পুতিনের কথিত প্রেমিকাকে নিয়ে রহস্য

পুতিনের কথিত প্রেমিকাকে নিয়ে রহস্য

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
তিনি ছিলেন একজন অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন জিমন্যাস্ট। যাকে ‘রাশিয়ার সবচেয়ে নমনীয় শরীরের নারী’ বলে ডাকা হয়। যিনি পুরুষদের ম্যাগাজিনের জন্য নগ্ন পোজ দিয়েছিলেন। তিনি আলিনা কাবায়েভা, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কথিত প্রেমিকা।

বলা হচ্ছে, তিনি ১২ বছর ধরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রেম করছিলেন এবং গত এপ্রিলে দুটি যমজ সন্তান জন্ম দিয়েছেন। অনেকে বলছেন, ওই দুটি সন্তান পুতিনের সঙ্গে তার চতুর্থ এবং পঞ্চম সন্তান।

এই দুটি সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে থেকেই অবশ্য তিনি অদৃশ্য হয়ে যান। দুমাসের গর্ভবতী অবস্থায় তাকে সর্বশেষ প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এই কথিত প্রেমিকা এবং তাদের সন্তানরা সুইজারল্যান্ডের একটি বিলাস বহুল বাড়িতে লুকিয়ে আছেন। কয়েকদিন আগে এমন খবর প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম পেজ সিক্স, ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইল ও ডেইলি মিররের মতো গণমাধ্যমগুলো।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়- স্বর্ণপদক বিজয়ী জিমন্যাস্ট আলিনা কাবায়েভা (৩৮) তাদের তিন সন্তানের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডে রয়েছেন।

এমনকি সম্প্রতি চেঞ্জ ডট ওআরজি নামে একটি ওয়েবসাইটে আলিনাকে সুইজারল্যান্ড থেকে বহিষ্কারের দাবিতে একটি পিটিশন দাখিল করা হয়েছে।

ওই আবেদনে রাশিয়া, ইউক্রেন ও বেলারুশের লাখ লাখ আবেদনকারী সুইজারল্যান্ড থেকে আলিনাকে তাড়িয়ে দিতে স্বাক্ষর করছেন।

কিন্তু তার বর্তমান অবস্থান নিয়ে রহস্য আরো ঘনীভূত হচ্ছে। কারণ আলিনা এভাবে হুট করেই পর্দার আড়ালে চলে যাওয়ার মানুষ নন।

কেউ কেউ বলছেন, আলিনা ইতালিতে নিজের সন্তানদের লালন-পালন করছেন।

রাশিয়ার সবচেয়ে যোগ্য নারী
২০০০ সালে কিশোরী বয়সেই সিডনি অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদক পান আলিনা। চার বছর পর এথেন্সে সোনা জিতেন। ২০০৪ সালে ম্যাক্সিম নামের একটি ম্যাগাজিনের জন্য নগ্ন শ্যুট করেন।

ফটোগ্রাফার মিখাইল করোলভ মন্তব্য করেছিলেন, ‘আমার এমনকি তাকে বোঝানোরও দরকার হয়নি। সে খুব স্বাভাবিক আচরণ করেছিল। সে ছিল যৌনতায় পূর্ণ’।

এর কিছুদিন পরই পুতিনের সঙ্গে দেখা হয় আলিনার। এসময় মাদক সেবনের অভিযোগে তার ছয়টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ পদকও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এর আগেই অবশ্য একজন পুলিশ অফিসারকে বিয়ে করেছিলেন আলিনা।

পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাত নিয়ে মিডিয়ায় নানা গুঞ্জন শুরু হয়। আলিনার মা সেই গুঞ্জন আরও উস্কে দিয়েছিলেন এই বলে, যে তার ক্রীড়াবিদ মেয়ে কি কোনো পুলিশ অফিসার বা প্রেসিডেন্টের প্রেমে পড়তে পারেন না?
 
২০০৮ সালের বসন্তে পুতিনের প্রাক্তন কেজিবি গুপ্তচর সহকর্মী আলেকজান্ডার লেবেদেভের মালিকানাধীন একটি সংবাদপত্র দাবি করেছিল যে, আলিনা পুতিনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে আছেন।

অবশ্য কিছুদিন পর বিলিয়নেয়ার লেবেদেভ আর্থিক সমস্যার কথা বলে কাগজটি বন্ধ করে দেন। কাগজের একটি সূত্র জোর দিয়ে বলেছিল যে গল্পটি সঠিক ছিল।

পুতিন অবশ্য এসব দাবি অস্বীকার করেছেন এই বলে যে, ‘যারা তাদের নোংরা নাক এবং কামোত্তেজক কল্পনা নিয়ে অন্যের জীবনে প্রবেশ করে’ তাদের জন্য নিন্দা।

২০০৮ সালের জুলাই মাসে সোবেসেডনিক নামের সংবাদপত্র দাবি করে যে, আলিনা ‘তার গর্ভাবস্থার কারণে’ একটি টিভি আইস শোতে অংশগ্রহণ বাতিল করেছে। কিন্তু প্রতিবেদনটি দ্রুত ওয়েবসাইট থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

সে বছরই আলিনা পুতিনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত দুই বন্ধুর সঙ্গে চেক রাজধানী প্রাগ থেকে দক্ষিণ রাশিয়ার শহর সোচিতে উড়ে গিয়েছিলেন বলে প্রমাণ রয়েছে।

তার একজন সঙ্গী ছিলেন রেড আর্মির ডাক্তার দিমিত্রি গোরেলভ, যিনি ২০০০ সালে পুতিনের জারি করা একটি ডিক্রিতে ‘সম্মানিত স্বাস্থ্যসেবা অনুশীলনকারী’ উপাধি পেয়েছিলেন। তবে তাদের যাত্রার কারণ অজানা।

সেসময় নিউইয়র্ক পোস্ট দাবি করে যে, তিনি পুতিনের ছেলে দিমিত্রির জন্ম দিয়েছেন। তারপর, ২০১২ সালে তারা বলে যে, একটি কন্যাও জন্মগ্রহণ করেছে। তৃতীয় আরেকটি শিশু ২০১৫ সালে এসেছে বলে গুজব রয়েছে।

আলিনা সম্ভবত এসব অব্যাহত জল্পনা উপভোগ করছিলেন। কারণ তিনি এসব নিয়ে একদম চুপ ছিলেন। তবে তিনি সন্তান জন্মদানের খবর অস্বীকার করেন।

কেউ কেউ দাবি করেন, আলিনা তার সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন তার বোনের নামে করিয়েছেন।

অনেকে দাবি করেন, ২০১২ সালে আলিনা পুতিনের কাছ থেকে তাদের সম্পর্কের স্বীকৃতি আদায় করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পুতিন স্বীকৃতি দেননি। পুতিন তখনো লুদমিলার সঙ্গে বিবাহিত ছিলেন।
 
২০১৩ সালে পুতিন লুদমিলার সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। এরপর ২০১৪ সালে একবার কয়েকমাসের জন্য উধাও হয়ে গিয়েছিলেন আলিনা। ফিরে এসে আলিনা বলেছিলেন, প্রত্যেকের জীবনেই কিছু গোপন বিষয় থাকে যা সবসময়ই গোপন থাকাই ভাল।

সেসময় তাকে পুতিনের সঙ্গে প্রেমের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আলিনা তা অস্বীকার করেন। তবে ২০১৫ সাল থেকেই তিনি অনেকটা রাশিয়ার ফার্স্ট লেডির মতো জীবন-যাপন করতে থাকেন।

আলিনা ৬ বছর ধরে পুতিনের দল ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টি থেকে রাশিয়ার সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০১৪ সালে রাশিয়ার একটি জাতীয় মিডিয়া গ্রুপ চালানোর জন্য বার্ষিক ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বেতনে তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।