নির্বাচনে যাওয়া দলের পাল্লা ভারী হচ্ছে

নির্বাচনে যাওয়া দলের পাল্লা ভারী হচ্ছে

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
বিএনপি বলেছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এবং ওই নির্বাচন হতেও দেবে না। বিএনপি মনে করছিল যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সব রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকবে এবং শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালের মত একটি পরিস্থিতি তৈরি করবে। বিএনপির অনেক নেতাই বলেছিলেন, ২০১৪ সালের মত আরেকটি নির্বাচন বাংলাদেশ হবে না, পশ্চিমা দেশগুলো এটি হতে দেবে না। সে কারণেই বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে আরও জোরালোভাবে উপস্থাপন করছিলো। ইতিমধ্যে বিএনপি ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপও করেছে এবং সেই সংলাপের মাধ্যমে তাঁরা অভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাপারেও ইতিবাচক মনোভাব পেয়েছে বলে জানিয়েছে। যদিও সেই রাজনৈতিক দলগুলোকে এখন পর্যন্ত বিএনপি মহাসমাবেশে গ্রহণ করেনি। কিন্তু বাংলা ইনসাইডারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, সিংহভাগ রাজনৈতিক দলই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

আওয়ামী লীগ: দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে অংশগ্রহণ করবে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই এবং আওয়ামী লীগ চতুর্থবার ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে আশাবাদী। আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, জনগণ তাদের পক্ষে আছে।

জাতীয় পার্টি: দেশের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। যদিও এই দলটি সরকারের বিভিন্ন রকম সমালোচনা করছেন এবং দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ নানারকম সংকট রয়েছে কিন্তু জাতীয় পার্টির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে দেখা গেছে যে, দলের মধ্যে যে সঙ্কটই থাকুক না কেন, সরকারের সমালোচনা যতই করুক না কেন শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে। জাতীয় পার্টির একটি অবস্থান হলো তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে নীতিগতভাবে বিশ্বাস করে না। কারণ, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যেই স্বৈরাচারী এরশাদের পতন ঘটেছিল। তাই জাতীয় পার্টি কখনোই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না। কাজেই, জাতীয় পার্টির নির্বাচন বর্জনের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

১৪ দলীয় জোট: ১৪ দলীয় জোটের শরিক রাজনৈতিক দলগুলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। শেষ পর্যন্ত তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে নাকি একা একা নির্বাচন করবে সেটা সময় বলে দিবে। কিন্তু নির্বাচনের জন্য জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছে।

মহাজোটের শরিক দলগুলো: মহাজোটের দলগুলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছে এবং তারাও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। এই জোটের মধ্যে বিকল্পধারাসহ আরও বেশকিছু রাজনৈতিক দল রয়েছে।

খেলাফত আন্দোলন ও খেলাফত মজলিস: খেলাফত আন্দোলন ও খেলাফত মজলিস এখন ভোটের মাঠে বড় দল। প্রতিটি নির্বাচনে তারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভোট পাচ্ছে। কোনো সংসদের আসনেই তাঁরা ১০ হাজারের নিচে ভোট পায়নি। এই কারণেই এই দলগুলো এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, প্রার্থী বাছাই করছে। খেলাফত আন্দোলন ও খেলাফত মজলিস হয়তো শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং এবারের নির্বাচনে তাঁরা কয়টি আসন পাবে, এমন আশাবাদও ব্যক্ত করছেন।

ইসলামপছন দল: ইসলামপছন রাজনৈতিক দলগুলো আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং এই নির্বাচনে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করা যায় কিনা, সেটি নিয়েও তারা আলাপ-আলোচনা করছে। শেষ পর্যন্ত দেশের ইসলামী দলগুলো যদি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে তাহলে আগামী নির্বাচনে একটি বড় ধরনের মেরুকরণ ঘটবে এবং সেই নির্বাচন যদি বিএনপি বর্জনও করে তাহলে বিএনপির জন্য খুব একটা লাভ হবে না।

এর পাশাপাশি ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো যেমন- আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বে জেএসডি, কর্নেল অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি, জেনারেল ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন কল্যাণ পার্টি, রেজা কিবরিয়া এবং নুরের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক সংগঠন গণঅধিকার পরিষদসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বললেও এই সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের প্রকাশ্য এবং গোপন যোগাযোগ হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে এই রাজনৈতিক দলগুলো যাদের এক নেতা এক সিট, তারা অংশগ্রহণ করবে বলেই অনেকেই মনে করছেন।