বঙ্গবন্ধু টানেলের দক্ষিণ টিউবের কাজের সমাপ্তি ঘোষণা

বঙ্গবন্ধু টানেলের দক্ষিণ টিউবের কাজের সমাপ্তি ঘোষণা

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
বহুল প্রত্যাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দক্ষিণ টিউবের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। 

শনিবার (২৬ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভার্চুয়ালি দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়াও টানেলস্থলে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

আগামী জানুয়ারিতে টানেলের সব কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জানুয়ারি মাসের মধ্যেই টানেলটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।

সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেলটি বাংলাদেশের গর্ব, মর্যাদা এবং একটি মেগা কাঠামো সম্পন্ন করার সক্ষমতার প্রতিফলন ঘটাবে।

তিনি বলেন, ‘এক নগর, দুই শহর’ নকশার ভিত্তিতে চীনের সাংহাই নগরীর মতো বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে নির্মাণ করার প্রকল্প নিয়েছে সরকার।মঞ্জুর বলেন, টানেলের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক নেটওয়ার্কে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজার, বাঁশখালী ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কর্ণফুলী টানেল দিয়ে আনোয়ারা ক্রসিং হয়ে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

তিনি বলেন, এতে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি চাকায় গতি সঞ্চারিত হবে এবং জীবনযাত্রার মান ও কর্মসংস্থান বাড়বে। মঞ্জুর উল্লেখ করেন, দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির উন্নয়নে এই টানেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, টানেলের ভেতরের বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়েছে এবং শুধু বৈদ্যুতিক লাইন ও কিছু কারিগরি কাজ বাকি আছে। তিনি বলেন, প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা প্রতিদিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দ্রুত কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, টানেলটি জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ব্যাপক কর্মসংস্থান, পর্যটন এবং শিল্পায়নের ফলে অর্থনীতি একটি নতুন মাত্রা পাবে।

হারুনুর রশীদ বলেন, টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম বন্দর এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত বিমানবন্দরের সঙ্গে একটি উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

তিনি বলেন, পূর্বাঞ্চলের শিল্প কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্য ও কাঁচামাল চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরে নিয়ে যেতে সময় ও খরচ কম লাগবে।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন এবং ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন।

টানেলটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং আনোয়ারায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মধ্যে নদীর তলদেশে সংযোগ স্থাপন করছে।

মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার এবং এতে দুটি টিউব রয়েছে। প্রতিটিতে দুটি লেন রয়েছে। এই দুটি টিউব তিনটি জংশনের (ক্রস প্যাসেজ) মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে। এই ক্রস প্যাসেজগুলো জরুরি পরিস্থিতিতে অন্যান্য টিউবগুলোতে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিমি এবং ভিতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার।

মূল টানেলের পশ্চিম এবং পূর্ব দিকে একটি ৫ দশমিক  ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে।

বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রায় ১০ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। চীনের এক্সিম ব্যাংক ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি অর্থ দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।