ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ছাতকে ফের বন্যায় নিম্নাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ছাতকে ফের বন্যায় নিম্নাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ছাতকে ফের বন্যায় নিম্নাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রায় এক মাসের ব্যবধানে ফের বন্যায় তলিয়ে গেছে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। বর্তমানে সুরমাসহ পাহাড়ি চেলা ও পিয়াইন নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। ছাতক-সিলেট ও ছাতক-সুনামগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন অংশে প্রায় আড়াই ফুট উচ্চতায় বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতকের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন অংশে সড়কের উপর দিয়ে চলাচল করছে নৌকা। শাক-সবজির বাগান, বীজতলাসহ গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। বাড়ির আঙ্গিনাসহ নিম্মাঞ্চলে বাস করা মানুষের বসত ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি মানুষের জন্য ৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলার খবর পাওয়া গেছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ৫শতাধিক বন্যা কবলিত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুকনো খাবার বিতরণ করার খবর পাওয়া গেছে। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর, নোয়ারাই ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার অধিকাংশ মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্যানুযায়ী বর্তমানে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৬০ সেন্টিমিটার, চেলা নদীর পানি বিপদসীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার ও পিয়াইন নদীর পানি ১৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ডাইকি, বটেরখাল ও বোকা নদীর পানিও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমাসহ এসব নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার শতাধিক ছোট-বড় সবজী বাগান। শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট ছাড়া গোটা শহরের রাস্তা-ঘাট ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। শহরের রাস্তায় এখন নৌকা চলাচল করছে।

শহরের ফকিরটিলা-মাছিমপুর বাজার সড়ক, ইসলামপুর ইউনিয়নের ছনবাড়ি-রতনপুর সড়ক, ছনবাড়ি-গাংপাড়-নোয়াকোট সড়ক, কালারুকা ইউনিয়নরে মুক্তিরগাঁও সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, আমেরতল-ধারন সড়ক, পালপুর-খুরমা সড়ক, বোকারভাঙ্গা-সিরাজগঞ্জ সড়কসহ উপজেলার অনেক সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। জামুরা, চানপুর, নোয়াগাঁও, ভাসখলা, করচা, গোয়ালগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বৈশাকান্দি এফআইভিডিবি স্কুল, নোয়ারাই ইউনিয়নের চরভাড়া মাদ্রাসা, লামাপাড়া ব্র্যাক স্কুল সহ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়েছে।

ইসলামপুর ইউনিয়নের রতনপুর, নিজগাঁও, গাংপাড়, নোয়াকোট, বৈশাকান্দি, বাহাদুরপুর, ছৈদাবাদ, রহমতপুর, দারোগাখালী, পৌরসভার হাসপাতাল রোড, শাহজালাল আবাসিক এলাকা, কানাখালী রোড, শ্যামপাড়া, মোগলপাড়া, তাতিকোনা, বৌলা, লেবারপাড়া, নোয়ারাই ইউনিয়নের বারকাহন, বাতিরকান্দি, চরভাড়া, কাড়–লগাঁও, লক্ষীভাউর, চানপুর, মানিকপুর, গোদাবাড়ী, কচুদাইড়, রংপুর, ছাতক সদর ইউনিয়নের বড়বাড়ী, আন্ধারীগাঁও, মাছুখালী, তিররাই, মুক্তিরগাও, উত্তর খুরমা ইউনিয়নের আমেরতল, ঘাটপার, গদারমহল, রুক্কা, ছোটবিহাই, এলঙ্গি, রসুলপুর, শৌলা, চরমহলা ইউনিয়নের ভলবপুর, চুনারুচর, চরচৌলাই, হাসারুচর, প্রথমাচর, সিদ্ধারচর, চরভাড়ুকা, দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের হরিশ্বরণ, হাতধনালী, রাউতপুর, ধনপুর, চৌকা, রামচন্দ্রপুর, হলদিউরা, কালারুকা ইউনিয়নের রামপুর, মালিপুর, দিঘলবন, আরতানপুর, রংপুর, মুক্তিরগাও, ভাতগাঁও ইউনিয়নের জালিয়া, ঘাঘলাজুর, হায়দরপুর, বাদে ঝিগলী, সিংচাপইড় ইউনিয়নের গহরপুর, মহদী, গোবিন্দগঞ্জ পুরান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, বন্যার্তদের জন্য শহরের বৌলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, তাতিকোনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মন্ডলীভোগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছাতক সরকারী বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও এসপিপিএম উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছ। ইতিমধ্যেই এসব আশ্রয় কেন্দ্র ৫ শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ কার্যক্রম চলছে।