বার বার প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রবাসী সিলেটীরা

বার বার প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রবাসী সিলেটীরা

রয়েল ভিউ ডেস্ক :
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী সিলেটের এই প্রবাসীরা বার বার নানাভাবে প্রতারণা ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আবার কখনও নিজেদের স্বজন, আবার কখনও প্রতিবেশী ও পরিচিত জন দ্বারা। সবমিলিয়ে ভালো নেই সিলেটের প্রবাসীরা। সুরক্ষিত নেই তাদের অর্থ-সম্পদ। 

এক সময় রাজনৈতিক ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর শিকার হতেন তারা। এখন স্বজন ও প্রতিবেশীদের দ্বারাই বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ফলে অনেকেরই দেশের প্রতি আগ্রহ কমে আসছে। আস্থাও হারাচ্ছেন স্বজনদের ওপর থেকে। দেশে বিনিয়োগের প্রশ্ন উঠলেই পিছু হটছেন।

করোনাকালেও প্রায় অর্ধশত প্রবাসী সিলেট অঞ্চলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়ে কখনও নিয়েছেন আইনের আশ্রয়, কখনও বা গণমাধ্যমের। সর্বশেষ গত দুই মাসে বেশ কয়েকজন প্রবাসী অভিযোগ করেন তাদের স্বজনদের বিরুদ্ধে। এছাড়া এক বছরে সিলেটের জেলা প্রশাসকের প্রবাসী কল্যাণ শাখা ও ডিআইজির প্রবাসী কল্যাণ সেলে অভিযোগ করেছেন অর্ধশত প্রবাসী। এসব অভিযোগের ২০ ভাগ নিষ্পত্তি করা হলেও ৮০ ভাগই হয়নি। এর আগে ২০১৯ সালে ৩৯৮ জন প্রবাসী প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন।

প্রতারণা ও হয়রানির শিকার এসব প্রবাসীর একজন ছাতকের ভাতগাঁও ইউনিয়নের হায়দরপুর গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল গণি ওরফে আলী গণি। ১৯৮৫ সালে নগরীর সুবিদবাজারের লন্ডনি রোডে জায়গা কিনে বাড়ি বানিয়ে বসবাস শুরু করেছিলেন। কিন্তু বাসার দায়িত্বে থাকা তার ছোট ভাই সাজন আহমদ ওরফে আব্দুল ওহিদ ওরফে ওয়াহিদ আহমদ (পাসপোর্ট ও এনআইডি অনুযায়ী) হয়ে ওঠেন 'ঘরের শত্রু বিভীষণ'। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নানা কৌশলে বড় ভাই গণির ওই বাসাটি নিজের নামে করে নেন সাজন। এজন্য তিনি নিজের নামের সঙ্গে আব্দুল গণি যুক্ত করে কাবিননামাসহ নানা কাগজপত্রও পরিবর্তন করেন। এ নিয়ে মামলা হলে সাজনকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ।

ভাইয়ের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখলের চেষ্টাসহ নানা অভিযোগ করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী, নগরীর চৌকিদেখির বাসিন্দা কয়েছ আহমদ। প্রবাসী সেলে অভিযোগ ছাড়াও গত ৩০ অক্টোবর যুক্তরাজ্য প্রবাসী কয়েছ আহমদ সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি জানান, ১৯৯১ সালে তার ছোট ভাই প্রবাসী দিলওয়ারের সঙ্গে বিয়ে হয় দক্ষিণ সুরমার গোটাটিকরের শাহনাজ বেগম রিনির। ৪ মাসের মাথায় বিয়ে ভেঙে যায়। পরে রিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ২০০৭ সালে তার দ্বিতীয় স্বামী মারা যান। এরপর রিনি তার ছেলেকে নিয়ে তাদের কাছে আশ্রয় চান। তারা তাদের বাসায় থাকতে দেন ও ছেলের লেখাপড়ার ব্যয়ভারও গ্রহণ করেন। কিন্তু ১০ জুন তিনি দেশে ফিরে বাসার অনেক জিনিসপত্র দেখতে পাননি। এ নিয়ে মা ও ছেলের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয়। এ ঘটনায় প্রথমে এয়ারপোর্ট থানায় তিনি জিডি করেন। সে সময় তিনি জানতে পারেন, তাকে আসামি করে ২০২০ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন রিনি। মামলাটি পিবিআই তদন্ত করে সত্যতা পায়নি। ছেলে জামিল ও রিনি সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন কয়েছ। অবশ্য রিনি তার ছেলে জামিলকে প্রবাসী দিলওয়ারের ঔরসজাত সন্তান দাবি করে তার অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়েছেন।

আপন মামা ও মামাতো ভাইদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে সম্পত্তি দখল ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেছেন বিশ্বনাথের কাউপুরের যুক্তরাজ্য প্রবাসী আশিক উদ্দিন। তিনি জানান, যুক্তরাজ্যে থাকায় তার সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন মামা আরশ আলী। গত ৬ বছরে বিভিন্ন সম্পদ তিনি বিক্রি করে দেন। ২০১৫ ও ২০১৯ সালে প্রায় ২৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০১৯ সালে দেশে ফিরলে ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর বাড়ি দখলের জন্য হামলা করেন মামা ও তার লোকজন। ১৭ ডিসেম্বর তিনি এ ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।

শুধু গণি, দিলওয়ার, ইব্রাহিম কিংবা আশিক নন, এ রকম অনেক প্রবাসী বছরের পর বছর ধরে নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সম্পদ ও টাকা খুইয়ে দেশ থেকে চলে যাচ্ছেন। ফিরলেও আবার হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন।

এ বিষয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, প্রবাসীদের অভিযোগগুলো আসার পর বিবেচনা করে সংশ্নিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়। কিছু অভিযোগ সমাধান করা সম্ভব হলেও অধিকাংশ সম্ভব হয়না। কারণ সম্পত্তি ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি আইনের সঙ্গে জড়িত।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত দুই বছরে সিলেটের ডিআইজি অফিসের প্রবাসী কল্যাণ সেল ও জেলা প্রশাসকের প্রবাসী কল্যাণ শাখায় অভিযোগ করেছেন ৫৯ জন। করোনা মহামারি থাকায় এ সংখ্যা কম বলে জানিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা। এর আগে ২০১৮ সালে ডিআইজির কাছে চার জেলা থেকে ৬৮, জেলা প্রশাসকের কাছে ১৬৯ ও ২০১৯ সালে ১৫১ জন প্রবাসী আবেদন করেন। সবশেষ ২০২০ ও ২০২১ সালে উভয় শাখায় ৯৯ জন প্রবাসী প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছেন।

প্রবাসীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে ডিআইজি সিলেট রেঞ্জ অফিসের এসপি ও প্রবাসী সেলের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, প্রবাসীদের অধিকাংশ অভিযোগ তাদের সম্পত্তি বা জায়গা-জমি নিয়ে। এসব বিষয় সমাধানে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। বাকি বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তার মাধ্যমে সমাধান করে দেওয়া হয়।