ভারতে চিকিৎসার জন্য খুব বেশি লোক যায় না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ভারতে চিকিৎসার জন্য খুব বেশি লোক যায় না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

রয়েল ভিউ ডেস্ক:
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবেশী ভারতে চিকিৎসার জন্য খুব বেশি লোক যায় না।  তিনি বলেন, যখন স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা দেশেই করবেন, তখন লোকে বাইরে যাবে না।

সোমবার  জাতীয় সংসদে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

হারুনুর রশীদ তার প্রশ্নে জানতে চান, বিগত সরকারের দোহাই দিয়ে আর কোনো লাভ নাই। কারণ ১৫ বছর টানা আপনারা ক্ষমতায়। দেশে স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে না বলেই মানুষ প্রতিবেশী ভারতে চিকিৎসার জন্য চলে যাচ্ছে। এতে দেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার হচ্ছে। সেই সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য আপনারা স্বাস্থ্যখাতগুলো দুর্বল করে রাখছেন কিনা জানি না।

জবাবে বিএনপির আমলে স্বাস্থ্য সেবা খাতে কোনো উন্নয়ন হয়নি দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আপনারা (বিএনপি) কিছুই তৈরি করেন নাই। গত ১৫ বছরে এ খাতে যে উন্নয়ন হয়েছে তাতে দেশের গড় আয়ু ৭৩ বছর, এমডিজি অর্জন হয়েছে। ভ্যাকসিন হিরো হয়েছেন। আপনাদের সময় একটা পুরস্কারের মুখও কেউ দেখে নাই। সেটা ভুলে গেলে চলবে না। আপনারা সেটা ভুললে চলবে না। 

জাহিদ মালেক বলেন, আপনাদের (বিএনপি) সময়ে কয়টা হাসপাতাল ছিল? এখন কয়টা হাসপাতাল আছে সেটা জানেন? দুই-একটা বলতে হয়। দেশে ১১১টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছে। আপনাদের সময় ১০টাও ছিল না। সেটাও করেন না। এখন নার্সিং ইনস্টিটিউট আছে সাড়ে ৩০০।  আপনাদের সময় সিট ছিল সাড়ে ৬০০। এখন ৩৪ হাজার নার্সিং আসন রয়েছে।

২০২১ সালের জুনে ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন বলেছে, ভারতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর ৫৪ দশমিক ৩ শতাংশ বাংলাদেশি।

বাংলাদেশে একই রোগের ওষুধে কোম্পানি ভেদে দামের তারতম্য আছে, এর সমন্বয় করতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবেন কিনা জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমানের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওষুধ প্রশাসন দাম নির্ধারণ করে দেয়। তার মধ্যে কাঁচামাল যেগুলো আমদানি করা হয় এবং অন্যান্য উৎপাদন খরচ ধরে কত ভ্যাটকে যোগ করে একটা মূল্য ঠিক করে দেওয়া হয়। কিন্তু ওষুধের তার পরের দামটা (ভোক্তা পর্যায়ে) ওষুধ প্রশাসন দেখে না। ভ্যাট নির্ণয়টা সঠিক আছে কিনা, সেটা তার এখতিয়ার। এসেনসিয়াল ড্রাগসের ১৩০টির মতো আমরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকি। বাকি শত শত ওষুধ দামটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না। আমরা শুধু ভ্যাট ও উৎপাদন খরচ দেখে থাকে।

তিনি বলেন, আসলে দামের এত তারতম্য হওয়া উচিত না। অনেকে কাঁচামাল ইউরোপ থেকে আনেন। তাদের দাম বেশি। কেউ ভারত ও চায়না থেকে আনে, তাদের আবার দাম একটু কম থাকে। এটারও একটা তারতম্য হয়। তারপরও দামের এত তারতম্য হওয়া উচিত না। আমরা বিষয়টি দেখব। এ বিষয়ে যা যা করার দরকার আমরা করব।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রতি ১০ হাজার জনগণের জন্য চিকিৎসা সেবায় ১০ জন জনবল রয়েছে ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য মিলে। কিন্তু বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী এটা দ্বিগুণের বেশি থাকা উচিত। আমরা চেষ্টা করছি এই জনবল পূরণ করতে।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন,  দেশে হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টার মিলে ১০ হাজারের মতো রয়েছে। এখানে কিছু কিছু জায়গায় ভালো চিকিৎসা আছে, কিছু জায়গায় দিচ্ছে না। আর অনুমোদনহীনও আছে। সেগুলোর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী চলা অভিযানে প্রায় এক হাজার ৭০০ লাইন্সেসবিহীন প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি একটা আইন পাশ করেছি। যার মাধ্যমে বেসরকারি হাসপাতালের অনিয়মের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রয়েছে। যাতে আগামীতে স্বাস্থ্যসেবা খাতে উন্নতি করবে।

পরে সম্পূরক প্রশ্নে জাপার আরেক সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রশ্নের জবাবে যে কথা বলেছেন, তাতে বলতে হয় সাপ হয়ে দংশন করেন, ওঝা হয়ে ঝাড়েন। অর্থাৎ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনেই সারাদেশে ভুয়া, ভেজাল ক্লিনিকগুলো গড়ে উঠছে। যখন গড়ে ওঠে তখন কেউ দেখার থাকে না, শত শত হাজারে। যখন কেউ মারা যায় কিংবা গণমাধ্যমে যাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়।’ তবে, তার প্রশ্নের এই অংশের জবাব দেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, কমিউনিটি ক্লিনিক এখন থেকে চার কক্ষের হবে। প্রথামিকভাবে জরাজীর্ণগুলো নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকিই এই ডিজাইনে হবে। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরো জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসের টিকা আমদানি করা হয়েছে ৩২ কোটি ৩১ লাখের উপরে। এর মধ্যে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে চার কোটির ওপরে। 

জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সদস্য আলী আজমের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে তিনি এ তথ্য জানান।