প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব দুর্গাপূজা

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব দুর্গাপূজা

রয়েল ভিউ ডেস্ক: উৎসবমুখর পরিবেশে, ঢাকের বাদ্য, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, মন্ত্রপাঠ, সিঁদুর খেলা ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে বিসর্জন স্থানে জড়ো হন বিপুল সংখ্যক মানুষ। মঙ্গলবার সিলেট নগরীর সুরমা নদীর ঐতিহ্যবাহী চাঁদনিঘাটে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। ছিল বিজয়া দশমী। সকালে দশমী পূজার পর দর্পণ বিসর্জন করা হয়।


মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি Ñ কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই মূলত দুর্গাপূজার তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয় শেষ আনুষ্ঠানিকতায়। 
পুরাণ মতে, বিজয়াদশমীর অন্যতম আয়োজন ‘দেবীবরণ’। রীতি অনুযায়ী, সধবা নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় দশমীর দিন সিঁদুর, পান ও মিষ্টি নিয়ে দুর্গাকে সিঁদুর ছোঁয়ান। দেবীর পায়ে সিঁদুর ছোঁয়ানোর পর সেই সিঁদুর প্রথমে সিঁথিতে মাখান, পরে একে অন্যের সিঁথি ও মুখে মাখেন। মুখ রঙিন করে হাসিমুখে দেবীকে বিদায় জানান, যা সিঁদুরখেলা নামে পরিচিত। সিলেট রামকৃষ্ণ মিশন মন্দিরে সিঁদুরখেলার দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মতো।


দশমী পূজার মধ্য দিয়ে মর্ত্য ছাড়েন দুর্গতিনাশিনী, ফিরেন স্বামীগৃহ কৈলাশে। বছরের আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের পঞ্চমী তিথি থেকে দশমী তিথিতে জগজ্জননী ঊমা দেবী পিতৃগৃহ থেকে বেরিয়ে যান। এবছর শ্রাবণ মাস মলমাস হওয়ায় (একমাসে দুটি অমাবস্যা হলে মলমাস ধরা হয়) একমাস কোন পূজা অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে আশ্বিনের পূজা কার্তিক মাসে হচ্ছে। মহাষষ্ঠীর দিন অকাল বোধনে স্বামীর ঘর কৈলাশ থেকে দেবীর অধিষ্ঠান হয়েছিল ঠাকুরঘরে বা পূজামন্ডপে। ষষ্ঠী থেকে দশমীর বিদায়ের সময় একদিকে আনন্দের জোয়ার, আবার অন্যদিকে বিষাদের সুর বাজে।


প্রতিমা বিজর্সন কার্যক্রমের সূচনা বক্তব্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, আধ্যাত্মিক নগরী সিলেট। ধর্মীয় সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল উদাহরণ। সুদীর্ঘকাল থেকে এই নগরী অঞ্চলের মানুষ এক অন্যের ধর্মীয় উৎসবে অংশ গ্রহণ করে আনন্দ ভাগাভাগি করে উৎসবের সর্বাঙ্গীন সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেন। সিলেটসহ এ অঞ্চলের সম্প্রীতি রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর।  সংগঠনের মহানগর সভাপতি রজত কান্তি গুপ্তের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এপেক্সিয়ান চন্দন দাস, বাবলু দেব এবং এডভোকেট দেবব্রত চৌধুরী লিটনের যৌথ পরিচালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। শারীরিক অসুস্থ থাকায় প্রেরিত লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম ও অনুষ্ঠান পালন করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বর্তমান সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নগরীর চাদনীঘাটে সম্প্রীতির সুবোধ মঞ্চে উপস্থিত হয়ে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, ড. হিমান্দ্রি শেখর রায়, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ ইলিয়াস শরীফ, বিপিএম ( বার) পিপিএম, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক, কাউন্সিলর জগদীশ চন্দ্র দাস, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রনজিত সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ রায় বর্মণ রানা, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আল-আজাদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সহধমিণী সেলিনা মোমেন, ড. দিলিপ কুমার দাস চৌধুরী, তপন মিত্র, সুদীপ দেব। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও  হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক রজত কান্তি ভট্টাচার্য্য, ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মলয় পুরকায়স্থ, জেলা সভাপতি এডভোকেট প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোপিকা শ্যাম পুরকায়স্থ, সাধারণ সম্পাদক কৃপেশ পাল, মহানগর সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দেব, সুব্রত দেব, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রঞ্জন ঘোষ, বিশ্বজিৎ গুন প্রমুখ।
জকিগঞ্জ ঃ জকিগঞ্জ (সিলেট) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, উৎসবমুখর পরিবেশে আবেগ-উচ্ছ্বাস ও চোখের জলে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানিয়েছেন জকিগঞ্জের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। মঙ্গলবার পৌর শহরের কাস্টমঘাটস্থ কুশিয়ারা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসবকে ঘিরে কুশিয়ারা নদীর দু’তীরে ভারত-বাংলার হাজারো মানুষের মিলনমেলা বসে। নদীর ওপাড়ে ভারতের করিমগঞ্জেও দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন দিতে দেখা গেছে। সেখানেও ভারতীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ফলে, আনন্দে মেতে ওঠে সীমান্তঘেঁষা নদীর দু’পাড়ের নানা ধর্ম-বর্ণের হাজারো মানুষ। ভারত-বাংলার নদীর দুই তীরে দু-দেশের প্রতিমা বিসর্জন দেখতে অগণিত লোক সমাগম ঘটে। জকিগঞ্জে বিসর্জন ঘাটে আসেন রাজনীবিদদের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ কর্মকর্তা, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ জকিগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। প্রতিমা নিরঞ্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, ডিবি পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসের ডুবরি দল, আনসার সদস্যরা ছিল সতর্ক অবস্থায়। প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান মঞ্চে উপজেলা পূজা পরিষদের সভাপতি সঞ্জয় চন্দ্র নাথের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রাজন বিশ্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরী, জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম ফয়সাল, জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এহিয়া আল মামুন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির, জকিগঞ্জ থানার ওসি মো. জাবেদ মাসুদ, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বুরহান উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাকিম হায়দর, জকিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী খলিল উদ্দিন, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামিম আহমদ, জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল আহাদ, জেলা পরিষদের সদস্য ইফজাল আহমদ চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কামরুজ্জামান কমরু, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাজনা সুলতানা হক চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা রওশন শ্যামলীসহ জনপ্রতিনিধিগণ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। 
জগন্নাথপুর ঃ জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জগন্নাথপুরে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মঙ্গলবার বিকেলে পৌরশহরের ইকড়ছই  স্পাইস  গেইট এলাকায় দেবী বিসর্জন দেওয়া হয়। এবার জগন্নাথপুর উপজেলায় ৪২টি মন্ডপে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলা পূজা  উদযাপন কমিটির নেতা বিজন কুমার দেব বলেন, ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় দুর্গোৎসব সমাপ্ত হয়েছে। জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মিজানুর রহমান বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা শেষ হয়েছে। 
বিশ্বম্ভরপুর ঃ বিশ্বম্ভরপুর, (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বিশ্বম্ভরপুরে শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।  বেলা ১টার মধ্যেই উপজেলার ২৯ টি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। পূজা সম্পন্ন হওয়ার পর বিজয়া দশমীতে বিকালে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলার সকল পূজামন্ডপের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, সাংবাদিক প্রতিনিধি সহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে শারদীয় শুভেচ্ছামূলক প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মফিজুর রহমান, সহকারী কমিশনার ভূমি শিল্পী রাণী মোদক, থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বণিক, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রহমান, সুনামগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিমল বণিক ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ,  প্রেসক্লাব সভাপতি ও পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার বর্মণ, প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ প্রমুখ।