বিশ্বনাথে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদযাপিত হলো গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘পলো বাওয়া’ উৎসব

বিশ্বনাথে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদযাপিত হলো গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘পলো বাওয়া’ উৎসব

রয়েল ভিউ ডেস্ক : বিশ্বনাথে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় উদযাপিত হলো গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘পলো বাওয়া’ উৎসব। ঝপ ঝপ শব্দের তালে তালে গতকাল শনিবার উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের দক্ষিণের বিলে এ পলো বাওয়া উৎসব পালিত হয়েছে। শিকড়, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের টানে প্রতি বছরই আয়োজন করা হয় এই উৎসবের। বাঁশ আর বেতের সমন্বয়ে তৈরী করা পলো ও উড়াল-চিটকি-ঠেলা জাল দিয়ে এক সাথে মাছ শিকার করাই গ্রামবাসীর প্রধান আনন্দের উৎসব।

গোয়াহরি গ্রামের ঐতিহ্য অনুযায়ী প্রায় দু’শ বছরেরও অধিক কাল ধরে বাংলা বছরের প্রতি মাঘ মাসের পহেলা তারিখে এই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। প্রতি বছর মাঘ মাসে আনন্দের এই উৎসব পালিত হলেও এবার বিলের পানি কমতে থাকায় এবং মাছের সংখ্যা বেশী থাকায় শনিবার উৎসবটি পালন করেন গ্রামবাসী। এতে অংশগ্রহণ করেন গ্রামের কয়েক শতাধিক সৌখিন মৎস্য শিকারী।
সরেজমিনে বিলে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই বিলের ধারে জড়ো হয়েছেন মাছ শিকারীরা। এতে দলভুক্ত হয়েছে শিশু-কিশোরও। মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম পাশে নিয়ে পূর্ব নির্ধারিত সময়ের প্রহর গুনছেন সকলেই। সময় হলেই একযোগে ‘আনন্দ চিৎকার’ দিয়ে বিলে নামার অপেক্ষায় সবাই। উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে বিলের ধারে ভিড় জমিয়েছেন উৎসুক জনতা।

সকাল সাড়ে ১০টায় ভূ-দৌড়ে পলো নিয়ে বিলে ঝাঁপ দেন শিকারীর দল। দীর্ঘসময় জলে মাছ শিকারে মেতে উঠেন তারা। ঝপ ঝপ শব্দের তালে তালে চলতে থাকে পলো বাওয়া। প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী এ ‘পলো বাওয়া উৎসবে’ অংশ নেন গোয়াহরি গ্রামের সব বয়সী পুরুষ। এসময় সৌখিন শিকারীদের পলোতে ধরা পড়ে বোয়াল, রুই, কাতলা, শোল, গজার, বাউশ ও ব্রিগেডসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। 
এছাড়াও জাল দিয়ে ঘোলা জলে উপরে ভেসে উঠা প্রচুর টেংরা-পুঁটিও ধরা হয়। বিলে পানি কম থাকায় অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মাছের সংখ্যা ছিল বেশী। একেকটি মাছ শিকারের সাথে সাথে চিৎকার করে নিজেদের আনন্দ প্রকাশ করেন শিকারীরা। তাদের ওই আনন্দের সাথে তাল মেলান বিলের তীরে অপেক্ষমান গ্রামের মুরব্বী, মহিলা ও শিশুরা। দূর থেকে আসা অনেকের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে বিলের পাড়ে দাঁড়িয়ে মাছ ধরা উপভোগ করতে দেখা যায়। শুধু তাই নয় প্রতি বছর গ্রামের অনেক প্রবাসীও দেশে এসে এই উৎসবে অংশ নেন। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
গ্রামবাসী জানান, পলো বাওয়া উৎসব গোয়াহরি গ্রামের একটি ঐতিহ্য। গ্রামবাসী পূর্বপুরুষের আমল থেকে এই উৎসব পালন করে আসছেন। ‘পলো উৎসব’র এক সপ্তাহ পূর্বে পঞ্চায়েতের সভা ডেকে শৃঙ্খলা রক্ষায় নেয়া হয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। সভার পরপরই উৎসবের ন্যায় গ্রামের ঘরে ঘরে পলো তৈরী, মেরামত ও সংগ্রহের কাজ চলে। এরপর পূর্ব নির্ধারিত দিনেই আনুষ্ঠানিকভাবে একযোগে সবাই মাছ ধরতে বিলে নামেন।
পলো বাওয়া উৎসবকে কেন্দ্র করে গোয়াহরি গ্রামে গত কয়েকদিন ধরে উৎসবের আমেজ রিবাজ করছিল। এই উৎসব চলবে ১৫দিন পর্যন্ত। তবে গ্রামবাসীর ঐতিহ্য অনুযায়ী আগামী ১৫ দিন পর ২য় ধাপে পলো বাওয়া হবে। এই পনের দিনের ভিতরে প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার বিলে হাত দিয়ে মাছ ধরা হবে এবং কেউ চাইলে ছোট ছোট জাল (হাতা জাল) দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন।
গোয়াহরি গ্রামের মুরব্বি হাজী ছুরত খান জানান, আমাদের উপজেলায় এটিই সব চেয়ে বড় ‘পলো বাওয়া উৎসব’। বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা গ্রামবাসী এই উৎসব পালন করে আসছি। গ্রামবাসীরা মিলে প্রতিবছর এ বিল থেকে উৎসবের মতো দেশীয় প্রজাতির স্বাদ আহরণ করে থাকি। যুগ যুগ ধরে এই উৎসব পালিত হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাসিনুজ্জামান নুরু জানান, পলো বাওয়া উৎসব আমাদের গ্রামের একটি ঐতিহ্য। এই উৎসব দেখতে প্রতি বছর গ্রামের অনেক প্রবাসী দেশে আসেন। দীর্ঘদিন পর এবার এই উৎসবে অংশ নিতে পেরে আমি আনন্দিত।

- তথ্য সূত্র: দৈনিক সিলেটে ডাক

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh   Helpline : +88 01712 88 65 03