পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থিতার দৌড়ে এগিয়ে জনসন-সুনাক

পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থিতার দৌড়ে এগিয়ে জনসন-সুনাক

রয়েল ভিউ ডেস্ক:

ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থিতার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) দায়িত্ব নেয়ার মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস।

এ ঘটনার পর থেকেই এ পদ নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে তোড়জোর শুরু হয়ে গেছে। সময়ও খুব কম। এক সপ্তাহের মধ্যেই হবে কনজারভেটিভ দলের নেতা নির্বাচন।

ট্রাসের জায়গায় যারা আসতে চান তারা এই দৌড়ে নামার জন্য প্রয়োজনীয় ১০০ কনজারভেটিভ আইনপ্রণেতার সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

জনমত জরিপগুলোতে এরই মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টির জনপ্রিয়তায় ধস নামতে দেখা গেছে। জাতীয় নির্বাচন হলে দল বিপর্যয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। তাই সেপথে না গিয়ে দলীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়া হচ্ছে, যিনি জিতবেন তিনি হবেন ছয় বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্যের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী।

বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হতে পারে আগামী সপ্তাহের সোমবার কিংবা শুক্রবারে। কোনও সম্ভাব্য প্রার্থীই এখনও প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড়ে নামার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেননি।

কিন্তু তারপরও সাবেক প্রধানমন্ত্রী জনসন, যিনি মাত্র মাস তিনেক আগেই ক্ষমতা থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তার নামই আবার সামনের সারিতে উঠে এসেছে। পাশাপাশি শোনা যাচ্ছে ঋষি সুনাকের নামও।

ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির (টোরি) বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা জনসনেরই প্রধানমন্ত্রী পদে ফিরে আসা উচিত বলে ইতোমধ্যে মত প্রকাশ করেছেন।

কনজারভেটিভ আইনপ্রণেতা পল ব্রিসটো এলবিসি বেতারকে বলেছেন, তিনি মনে করেন- জনসন যে পরিস্থিতি বদলাতে পারেন সেটি তিনি তার ট্র্যাক রেকর্ডেই প্রমাণ করেছেন। তিনি (জনসন) আবারও সেটি করতে পারবেন।

তাছাড়া, বরিস জনসন এমন একজন বক্তিত্ব যাকে বিরোধীদল লেবার পার্টি ভয় পায়। জনসন সাধারণ নির্বাচনে দাঁড়ালে জিতে যেতে পারেন- লেবার পার্টি এমনটাই আশঙ্কা করে বলেও উল্লেখ করেন ব্রিস্টো।

যুক্তরাজ্যে সংকট সামাল দিতেই জনসন ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু তার তিনবছরের প্রধানমন্ত্রীত্বের মেয়াদ কেলেঙ্কারি আর অসদাচরণের অভিযোগ ভরা। সেকারণে এবার ভোট পাওয়া তার জন্য কঠিন হতে পারে। জনসনের সাবেক এক উপদেষ্টা বলেছেন, তার (জনসন) প্রয়োজনীয় ১০০ এমপি’র সমর্থন জোগাড় করা সম্ভব হবে না।

তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, জনসন কেলেঙ্কারির মুখে পদত্যাগ করে বিদায় নিলেও তিনিই এখন পর্যন্ত কনজারভেটিভ দলের সদস্যদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় নেতা। সেকারণে বেশ কয়েকজন এমপি জনসনকেই সমর্থন দিয়েছেন।

ওদিকে, ঋষি সুনাকের নাম সামনের সারিতে উঠে আসারও বেশি কিছু কারণ আছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী হিসাবে তার অর্থনৈতিক সংকট সামাল দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। কোভিড-১৯ মহমারীর কঠিন সময়েও তিনি দেশকে নির্দেশনা দিয়েছেন।

তাছাড়া, গতবারের কনজারভেটিভ দলের নির্বাচনে সুনাক বেশিরভাগ এমপি’রই ভোট পেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত বিজয়ী ট্রাস হলেও তার সঙ্গে সুনাকের ভোটের ব্যবধান ছিল কম। সুনাকের প্রতি এমপিদের যে আস্থা আছে সেটিই তাকে এবারও জয়ের পথে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি এবার দ্রুতই নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করতে চায়। তাই নতুন নেতা বেছে নেওয়া হয়ে যেতে পারে আগামী সোমবারের মধ্যেই। আর তা করার জন্য পার্লামেন্টের অন্তত ১০০ জন সদস্যের সমর্থন আছে এমন প্রার্থীরাই শুধু নেতৃত্ব প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন বলে নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

এর অর্থ হচ্ছে, নেতৃত্ব প্রতিযোগিতার জন্য দলটি থেকে সর্বোচ্চ তিন জন প্রার্থী হতে পারবেন। কারণ, হাউস অব কমন্সে টোরি দলের মোট ৩৫৭ জন এমপি আছেন। সোমবারের মধ্যে যদি মাত্র একজনও ওই পরিমাণ সমর্থন যোগাড় করতে পারেন, তাহলেও তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরাসরি ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাবেন।

আবার যদি সোমবারের মধ্যে দুইজন প্রয়োজনীয় সমর্থন জোগাড় করতে পারেন, তাহলে ওইদিনই কনজারভেটিভ এমপিদের ভোট হবে। আর তিনজন প্রার্থী হলে সেক্ষেত্রে সবচেয়ে কম এমপি’র ভোট যিনি পাবেন তিনি প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়বেন।

এরপর বাকি দুই প্রার্থীর মধ্যে পছন্দের প্রার্থী কে তার নির্দেশসূচক ভোট দেবেন কনজারভেটিভ এমপি’রা। এরপর কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা অনলাইনে ভোট দেবেন। এই ভোটে যিনি জয়ী হবেন তিনিই হবেন পার্টির নেতা এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র: রয়টার্স