মৌলভীবাজারে লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ১০টি হাসপাতাল ও ১৫ ডায়াগনষ্টিক সেন্টার

মৌলভীবাজারে লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ১০টি হাসপাতাল ও ১৫ ডায়াগনষ্টিক সেন্টার

ডেস্ক রিপোর্ট:
মৌলভীবাজারে ৪২টি প্রাইভেট হাসপাতালের মধ্যে লাইসেন্স নেই ১০টি’র। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে অনেকে রাজনীতিক প্রভাবকাটিয়ে ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই বছরের পর বছর লাইসেন্স বিহীন হাসপাতল পরিচালনা করছে। জেলার সচেতন মহল বলছেন জেলা প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের উদাসিনতার কারণে এমনটি হচ্ছে। সম্প্রতি জেলায় বেশ কয়েকটি হাসপাতাল লাইসেন্স না নিয়েও নতুন ভাবে উদ্বোধন হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিতি ছিলেন। এদিকে জেলায় ৭৮টি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মধ্যে লাইসেন্স নেই ১৫টির। একটি সূত্র বলছে অধিকাংশ ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিকানায় সম্পৃক্ত রয়েছেন সরকারি হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তাররাও।

অনিবন্ধিত ও অবৈধ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে ২৫ মে ৭২ ঘন্টার সময় বেঁধে দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২৯ মে সময় শেষ হয়। কিন্তু মৌলভীবাজারে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার পরও এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করছে সিভিল সার্জন অফিস।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, পুরো জেলায় ৪২টি প্রাইভেট হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে লাইসেন্স বিহীন ১০টি,  লাইসেন্স প্রক্রিয়াধিন ৩টি ও নতুন আবেদন করা হয়েছে ১টির। লাইসেন্স বিহীন হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে মৌলভীবাজার পৌর শহরের এমদাদ সিতারা খান কিডনী সেন্টার, শাহ জালাল (প্রোঃ) ক্লিনিক, আশা রাণী ডেন্টাল ক্লিনিক, আল-হামরা (প্রাঃ) হাসপাতাল, মা-মনি (প্রাঃ) হাসপাতাল, সূর্যের হাসি ক্লিনিক, কুলাউড়া উপজেলার ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনষ্টিটিউট এন্ড হসপিটাল, কুলাউড়া চক্ষু হাসপাতাল ও কমলগঞ্জ উপজেলার ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হসপিটাল।

ভোক্তভোগীরা জানান, লাইসেন্স বিহীন প্রাইভেট হাসপাতাল গুলো সেবার নামে জেলার অসহায়, হতদরিদ্র ও নি:স্ব মানুষকে পুঁজি করে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা বাণিজ্য। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য বিভাগের নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে নিজেদের খেয়াল খুশিমতো পরিচালনা করছেন। নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা নির্দিষ্ট থাকলে সেই হাসপাতালে রয়েছে অতিরিক্ত শয্যা। কিন্তু বাড়ছে না তাদের সেবার মান। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্বলতার সুযোগে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করছেন হাসপাতালের মালিকরা। ১০ বেডের হাসপাতালে তিনজন (এমবিবিএস) ডাক্তার, ৬ জন নার্স (৩ বছরের ডিপ্লোমাধারী), ৬ জন আয়া/ওয়ার্ড বয় ও ৩ জন সুইপার থাকার কথা। এছাড়া যেসব ক্লিনিকে বেড সংখ্যা আরও বেশি তাদের স্টাফ সংখ্যাও বাড়বে। কিন্তু এগুলো সবই নীতিমালার মধ্যে সীমাবদ্ধ।

এদিকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে রোগীদের রেফার্ড করা হয়। কিন্তু অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, ডাক্তারের অবহেলা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার কারণে বাধ্য হয়ে রোগীকে নিয়ে যেতে হয় শহরের প্রাইভেট হাসপাতালে। আর বাহিরে অপেক্ষমান থাকেন প্রাইভেট হাসপাতালের কতিপয় দালাল। দালালদের রোগী দেখিয়েদেন সদর হাসপাতালের কিছু কর্মচারী ও নার্স। রোগীকে প্ররোচনা ও প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে যান তাদের চুক্তি করা প্রাইভেট হাসপাতালে। দালালদের খপ্পরে পড়ে ওই সব ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে রোগীরা হরহামেশাই বিপাকে পড়ছেন। রোগী প্রতি দালালদের দেয়া হয় বড় অংকের কমিশন। ওই টাকাতে একটি অংশ রয়েছে সরকারি হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মচারীদের। 

এদিকে নির্দেশনার পরে এপর্যন্ত ৬টি হাসপাতালকে জরিমানা এবং কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে ৩ ডায়াগনষ্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে।

একাধিক প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক বলেন, হাসপাতালের পূর্ণ লাইসেন্সের জন্য বিভিন্ন দপ্তরের ১০টি কাগজের প্রয়োজন। অনেক কষ্ট করে ২/১টি অফিসের কাগজপত্র সংগ্রহ করা গেলেও অন্যান্য অফিসে সরকারি ফি জমা দেয়ার পর অফিস স্টাফের চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত টাকা না দেয়ায় লাইসেন্স আমাদের ভাগ্যে জুটেনি।  

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনার আলোকেই আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া।