প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে চা শ্রমিকরা

প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে চা শ্রমিকরা

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি ও পরে ১৩ আগস্ট থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করে আসছেন চা শ্রমিকরা। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও সেটা মানেনি সাধারণ শ্রমিকরা। আন্দোলন সফল করতে সড়ক, মহাসড়ক, রেলপথ অবরোধ করতেও দেখা গেছে তাদের। দাবি আদায়ে গত কয়েক দিন ধরে বেশ উত্তাল ছিল চা বাগানগুলো।

এরইমধ্যে গত বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) রাতে খবর আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (২৭ আগস্ট) চা বাগানের মালিকদের সঙ্গে সভা করবেন। শনিবার বিকেল চারটায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সভা হবে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস।

ফলে শনিবারের সভায় কী সিদ্ধান্ত হবে, সবার দৃষ্টি এখন প্রধানমন্ত্রীর দিকে। চলমান এ আন্দোলন নিরসনেও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তেই দৃষ্টি এখন চা শ্রমিকদেরও।

তবে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে চা শ্রমিকদের ধর্মঘটের ১৪তম দিনে শুক্রবার (২৬ আগস্ট) চা বাগানগুলোর কাজ বন্ধ থাকলেও শ্রমিকদের সভা-সমাবেশ বা বিক্ষোভের মতো কোনো কর্মসূচিতে পালন করতে দেখা যায়নি। বাগান মালিকদের সঙ্গে শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে বসার ঘোষণার পর এক ধরনের নীরব ধর্মঘট পালন করছেন শ্রমিকরা।

অপরদিকে এবার ভরা মৌসুমে মজুরি বৃদ্ধির টানা ১৭ দিনের শ্রমিক আন্দোলনের ফলে শত শত কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে চা শিল্পে। টানা শ্রমিক আন্দোলনের প্রথম দিকে সবগুলো চা বাগানে উত্তোলনকৃত কাঁচা চায়ের পাতা প্রক্রিয়াজাত করতে না পারায় পঁচে ও শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

এছাড়া চা প্লান্টেশন এলাকা থেকে কচি চায়ের পাতায় উত্তোলন করতে না পারায় এগুলোও এক থেকে দেড় ফুট লম্বা হয়ে গেছে। এ পাতা আর চায়ের জন্য প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব নয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চা বাগান ব্যবস্থাপক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘টানা ১৭ দিনের কর্মবিরতিতে ১৬৭টি চা বাগানের প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। দ্রুত সময়ে সমস্যার সমাধান করে চা শ্রমিকরা কাজে না ফিরালে চা শিল্প ধ্বংসের মুখে চলে যেতে পারে।’  অন্যদিকে চা শ্রমিকরা জানান, তারা দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি তখনই পান, যখন বাগানের নির্ধারিত দৈনিক ন্যূনতম ২৪ কেজি পাতা সংগ্রহ করতে পারেন। ২৪ কেজির নিচে হলে মজুরিও অনুপাতে কম আসে। তবে সাধারণত ভরা মৌসুমে একজন শ্রমিক ৫০ কেজি পর্যন্ত পাতা তুলতে পারেন। কারণ গাছে তখন কচি পাতা বেশি থাকে। এ সময় আয়ও তাদের বেশি হয়।

চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ সূত্রে জানা যায়, চলমান ধর্মঘটের কারণে দেশের চা বাগানগুলোর দৈনিক কয়েক কোটি টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে। এ পর্যন্ত শতকোটি টাকার বেশি চা নষ্ট হয়ে গেছে। চলমান সংকট সমাধান করে নতুন করে কাজ শুরু করা হলেও অন্তত দেড় মাস চা উৎপাদন শূন্যের কোটায় থাকবে। প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি চা পাতা উত্তোলন না হওয়ায় এসব পাতা কেটে ফেলতে হবে। সব মিলিয়ে চলমান শ্রমিক অসন্তোষ চা শিল্পের জন্য বড় ধরণের ক্ষতি হবে।   বাংলাদেশ চা ছাত্র যুব পরিষদের নেতা মোহন রবিদাস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনরত চা শ্রমিকেরা মজুরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ঘোষণা শুনতে চান। বাগান মালিকদের সঙ্গে শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে বসবেন, তাই প্রধানমন্ত্রীর সম্মানার্থে সভা-সমাবেশ ছাড়াই শুক্রবার ও শনিবার ধর্মঘট পালন করবেন শ্রমিকরা।’

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নির্বাহী উপদেষ্টা রামভজন কৈরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সবাই প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই সবকিছু বিবেচনা করে একটি মানসম্মত মজুরি নির্ধারণ করবেন। আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সাধারণ চা শ্রমিকেরা সেটাই মেনে নেবেন।’