবে।