বড়লেখার চান্দগ্রাম হাফিজিয়া  মাদ্রাসার নাম পরিবর্তনে এলাকার  একাংশে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে

বড়লেখার চান্দগ্রাম হাফিজিয়া  মাদ্রাসার নাম পরিবর্তনে এলাকার  একাংশে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে

বড়লেখা প্রতিনিধি:

বড়লেখা উপজেলার নিজ বাহাদুরপুর ইউনিয়নের চান্দগ্রামে ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘চান্দগ্রাম হাফিজিয়া মাদ্রাসা’র সাম্প্রতিক নাম পরিবর্তনে এলাকায় দু’টি পক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। একপক্ষ চাচ্ছে প্রতিষ্ঠালগ্নের ও মাদ্রাসার রেজিষ্ট্রীকৃত ভুমি দলিলে যে নাম রয়েছে সে নামেই মাদ্রাসাটির নাম বহাল থাকুক। আরেক পক্ষ চাচ্ছে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম-এ দ্বীন মরহুম হাফিজ আব্দুল বারী (বড় হাফিজ ছাহেব) এর নামে ‘চান্দগ্রাম হাফিজ আব্দুল বারী (বড় হাফিজ ছাহেব রহ.) হাফিজিয়া মাদ্রাসা নামকরণ করতে। আর ওই পক্ষ সম্প্রতি মাদ্রাসার নতুন নামকরণ করেছে। এতে এলাকা একটি অংশে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এই চাপা ক্ষোভ যেকোন সময় প্রকাশ্য রূপ নিতে পারে বলে অনেকেই আশংকা করছেন।    

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ১৯২৮ সালে চান্দগ্রাম এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম-এ দ্বীন মরহুম হাফিজ আব্দুল বারী বড় হাফিজ ছাহেব নিজ বাড়িতে ‘চান্দগ্রাম হাফিজিয়া মাদ্রাসা’ প্রতিষ্ঠা করে অবৈতনিক পাঠদান চালিয়ে যান। এ মাদ্রাসা থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী কোরআনে হাফেজ হয়ে বেরিয়ে যান। সময়ের পরিবর্তনে চান্দগ্রাম হাফিজিয়া মাদ্রাসায় হিফজ বিভাগের শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়তে থাকে। তখন দেশ-বিদেশের দানশীল ব্যক্তিদের চাঁদায় মাদ্রাসার স্থায়ী ক্যাম্পাস ও এতিমখানার জন্য চান্দগ্রাম এ,ইউ ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার উত্তর দিকে ২০১৭ সালে ২৩ শতাংশ ভুমি ক্রয় করা হয়। ওই জমিতেই মাদ্রাসা ভবন তৈরী করে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করা হয়। 

সম্প্রতি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ আব্দুল বারী বড় হাফিজ ছাহেবের পরিবারের সদস্যরা (উত্তরসুরি) ও শুভাকাংখিগন মাদ্রাসাটি তাঁর নামে নামকরণের তৎপরতা শুরু করলে এলাকায় দু’টি পক্ষের সৃষ্টি হয়। এব্যাপারে এলাকায় এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সর্বসম্মতিতে প্রবীন মুরব্বি আব্দুল আহাদ বিএসসিকে প্রধান করে ৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। মাদ্রাসার নামকরণ জটিলতা নিরসনে গঠিত আহ্বায়ক  কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ছাড়াই একটি পক্ষ মাদ্রাসা ভবন থেকে ‘চান্দগ্রাম হাফিজিয়া মাদ্রাসা’ মুছে ‘চান্দগ্রাম হাফিজ আব্দুল বারী (বড় হাফিজ ছাহেব রহ.) হাফিজিয়া মাদ্রাসা নামকরণ করেন। এতে একটি পক্ষে ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।

মাদ্রাসা কমিটির সেক্রেটারী মাওলানা সাইদুল আলম নতুন নামকরণে এলাকায় দু’টি পক্ষ সৃষ্টির সত্যতা স্বীকার করে জানান, ইতিপূর্বে এ সংক্রান্ত অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তেই মাদ্রাসার নতুন নামকরণ হয়েছে। গ্রামের বৃহৎ অংশ নয়, ক্ষুদ্র একটি অংশ চাচ্ছে মাদ্রাসাটি আগের নামেই থাকুক। তবে তা মীমাংসিত। মাদ্রাসার নামে রেজিষ্ট্রীকৃত দলিল বর্তমান নামে সংশোধন করা হবে বলে তিনি জানান। 

নামকরণ জটিলতা নিরসনে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি এলাকার প্রবীন মুরব্বি আব্দুল আহাদ বিএসসি জানান, বড় হাফিজ সাহেব ১৯২৮ সালে চান্দগ্রাম হাফিজিয়া মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং আমৃত্যু বিনা বেতনে দ্বীনি শিক্ষা দিয়ে গেছেন। ১৯৮২ সালে তিনি মারা যান। চাইলেওতো তিনি নিজেই তার নামে মাদ্রাসার নাম দিয়ে যেতে পারতেন। একই নামে ২০১৭ সালে মাদ্রাসার নামে জমি ক্রয় করা হয়। হঠাৎ ২০২২ সালে কিছু ব্যক্তি মাদ্রাসাটির নতুন নামকরণে উৎসাহী হয়ে উঠেন। এ নিয়ে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। সমাধানের লক্ষে এলাকায় সাধারণ সভা ডেকে ৭ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ওই কমিটি ঐক্যমতে পৌঁছতে পারেনি। বিষয়টি অমীমাংসিত থাকায় পঞ্চায়েত মসজিদে সর্বস্তরের গ্রামবাসী-মুছল্লিদের নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে অধিকাংশ মুসল্লিরা মাদ্রাসার পূর্বের নাম বহাল রাখার সম্মতি দেন। কিন্তু তারা উল্টো কাজ করেছেন। মাদ্রাসাটির নতুন নাম দিয়েছেন। যা তার কাছে সঠিক বলে মনে হয়নি।